সাত জেলায় ১৫ জনের মৃত্যু

দিশেহারা ৪৮ লাখ বানভাসি

ফেনীর ৯২ শতাংশ মোবাইল টাওয়ার অচল গোমতীর বাঁধ ভেঙে তলিয়েছে বুড়িচং অসহায় মানুষের পাশে সেনাবাহিনী ‘ধীরগতিতে পরিস্থিতির উন্নতি’

প্রকাশ | ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন বানভাসিরা। ছবিটি কুমিলস্নার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার পদুয়া এলাকা থেকে শুক্রবার তোলা -স্টার মেইল

নজিরবিহীন বন্যায় দেশের ১১ জেলায় চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় বানভাসি লাখ লাখ মানুষের বাঁচার লড়াই-ই এখন মুখ্য। হু-হু করে পানি এসে বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ার পর বন্যাকবলিত ফেনী সদর উপজেলার ১০ নম্বর ছনুয়া ইউনিয়নের উত্তর টংগিরপাড় হাজীবাড়ির শিক্ষক ফারজানা আক্তারের পরিবারের শিশুসহ সাতজনের খোঁজ পাচ্ছেন না। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় আটকে থাকা তার ভাবি তানিয়া আক্তারের সঙ্গে খুদে বার্তার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন। খুদে বার্তায় ভাবি জানিয়েছেন, তারা সবাই এলাকার একটি মসজিদে আশ্রয় নিয়েছেন। ভবনের একতলা ডুবে দ্বিতীয়তলার সিঁড়ি পর্যন্ত পানি চলে এসেছে। মসজিদে গ্রামের কয়েকশ' মানুষ আছেন। পথঘাট ডুবে যাওয়ায় কেউ বের হতে পারছেন না। এরপর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের আর খোঁজ পাচ্ছেন না তানিয়া। এমন পরিস্থিতি বন্যাকবলিত ১১ জেলার প্রায় সর্বত্রই। এর মধ্যে ফেনী জেলার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। জেলা প্রশাসন সূত্রমতে, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম- এ তিন উপজেলার পুরোটাই বন্যাকবলিত। সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার ৮০ শতাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দি। সোনাগাজী উপজেলার সব ইউনিয়নে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ দুর্ভোগে আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন গ্রামে প্রায় এক লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় আছে। বন্যাকবলিত প্রায় সব এলাকায় বিদু্যৎ নেই। বেশিরভাগ মোবাইল টাওয়ার অকেজো হয়ে পড়ায় যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। দুর্গত এলাকায় সুপেয় পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় এক তথ্য বিবরণীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৯। এসব জেলায় বন্যাকবলিত হয়ে মারা গেছেন ১৫ জন। তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, আকস্মিক বন্যায় দেশের ফেনী, কুমিলস্না, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্ণীপুর ও কক্সবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব জেলার ৭৭টি উপজেলা এবং ৫৮৯টি ইউনিয়ন বা পৌরসভা পস্নাবিত হয়েছে। এই ১১ জেলায় মোট ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৯ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। যাতে মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৯ জন। এখন পর্যন্ত বন্যায় মৃত ১৫ জনের তথ্য উলেস্নখ করে বলা হয়েছে, এদের মধ্যে দুজন নারী। আর জেলাভিত্তিক হিসাবে কুমিলস্নায় ৪ জন, ফেনীতে একজন, চট্টগ্রামের চারজন, নোয়াখালীতে একজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন, লক্ষ্ণীপুরে একজন এবং কক্সবাজারের ৩ জন মারা গেছেন। বন্যাকবলিত এলাকায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশের সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। ৭ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর বন্যাকবলিত এলাকার সাত নদীর ১৪ স্টেশনের পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। তবে বেশিরভাগ অঞ্চলের নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। কিছু এলাকার নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। আর ভারী বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী দুই দিন বৃষ্টি কমার কোনো লক্ষণ দেখছে না। এ সময় দেশের কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি এবং চট্টগ্রামের ভূমিধসের শঙ্কার কথাও জানিয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, ফেনী নদীর রামগড় স্টেশনের পানি ২০০ ও খোয়াই নদীর বালস্না স্টেশনে পানি বিপৎসীমার ১৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। একই নদীর হবিগঞ্জ স্টেশনে পানি ১৬৫, গোমতীর নদীর কুমিলস্না স্টেশনের পানি ১১৮, মনু নদীর মৌলভীবাজার স্টেশনে পানি ১১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। সব মিলিয়ে কুশিয়ারা নদীর ৪ স্টেশন, মনু নদীর ২ স্টেশন, খোয়াই নদীর ২, গোমতী নদীর ২ হালদার ২, মুহুরী ও ফেনী নদীর দুই স্টেশনের পানি বিপৎসীমার ওপর আছে এখনো। