বাংলাদেশ বন্যা মোকাবিলা ও বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনে ছোট-বড় ও স্থানীয় ৪৪টি এনজিওর সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তিনি বলেন, 'এনজিওরা বাংলাদেশের শক্তি। তরুণরা আমাদের যে স্বপ্ন দেখিয়েছে। সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। ইউ ক্যান ডু ইট।'
শনিবার বিকালে প্রধান উপদেষ্টার রাষ্ট্রীয় বাসভবন ও কার্যালয় যমুনায় এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম এ কথা জানান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য উদ্ধৃত করে প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এনজিওরা বাংলাদেশে শক্তি। তরুণরা আমাদের যে স্বপ্ন দেখিয়েছে, সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। ইউ ক্যান ডু ইট।'
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ক্ষুদ্র, মাঝারি, বড় ও স্থানীয় ৪৪টি এনজিও প্রতিনিধির সঙ্গে প্রায় ২ ঘণ্টা প্রাণবন্ত বৈঠক হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা, পরবর্তী করণীয় এবং বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, বন্যার পানি নামার পরবর্তী যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে পানিবাহিত রোগ,
স্বাস্থ্যঝুঁকি ও খাদ্য ও পুনর্বাসন ব্যবস্থায় সমন্বিত উদ্যোগে একযোগে কীভাবে কাজ করা যায়।
প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশ মানুষ ছাত্র-জনতার গণঅভু্যত্থানে যেভাবে কাজ করেছিল, ঠিক একইভাবে তারা বন্যা মোকাবিলায় কাজ করছে। পাড়া-মহলস্নায়, গ্রাম-গঞ্জে ত্রাণ তুলে বানভাসি মানুষের সহায়তায় কাজ করছে। তিনি বলেছেন, তরুণদের যে উদ্যোগ, তরুণদের প্রেরণা নিয়ে বাংলাদেশের সব মানুষ যেন একত্রিত হয়ে বন্যা মোকাবিলার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
ড. ইউনূস বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বাংলাদেশে এনজিওদের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে কাজ করে থাকে। আমরা তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কাজ করতে চাই। শিক্ষার্থীরা যদি ত্রাণ সহায়তা নিয়ে পরশুরামে গিয়ে দেখে যে, সেখানে স্থানীয় এনজিও কাজ করছে, তখন শিক্ষার্থীদের তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে সহজ হবে।'
এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। পানি নামার পরই মূল কার্যক্রম। পানিবাহিত রোগ, খাদ্যের ঘাটতি, ঘরবাড়ি পুনস্থাপন এবং ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন। তাই এনজিওদের সঙ্গে নিয়ে এসব কাজ করার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় দ্রম্নত যোগাযোগ স্থাপন করার। মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রয়োজনে যাতে ডিজেল পাঠিয়ে টাওয়ারগুলো সচল করা যায়। যতটা সম্ভব প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাওয়া যায়। এবং যতদ্রম্নত বিদু্যৎ সংযোগ দেওয়া যায়। তাহলে দ্রম্নত মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু করা যাবে। কেননা ওইসব জেলার অধিকাংশ মানুষ বিদেশে থাকে। তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। আর ত্রাণ বিতরণ এবং পুনর্বাসন একসঙ্গে চালু করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে যমুনার সামনে ব্র্যাকের প্রধান নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, বন্যা পরিস্থিতিতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়েও কাজ করছে। সেনাবাহিনী কাজ করছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। তবে এটা সমন্বিত হচ্ছে না। শিক্ষার্থীসহ যারা ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাচ্ছেন, নানা কারণে তারা সব জায়গায় পৌঁছাতে পারছেন না। দেখা যাচ্ছে, এক জায়গায় বেশি ত্রাণ যাচ্ছে। আরেক জায়গায় ত্রাণ যাচ্ছে না। এসব নিয়ে কথা হয়েছে। কী করে সমন্বিতভাবে সবাই একসঙ্গে কাজ করা যায়। যাতে প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে সমন্বিতভাবে সহায়তায় কাজ করা যায়।
তিনি বলেন, আমরা কয়েকটা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রথমত, কীভাবে সমন্বয়ের মাধ্যমে আরও স্পেসিফিকভাবে কাজ করা যায়। দ্বিতীয়ত, যারা যারা কাজ করছেন, তাদের সবার মধ্যে কীভাবে সমন্বয় করা যায়। তৃতীয়ত কীভাবে অর্থের ব্যবস্থা করা যায়। কেননা ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন আছে। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন, তিনি দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন এবং ডোনারদের সঙ্গেও কীভাবে আমরা সমন্বয় করে কাজ করতে পারি। কাজের ক্ষেত্রেও আমরা যাতে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করতে পারি?সেসব ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে।