শাকিল-রূপা রিমান্ডে
এবার রাশেদ খান মেনন গ্রেপ্তার
প্রকাশ | ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে তাকে বাসা থেকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা মোস্তফা আলমগীর রতন।
এদিকে সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম বিভাগ থেকে পাঠানো একটি খুদে বার্তায় বলা হয়েছে, মেননকে গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তার গ্রেপ্তারের বিষয়ে ডিএমপি বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টি। আওয়ামী লীগ আমলে তিনি প্রথমে বেসরকারি বিমান পরিবহন মন্ত্রী এবং পরে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় সম্প্রতি দায়ের করা কয়েকটি মামলায় মেননকে আসামি করা হয়েছে।
শাকিল-রূপা রিমান্ডে :এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় টঙ্গীতে গুলি করে পোশাককর্মী হত্যার অভিযোগে উত্তরা পূর্ব থানার মামলায় বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ ও সাবেক প্রিন্সিপাল করেসপনডেন্ট ফারজানা রূপাকে হজিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
পুলিশের করা রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম আহমেদ হুমায়ুন কবির বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন।
এর আগে দেশ ছেড়ে ফ্রান্সে যাওয়ার চেষ্টার সময় বুধবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ৫১ বছর বয়সি শাকিল ও ৪৭ বছর বয়সি রূপাকে।
বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করে উত্তরা পূর্ব থানার মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন উত্তরা পূর্ব থানার এসআই মো. মোহাইমিনুর রহমান।
রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউশন পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান রিমান্ড আবেদন পড়ে শোনান। ওই আবেদনে বলা হয়, আন্দোলনের মধ্যে গুলিতে টঙ্গী এলাকার বেস্ট শার্টস গার্মেন্টের স্যাম্পল ম্যান মো. ফজলুল করিম (২৮) নিহতের ঘটনায় তার ভাই আনোয়ার হোসেন আয়নাল এ মামলা দায়ের করেন।
কারখানা বন্ধ থাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন ফজলুল। ৫ আগস্ট তিনি উত্তরার জসীম উদ্দীন মোড়ের কাছে রাস্তার ওপর অবস্থান নিয়েছিলেন।
সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, 'বিকাল সাড়ে ৪টার সময় অত্র মামলার এজাহারে বর্ণিত আসামিদের নির্দেশে নির্দেশিত হয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসী এবং অজ্ঞাতনামা আসামিরা দলবদ্ধভাবে একত্রিত হয়ে শটগান, পিস্তল, রিভলবারসহ অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর অতর্কিতভাবে গুলি চালায়। সেখানে বাদীর ভাইসহ অনেক ছাত্রজনতা গুলিবিদ্ধ হয়। বাদীর ভাইয়ের বুকের ডান পাশে সামান্য নিচে গুলি লাগলে তাৎক্ষণিকভাবে মাটিতে পড়ে যান। আন্দোলনে থাকা বাদীর আরেক ছোট ভাই মো. জিলানিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দ্রম্নত তাকে চিকিৎসার জন্য কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি চাসপাতালে নিয়ে যায়।'
সেখানে আইসিউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গভীর রাতে ফজলুলের মৃতু্য হয়। পরে বিনা ময়নাতদন্তে লাশের সৎকার করা হয়।
এ মামলায় শাকিল ও রূপার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, 'গোপনসূত্রের মাধ্যমে জানতে পারি, আসামিদ্বয় কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের কঠোর হস্তে দমন করার জন্য সরকারকে উসকানি প্রদান করে। আসামিদের পুলিশ রিমান্ডে এনে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে উক্ত মামলার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করা যাবে।'
প্রবল গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদককে একটি চিঠি পাঠান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ও আবদুল হান্নান মাসুদ।
তাতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য ৫০ জন সাংবাদিকের একটি তালিকা দিয়ে বলা হয়, এসব সাংবাদিক প্রতিনিয়ত পুলিশ ও আওয়ামী লীগকে মদদ এবং উসকানি দিয়েছেন। এভাবে তারা ছাত্রদের বিরুদ্ধে 'মানবতাবিরোধী' অপরাধে জড়িত ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে এসব সাংবাদিককে সাংবাদিকতা অঙ্গনে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলেন আব্দুল কাদের ও আবদুল হান্নান। ওই তালিকার ৫০ সাংবাদিকের মধ্যে শাকিল ও রূপার নাম আছে।
ওই তালিকা প্রকাশের আগেই গত ৮ আগস্ট শাকিল ও রূপাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় একাত্তর টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ। এ সাংবাদিক দম্পতির একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।