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি ধীরগতিতে কমছে বিগত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিলস্না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকাগুলোয় ভারী বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়নি এবং উজানের নদনদীর পানি কমতে শুরু হয়েছে। ফলে বর্তমানে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিলস্না ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীগুলোর আশপাশের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। সংস্থাগুলো আরও বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় এ অঞ্চলের ফেনী, কুমিলস্না ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী, ফেনী, গোমতী, হালদা ইত্যাদি নদীগুলোর আশপাশের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি কমছে, অপরদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় কমতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীগুলোর পানি কমছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এসব নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। ধীরগতিতে উন্নতি: বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র ফেনী, কুমিলস্নাসহ পাঁচ জেলায় ধীরগতিতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার তথ্য দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। শুক্রবার সকালে কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিলস্না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকাগুলোয় ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। সেই সঙ্গে উজানের নদনদীর পানি সমতল হ্রাস পাওয়া শুরু করেছে। তাতে করে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিলস্না ও চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। ১২ জেলায় ১৮শ' মোবাইল টাওয়ার অচল বন্যার কারণে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিলস্নাসহ দেশের ১২ জেলায় প্রায় দুই হাজার মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি। শুক্রবার বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বন্যা আক্রান্ত ১২টি জেলার ১২ হাজার ২৫০টি সাইট বা টাওয়ারের মধ্যে ১০ হাজার ৪৪৩টি সাইট সচল আছে। আর অচল হয়ে পড়েছে ১ হাজার ৮০৭টি।' তিনি জানান, এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনীতে; এই জেলায় ৯০ শতাংশের বেশি টাওয়ার অচল। এই এলাকার ৬৫৬টি টাওয়ারের মধ্যে ৫৯০টিই অচল হয়ে গেছে। এ ছাড়া নোয়াখালীতে ৩৮০, লক্ষ্ণীপুরে ৫৪, কুমিলস্নায় ৫৩৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৩, চাঁদপুরে ৪৭, চট্টগ্রামে ৭৫, খাগড়াছড়িতে ৩৬, হবিগঞ্জে ২, মৌলভীবাজারে ৩৯, সুনামগঞ্জে ১১ এবং রাঙামাটিতে ১৭টি টাওয়ার কাজ করছে না। মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে বিটিআরসি জেনেছে, বন্যাকবলিত অঞ্চলে অপারেটরদের টাওয়ার এলাকা ডুবে গেছে। এসব টাওয়ারে বিদু্যৎ সংযোগও নেই, অন্যদিকে তুমুল স্রোতে অন্য প্রয়োজনীয় যান্ত্রিক সহযোগিতা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে নেটওয়ার্ক আবার চালু করা যাচ্ছে না। স্রোত না কমা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নেটওয়ার্ক পুনঃসংযোগ করা সম্ভব নয়। কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'টাওয়ার সচল রাখতে নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যাটারি ব্যাকআপ, ডিজেল জেনারেটর কিংবা পোর্টেবল জেনারেটরের মাধ্যমে টাওয়ার সচল রাখতে সংস্থাটি মোবাইল অপারেটরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।' নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু বন্যার মধ্যে