কর ফাঁকির অভিযোগে ব্যাংক হিসাব তলব
বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, সামিট, নাসা ও ওরিয়ন গ্রম্নপের মালিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু
প্রকাশ | ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
দেশের শীর্ষ পাঁচটি শিল্পগোষ্ঠী কর ফাঁকি দিয়েছে কি না, তা নিয়ে তদন্তে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)। এ লক্ষ্যে বেক্সিমকো গ্রম্নপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান, নাসা গ্রম্নপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, সামিট গ্রম্নপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান, বসুন্ধরা গ্রম্নপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ওরিয়ন গ্রম্নপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, সঞ্চয় অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।
সিআইসির মহাপরিচালক মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, 'আমরা কাজ শুরু করছি। আমাদের বক্তব্য এনবিআরের জনসংযোগ বিভাগে পাঠিয়েছি।'
আর এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মু'মেন বলেন, 'এই ব্যক্তিদের ও তাদের পরিবারের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সিকিউরিটিজ এন্ড একচেঞ্জ কমিশন, সঞ্চয় অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'বিভিন্ন পন্থায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির বিশেষ অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সিআইসি। বর্তমান সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ পর্যালোচনা এবং সুনির্দিষ্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সিআইসি সম্ভাব্য কর ফাঁকিবাজদের তালিকা সম্পন্ন করেছে। পর্যায়ক্রমে এ সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আয়কর আইন, ২০২৩ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর অধীনে কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ফাঁকি দেওয়া কর উদ্ধারের পাশাপাশি শাস্তিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।'
এরই ধারাবাহিকতায় বেক্সিমকো, নাসা, সামিট, বসুন্ধরা, ওরিয়ন গ্রম্নপের কর্ণধার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আয়কর ফাঁকির তথ্য অনুসন্ধানে ও উদঘাটনে সিআইসি কাজ শুরু করেছে বলে জানান সৈয়দ এ মু'মেন।
\হদেশের শীর্ষস্থানীয় ওই পাঁচ ব্যবসায়ীর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর প্রভাবশালী এই ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আন্দোলনের সময় হকার শাহজাহানকে হত্যার অভিযোগে নিউ মার্কেট থানার হত্যা মামলায় তাকে রিমান্ডেও নেয় পুলিশ। সে সময় পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়, ১২টি দেশের মুদ্রা নিয়ে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টায় ছিলেন সালমান।
বাকি চারজনের মধ্যে সামিটের আজিজ খান দুদিন আগে সিঙ্গাপুর থেকে বস্নুমবার্গকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। নাসা গ্রম্নপের নজরুল ইসলাম মজুমদারও দেশে নেই বলে পত্রিকায় খবর এসেছে।
এর আগে বুধবার এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান সিআইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে এই পাঁচটি শিল্পগোষ্ঠীর গত কয়েক বছরের আয়কর, ভ্যাট, কাস্টমস সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে কর ফাঁকির তদন্ত করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া এসব গোষ্ঠীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের আমদানি রপ্তানি পর্যালোচনা করা হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এস আলম শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে এনবিআর। বৃহস্পতিবার সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দিয়ে তাদের বিষয়ে তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে।
এনবিআরের আয়কর বিভাগের কর অঞ্চল-১৫ এর কমিশনার আহসান হাবিব স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি সব ব্যাংকে পাঠানো হয়। এ ছাড়া সাইফুল আলমের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ক্রেডিট কার্ডের তথ্যও চাওয়া হয়েছে কর অঞ্চল থেকে।