এস আলমের ঋণ জালিয়াতি

তদন্তে নেমে তথ্য চায় দুদক, সাড়া 'পায় না'

প্রকাশ | ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ১৫:৪০

যাযাদি রিপোর্ট
এস আলম

এস আলম গ্রম্নপের বিরুদ্ধে ৩৩০০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগের তদন্তে নেমে দেড় বছরেও খুব একটা এগোতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এস আলম গ্রম্নপ নামে-বেনামে ওই ঋণ নিয়েছে ইসলামী ব্যাংক থেকে। কিন্তু এ বিষয়ে তথ্য চেয়ে দুদকের চিঠির পর চিঠিতেও সাড়া দেয়নি ইসলামী ব্যাংক কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এখন সরকার পরিবর্তনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ অনুসন্ধানে গতি আসতে পারে বলে আশা করছেন দুদক কর্মকর্তার। দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, 'এস আলমের ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে দুদক অনুসন্ধান করছে। অনুসন্ধান কর্মকর্তা নথিপত্র তলব করে বিভিন্ন জায়গায় চিঠিপত্র দিচ্ছেন।' ইসলামী ব্যাংকের ৩৩০০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগটি দুদক অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেয় গত বছরের প্রথমদিকে। তখন অভিযোগটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় দুদকের উপপরিচালক সিরাজুল হককে। তিনি কয়েক দফা চিঠি দিয়ে নথিপত্র চেয়ে পাঠালেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। পরে তাকে বদলি করে দেওয়া হয় কুড়িগ্রামে। অভিযোগ আছে, এস আলমের ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধানে একাধিকবার নথিপত্র তলবের কারণেই তাকে বদলি করা হয়। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি সিরাজুল হক। পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় দুদকের উপপরিচালক ইয়াছির আরাফাতের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দলকে। দুদকের উপপরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও সহকারী পরিচালক রণজিৎ কুমার কর্মকারকে সেই দলে সদস্য হিসেবে রাখা হয়। কাজে নেমে চট্টগ্রামে ইসলামী ব্যাংকের চাকতাই শাখার গ্রাহক মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ঋণ অনুমোদন ও বিতরণের বিভিন্ন নথিপত্র তলব করে গত বছরের ১২ অক্টোবর একটি চিঠি দেন ইয়াছির আরাফাত। সেই তথ্যানুসন্ধানের জবাব না মেলায় আরো তিন দফা তাগিদপত্র দেয় দুদকের অনুসন্ধান দল। বার বার চিঠি পেয়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে গত বছর ২৬ ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে তিন মাস সময় চাওয়া হয়। পরে গত ৭ জুলাই আবারো চিঠি দেয় দুদক। কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ১৬ জুলাই সেই চিঠির 'দায়সারা' জবাব দেয় ইসলামী ব্যাংক। পরে গত ১২ আগস্ট আবারো নথিপত্র চেয়ে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য সরবরাহ করতে অনুরোধ করা হয় সেখানে। এই অনুসন্ধানের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখা, রাজশাহী ও পাবনা শাখার গ্রাহক নাবিল গ্রম্নপের কোম্পানি নাবিল নাবা ফুডস লিমিটেড, নাবিল কোল্ড স্টোরেজ, নাবিল ফিড মিলস লিমিটেড, নাবিল অটো রাইস মিল, নাবিল অটো ফ্লাওয়ার মিল, শিমুল এন্টারপ্রাইজ, নাবা এগ্রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, আনোয়ারা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, নাবা ফার্মা লিমিটেড, নাবিল গ্রীন ক্রপস লিমিটেড ও ইন্টারন্যাশনাল প্রোডাক্ট প্যালেসের বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়। এছাড়া ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের জুবিলি রোড শাখার গ্রাহক ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান, খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার গ্রাহক সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের তথ্য চায় দুদক। কমিশনের চিঠিতে বলা হয়, পর্যাপ্ত নথিপত্র ও জামানত ছাড়াই এসব কোম্পানিকে ঋণ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছে দুদক। ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ইসলামী ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ঋণ জালিয়াতির তথ্য জানতে ২০২৩ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকেও চিঠি দেয় দুদক। পরে দুই দফায় তাগিদপত্র দেওয়া হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ওইসব প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন চলমান থাকায় কার্যক্রম শেষে প্রস্তুত করা প্রতিবেদন পাঠানো হবে। সেই প্রতিবেদন না পেয়ে গত ৭ জুলাই আবারো তাগিদপত্র দেওয়া হলেও কোনো জবাব না মেলায় ১২ আগস্ট আবারো চিঠি দেওয়া হয়। দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেন, 'ইসলামী ব্যাংক থেকে নানান কোম্পানির নামে ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। যেসব কোম্পানির নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে তার কোনোটির সঙ্গেই এস আলমের সরাসরি সংশ্লিষ্টতার কথা কাগজপত্রে নেই। কিন্তু এসব ঋণের সুবিধাভোগী এস আলম সংশ্লিষ্টরাই।' বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও তথ্য না দেওয়ার যে অভিযোগ দুদক করছে, সে বিষয়ে কথা বলতে ইসলামী ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হককে ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে এস আলম গ্রম্নপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলমকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি। কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (ফিন্যান্স) সুব্রত কুমার ভৌমিকও ফোন ধরেননি।