টেলিযোগাযোগ সেবা সচল রাখতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে বিটিআরসি। সংস্থাটি বলছে, এই পরিস্থিতিতে ১৫ জনের ইমার্জেন্সি রেসপন্স দল গঠন করা হয়েছে। যারা দুর্যোগকালে ও দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্ব পালন করবেন। বিটিআরসির ইমার্জেন্সি রেসপন্স দলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে +৮৮০২২২২২১৭১৫২ নম্বরে ফোন করতে হবে। বিটিআরসির কল সেন্টার ১০০ ব্যবহার করেও ওই দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। কক্সবাজারে পানিবন্দি ৫০ গ্রাম ভারী বৃষ্টিতে কক্সবাজারে পানিতে ডুবে দুজনের মৃতু্য হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরও দুজন। একই সঙ্গে বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে জেলার অন্তত ৫০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ তোফায়েল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কক্সবাজারে ২৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। রামু উপজেলার ঈদগড়ে পানিতে ডুবে দুই ব্যক্তির মৃতু্য হয়েছে এবং গর্জনিয়ায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের স্রোতে দুই যুবক ভেসে গেছেন বলে জানিয়েছেন রামু থানার ওসি মো. আবু তাহের দেওয়ান। মৃতরা হলেন- রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বৈদ্যপাড়ার মৃত লইগ্যা রাখাইনের ছেলে চাচিং রাখাইন (৫৫) এবং গর্জনিয়া ইউনিয়নের পূর্ব জুমছড়ি এলাকার ছৈয়দ হোসেনের ছেলে আমজাদ হোসেন (২২)। নিখোঁজরা হলেন- রামুর ফতেখাঁরকূল ইউনিয়নের লম্বরী এলাকার নুরুল কবিরের ছেলে মো. জুনাইদ (১০) এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নের ছালেহ আহমদের ছেলে রবিউল আলম (৩৫)। তিনি বলেন, 'আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করায় রামুর বিভিন্ন জায়গায় পানি বেড়ে গেছে। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে দুর্ভোগ নিরসনে কাজ করা হচ্ছে। রামুর অন্তত ৩০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।' বৃষ্টিতে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক পস্নাবিত হওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে উখিয়া ও টেকনাফের ১০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা। একই সঙ্গে পেকুয়া উপজেলার আরও ১০টি গ্রামের মানুস পানিবন্দি রয়েছে। সেখানে কয়েকটি স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানির তথ্য পাওয়া যায়নি। কক্সবাজারের প্রধান নদী বাঁকখালী ও মাতামুহুরির পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। হালদা নদীর বাঁধ ভেঙে ফটিকছড়ি পস্নাবিত পানির তোড়ে চট্টগ্রামে ভেঙে গেছে হালদা নদীর ওপর নির্মিত বাঁধ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট নতুন ব্রিজ এলাকায় প্রায় ১৫ ফুট বাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে পানি ঢুকছে ফটিকছড়িতে। এর বাইরে বিভিন্ন এলাকায় হালদা নদীর ওপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, 'ফটিকছড়ির নাজিরহাট এলাকায় হালদা নদীর বাঁধ ভেঙে পানি এলাকায় প্রবেশ করছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে খালগুলো থেকে পানি উপচে লোকালয়ে পস্নাবিত হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হচ্ছে।' চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুলস্নাহ মজুমদার জানিয়েছেন, 'চট্টগ্রামে ৯টি উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ফটিকছড়িতে ২০টি ইউনিয়নে ১৯ হাজার ৫৮০ পরিবারের এক লাখ ২ হাজার মানুষ পানিবন্দি। একইভাবে মীরসরাই উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ১২ হাজার পরিবারের ৪৮ হাজার ৫০০ লোক, সীতাকুন্ডের ৬টি ইউনিয়নের ৫ হাজার পরিবারের ২০ হাজার লোক, হাটহাজারীতে ১২০টি পরিবারের ২ হাজার ৮০০ লোক, কর্ণফুলীতে ৫টি ইউনিয়নের ১০০টি পরিবারের ৫০০ লোক, পটিয়ায় ১৮টি ইউনিয়নের ৬ হাজার ৯৪৬টি পরিবারের ২০ হাজার লোক, বোয়ালখালীতে ৩টি ইউনিয়নে ১০০ পরিবারে ৭০০ লোক, বাঁশখালীতে ৮টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৭৫০টি পরিবারের ৮ হাজার ৭৫০ জন এবং রাউজানে ১৩টি ইউনিয়নের ৩২০টি পরিবারের ১ হাজার ৬০০ জন লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।' হবিগঞ্জে ১৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি হবিগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত ১৪ হাজার ৩৪০টি পরিবারের ৫৭ হাজার ৫৬০ জন মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে বহু পরিবার গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। পানি না কমায় আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন মানুষ। হবিগঞ্জ শহরতলীর জালালাবাদ এলাকায় খোয়াই নদীর বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ করছে। বানের পানিতে তলিয়ে গেছে রিচি, জালালাবাদ, ছোট বহুলা, সুলতান মাহমুদপুর, নোয়াগাঁওসহ আশপাশের গ্রামগুলো। তলিয়ে গেছে হাওড়ের বিস্তীর্ণ আমন ক্ষেত। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া পানি উঠেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও। ঘরে বানের পানি ওঠায় সদর উপজেলার রিচি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মনিরা খাতুন। তিনি বলেন, বাড়িতে পানি ওঠায় ঘরের সব মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। সেখানে আশ্রয় নেওয়া মো. আব্দুল হাই বলেন, 'বাড়িঘরে পানি ওঠার পাশাপাশি আমন ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখন অসহায়ের মতো দিন কাটাচ্ছি।' হবিগঞ্জ জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা সুমি রাণী বল বলেন, 'এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৩৪০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫৭ হাজার ৫৬০ জন। তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ১২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র। ক্ষতিগ্রস্তরা অশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনসহ বন্যায় আক্রান্তদের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন মাঠে কাজ করছে।' এখনো ডুবে আছে খাগড়াছড়ির মেরুং সড়ক থেকে পানি না নামায় খাগড়াছড়ির সঙ্গে সাজেক ও লংগদুর সড়ক যোগাযোগ এখনো বন্ধ রয়েছে। তবে বৃষ্টি না থাকায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। তবে নিচু এলাকা হওয়ার কারণে দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রাম এখনো পানিবন্দি। মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ঘনশ্যাম ত্রিপুরা বলেন, বন্যায় ইউনিয়নের অন্তত ৪০ গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দি। মেরুং বাজার এখনো পানিতে পস্নাবিত। শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন মেরুংয়ে একাধিক এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি এখনো পানির নিচে। মেরুং ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম ছদকা ছড়া। নৌপথে মেরুং বাজার থেকে যেতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। সেখানে গিয়ে দেখা যায় ছদকাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখনো অন্তত সাত ফুট পানির নিচে। ছদকাছড়া গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় কার্বারি এপেকশন চাকমা বলেন, 'সোমবার থেকে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এখনো গ্রাম থেকে পানি নেমে যায়নি। আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। বৃষ্টি না থাকলে পানি কমবে। এ নিয়ে এ বছর আমরা চার দফায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।' মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ঘনশ্যাম ত্রিপুরা বলেন, 'মেরুং ইউনিয়নের পস্নাবিত অনেক গ্রামে মোবাইল সংযোগ নেই। শুক্রবার সেসব দুর্গম এলাকায় ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সবকটি আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।' উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুনুর রশিদ বলেন, 'আজকে (শুক্রবার) আমরা একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণ দিয়েছি। দেড় শতাধিক পরিবারকে শুকনো খাবার, চাল, ডালসহ খাদ্য উপকরণ দেওয়া হয়েছে। যেসব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই তাদের পরিস্থিতি আমরা সরেজমিন দেখেছি।' গোমতীর বাঁধ ভেঙে তলিয়েছে বুড়িচং, দিশেহারা মানুষ কুমিলস্না গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে গোটা বুড়িচং উপজেলাই তলিয়ে গেছে। উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের পানিবন্দি মানুষ বিশুদ্ধ পানি আর খাবার সংকটের কারণে দিশেহারা অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। যেভাবে তীব্র বেগে পানি ঢুকছে এতে দ্রম্নতই পাশের ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা থেকে শুরু করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবাও পস্নাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ অবস্থায় পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পাশাপাশি কাজ শুরু করেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুমিলস্নার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জমান শুক্রবার বেলা ৩টায় বলেন, 'বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে বুড়বুড়িয়া এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধের নিচ দিয়ে পানি বের হচ্ছিল। স্থানীয় লোকজন বালুর বস্তা ফেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। রাত পৌনে ১২টার দিকে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে থাকে। বাঁধের অন্তত ৩০ ফুট ভেঙে গেছে। নদীর পানি না কমলে এই বাঁধ মেরামত করা সম্ভব নয়। নদীর পানি যতদিন না কমবে ততদিন নতুন নতুন এলাকা পস্নাবিত হতে থাকবে।' প্রকৌশলী বলেন, 'শুক্রবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত গোমতীর পানি বিপৎসীমার ১০৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ বিপৎসীমার ১৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। সে হিসেবে পানি কিছুটা কমেছে। নদীর শহর রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, অন্য কোথাও যেন বাঁধ না ভাঙে সেদিকে লক্ষ্য রাখার।' পাউবো কর্মকর্তা বলেন, '১৯৯৭ সালে গোমতীর পানি বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। কিন্তু গত দুইদিনে পানি বাড়ার হিসাব অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।' বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাহিদা আক্তার শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বলেন, 'এখন আর গ্রাম, ইউনিয়ন হিসাব করে লাভ নেই। পুরো বুড়িচংই পানির নিচে। প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করায় প্রতিনিয়ত পানির উচ্চতা বেড়েই চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে আশপাশের উপজেলাও পস্নাবিত হতে পারে। বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই স্থানীয় লোকজনকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে এলাকায় মাইকিং করা হয়। এরই মধ্যে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছেন। পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারের কাজ চলছে।' 'গোমতীতে এত পানি আগে দেখিনি' স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া গ্রামের কাছে গোমতী নদীর বাঁধটি ভেঙে শুক্রবার দুপুর ২টার মধ্যে সারা উপজেলা গোমতীর পানিতে পস্নাবিত হয়ে যায়। বাঁধ ভাঙার পর থেকেই বুড়িচং উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা পস্নাবিত হতে শুরু করে। বর্তমানে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এ সময় মানুষকে উদ্ধার করাই বড় কাজ বলে মনে করেন কুমিলস্নার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বুড়িচংয়ের বুড়বুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া। তিনি বলেন, 'আমাদের গ্রামে বর্তমানে গলাসমান পানি। পুরো গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। মানুষের দুর্ভোগ বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। গোমতীতে এতো পানি আগে কখনো দেখিনি।' উপজেলার শিমাইলখাড়া গ্রামের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ বলেন, 'পানি হু-হু করে ঢুকছে। আমাদের প্রতিষ্ঠান সোনার বাংলা কলেজে আশ্রয়কেন্দ্র আছে। মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে এসে নিরাপদে থাকতে বলা হচ্ছে।' উপজেলার গাজীপুর এলাকার বাসিন্দা সালমা হক বলেন, 'আমাদের বাসার মালামাল ছাদের ওপর রেখেছি। পানি বাড়ছে। আমার মাকে নিয়ে কুমিলস্না শহরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া সড়কে পানি ওঠায় যান চলাচল বন্ধ। বলতে গেলে চরম দুর্ভোগে পড়েছি। এলাকার সব বাড়িঘর পানির নিচে।' এদিকে আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার সংকটে শিশু-বৃদ্ধসহ বিপাকে পড়েছেন মানুষজন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বুড়িচং উপজেলা পস্নাবিত হতে শুরু করলে মানুষজন প্রাণ রক্ষায় ছুটতে থাকেন আশ্রয়কেন্দের দিকে। তবে সেখানে রয়েছে খাবার ও চিকিৎসা-সংকট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুড়িচং উপজেলার মহিষমারা উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে সেখানে কেউই খাবার ও চিকিৎসাসেবা নিয়ে যায়নি। যে কারণে ২০ জনের বেশি শিশু ও ১০ বৃদ্ধকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আশ্রয় গ্রহণকারীরা। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে মহিষমারা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রশিদ আহমেদ বলেন, 'খাবার না থাকার বিষয়টি আমরা আমাদের স্বেচ্ছাসেবীদের জানিয়েছি। কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের পরিবার নিয়ে ব্যস্ত, তারাও বিপদে আছে।' যাদের পক্ষে সম্ভব দ্রম্নত ত্রাণ নিয়ে মহিষমারা উচ্চবিদ্যালয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, 'এখানকার প্রায় ৫০০ মানুষ না খেয়ে আছে। শিশুরা কান্না করছে। বের হওয়ার কোনো অবস্থা নেই। কারণ বিদ্যালয়ের নিচতলা পানিতে ডুবে গেছে।' আতঙ্কে কুমিলস্না নগরবাসীও এদিকে, বুড়িচংয়ে গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই আতঙ্কে ঘুম নেই কুমিলস্না নগরবাসীর। কারণ গোমতী নদীর পাড়েই অবস্থান এই নগরী। বৃহস্পতিবার প্রায় পুরো রাতই নগরীর সিংহভাগ মানুষ জেগে ছিলেন বাঁধ ভাঙার আতঙ্কে। নগরীর বাসিন্দাদের শঙ্কা, গোমতীর বাঁধ ভাঙলেই তলিয়ে যাবে গোটা শহর। শুক্রবার নগরীর কাপ্তান বাজার এলাকার বাসিন্দা সামছুল আলম বলেন, 'বুড়িচংয়ে বাঁধ ভাঙার খবর পাওয়ার পর থেকেই মানুষ আতঙ্কে আছে। কারণ, গোমতীর বাঁধ ভেঙে গেলে পানিতে তলিয়ে যাবে গোটা শহর। এমনিতে সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরীর সড়কগুলো তলিয়ে যায়। যদি গোমতীর বাঁধ ভেঙে যায়, তবে পুরো শহর তলিয়ে যাবে।' জেলার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, লাকসামসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার বেশিরভাগ গ্রাম এখনো বন্যার পানিতে ডুবে আছে। তবে বৃহস্পতিবারের তুলনায় শুক্রবার এসব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার দুই কিলোমিটার এলাকা পানিতে পস্নাবিত হয়। শুক্রবার এই স্থানে মহাসড়কে পানি দেখা যায়নি। ডুবেছে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডুবে গেছে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু। শুক্রবার সকাল থেকে ঝুলন্ত সেতু দিয়ে পারাপারে সাময়িক সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। কাপ্তাই হ্রদে শুক্রবার পানি রয়েছে ১০৫ দশমিক ৮৪ মিনস সি লেভেল। হ্রদে পানি বেশি থাকায় কাপ্তাই বিদু্যৎ কেন্দ্রে বিদু্যৎ উৎপাদন বেড়েছে। বর্তমানে ২১৮ মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এবারের বন্যায় জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় দশ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। তবে আজ থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। বন্যাদুর্গতদের মধ্যে সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় বিএনপির নেতারা খাবার সরবরাহ করছেন। এই উপজেলার পর্যটন নগরী সাজেকের সঙ্গে উপজেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল হয়েছে। যদিও অনেক পর্যটক নৌকাযোগে পার হয়ে সাজেক ছেড়ে গেছেন। তবে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সড়কে এখনো পানি থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। আজ বিকালের মধ্যে যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বন্যায় লংগদু উপজেলার নিম্ন এলাকার বাসিন্দারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পানি নেমে গেলেও দীঘিনালার মেরুং সড়কে পানি থাকায় খাগড়াছড়ির সঙ্গে যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গতকাল বিকালে নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের কুকুরমারা এলাকায় চেঙ্গী নদীতে ডুবে এক শিশুর মৃতু্য হয়েছে। অসহায় মানুষের পাশে সেনাবাহিনী বন্যার্তদের উদ্ধার ও বিপন্ন মানুষের সাহায্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তারা দিনভর উদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে খাগড়াছড়ির প্রায় দুই হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। শুক্রবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্যায় পস্নাবিত হয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়েছে খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষাধিক বাসিন্দা। এরই মধ্যে চেঙ্গি, মাইনি ও কাসালং নদীর পানি বিপৎসীমার দুই থেকে ছয় ফুট অতিক্রম করায় আশপাশের এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বিপন্ন মানুষের সাহায্যার্থে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দিনভর উদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রায় দুই হাজার খাগড়াছড়িবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে সেনাবাহিনী। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্যায় পস্নাবিত হয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়েছে খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষাধিক বাসিন্দা। এরই মধ্যে চেঙ্গি, মাইনি ও কাসালং নদীর পানি বিপৎসীমার দুই থেকে ছয় ফুট অতিক্রম করায় আশপাশের এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বিপন্ন মানুষের সাহায্যার্থে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দিনভর উদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রায় দুই হাজার খাগড়াছড়িবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে সেনাবাহিনী। ডাম্বুর গেট খোলার কথা 'অপপ্রচার': ত্রিপুরার মন্ত্রী আগাম সতর্কতা ছাড়াই ভারত ড্যাম খুলে দেওয়াই বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা নাকচ করে দিয়েছেন ত্রিপুরার বিদু্যৎমন্ত্রী রতন লাল নাথ। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, 'তারা যেটা বলছেন যে আমরা ডাম্বুরের গেট খুলে দিয়েছি, সেটা যে সঠিক তথ্য নয়, তা দেখার জন্য তারা যদি নিয়ম অনুযায়ী সীমান্ত পেরিয়ে ত্রিপুরায় আসেন, আমি নিজে গাড়ি করে তাদের নিয়ে যাব ডাম্বুর দেখাতে। তারা নিজেরা দেখতে পারেন যে আমরা নিজের থেকে গেট খুলে দিতে পারি কি না! সেটা সম্ভব কি না!' উজানে ভারতের ড্যাম খুলে দেওয়ার কারণে বর্ষা শেষে ভাদ্র মাসে দেশে হঠাৎ ভয়াবহ বন্যা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েক নেতা ত্রিপুরায় গোমতী নদীর উজানে ডাম্বুর ড্যাম খুলে দেওয়াকে বন্যার কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভারতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও হয়েছে। বিষয়টি ভারত সরকারের নজরে এলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, 'ডাম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়াকে বাংলাদেশে বন্যার কারণ বলা হলেও বিষয়টি তথ্যগতভাবে সঠিক নয়।' ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের বরাতে বিবিসি বাংলা লিখেছে, তিন দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে ত্রিপুরায়। এই বন্যায় সেখানকার গোমতী জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই জেলার গোমতী জলবিদু্যৎ কেন্দ্রের ডাম্বুর স্স্নুইস গেট খুলে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক বন্যা হয়েছে বলে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। ত্রিপুরার বিদু্যৎমন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেছেন, 'যে প্রচারটা করা হচ্ছে ডাম্বুর গেট খুলে দেওয়া নিয়ে, সেটা অপপ্রচার ছাড়া কিছু না। গোমতী জলবিদু্যৎ কেন্দ্রের কোনো গেট খুলে দেওয়া হয়নি। এই বিদু্যৎ কেন্দ্রের জলাধারটির সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ৯৪ মিটার। জলস্তরের বেশি উঠলেই নিজের থেকেই জল গেট দিয়ে বেরিয়ে যাবে। জলস্তর আবার নিচে নেমে গেলে নিজের থেকেই গেট বন্ধ হয়ে যাবে।' তিনি বলেন, 'জলস্তর সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতার বেশি হয়ে যেতেই জলাধারের দুটি গেট দিয়ে জল বেরোচ্ছে। এর মধ্যে একটি গেট দিয়ে ৫০% হারে জল বেরোচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে আগে থেকেই মাইকিং করে সতর্ক থাকার অনুরোধও জানানো হয়েছিল।' ভারতের ড্যাম খুলে দেওয়া কিংবা ড্যাম ভেঙে যাওয়ার কারণেই বাংলাদেশে বন্যা কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে বৃহস্পতিবার দুর্যোগ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, 'সঠিকভাবে এ বিষয়ে এখন বলতে পারছি না এবং এটা শুনেছি ওপরে বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে বিস্তারিত জানি না। 'বাঁধ খোলা হয়েছে এটা পত্রপত্রিকায় লিখেছে, বিভিন্ন মাধ্যমে আসছে। সরকারিভাবে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হচ্ছে।' বৃহস্পতিবারই তথ্য-উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ত্রিপুরার মন্ত্রী রতন লাল বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, 'আমরা যদি অমানবিক হতাম, তাহলে অনেক আগেই সেটা হতে পারতাম- বিদু্যৎ দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে। কারণ বিদু্যৎ বাবদ প্রায় ১৮০ কোটি ভারতীয় টাকা তাদের কাছে আমাদের বকেয়া আছে। তাও নিয়মিত ৫০-৬০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ আমরা সরবরাহ করে যাচ্ছি। অথচ আমাদের নিজেদের রাজ্যের বহু জায়গায় বিদু্যৎ নেই এখন।' রতন লাল দাবি করেছেন, গত তিন দশকে এমন ভয়াবহ বন্যা হয়নি ত্রিপুরায়। আগস্ট মাসে যা বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা স্বাভাবিকের থেকে ১৫১ শতাংশ বেশি। তার কথায়, '১৯৯৩ সালের ২১ শে আগস্ট ত্রিপুরার সাব্রম্নমে একদিনে ২৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড ছিল। আর এ বছর ২০ শে আগস্ট একদিনে বৃষ্টি হয়েছে ৩৭৫.৮ মিলিমিটার। ঠিক ৩১ বছর পর একদিনে এত বেশি বৃষ্টি হয়েছে।' কতদিন থাকবে এই বন্যা আবহাওয়া অধিদপ্তর আগস্টের শুরুতে এক পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, এ মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে অতিবৃষ্টির কারণেই এ বন্যা হবে বলে জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে এখন উত্তর-মধ্যাঞ্চলের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কুমিলস্না, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এ বন্যার কারণ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, 'উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান সাতটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে একটি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। এসব অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয় ১৬ আগস্ট থেকে। আর ১৮ আগস্টে সাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপস্থলে প্রবেশ করে। পরে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে এসে লঘুচাপ প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। প্রবল বৃষ্টি হয় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য অববাহিকাসহ উজানে ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলে।' সরদার উদয় রায়হান বলেন, বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ভারী বৃষ্টি, সাগরের লঘুচাপ এবং সেই সঙ্গে পূর্ণিমার কারণে সাগরের জোয়ার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল। সে কারণে বৃষ্টির পানি নামার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে উজানের প্রবল বৃষ্টির কারণে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কুমিলস্না, ফেনী, চট্টগ্রামের নদীবাহিত নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়। তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখাচ্ছে ভারী বৃষ্টি কমে যাবে। আশা করা যাচ্ছে, আজকে পানি স্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। কাল থেকে পানি কমা শুরু হতে পারে। পরবর্তী সময় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, 'বন্যায় জনগণের জানমাল রক্ষায় সার্বিকভাবে প্রশাসন কাজ করছে। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। উপদেষ্টা আরও বলেন, ভারতের অংশে বাঁধ খুলে দেওয়ায় বন্যা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে লেখা হলেও এ ব্যাপারে সরকারিভাবে তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়। ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।'