আন্দোলনে নিহত ৪৯ নেতাকর্মীর তালিকা দিল ছাত্রদল

প্রকাশ | ২২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
চাকরিতে কোটা সংস্কার এবং সরকার পতনের আন্দোলন ঘিরে নিহত ৪৯ নেতাকর্মীর তালিকা প্রকাশ করেছে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল। বুধবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এই তালিকা প্রকাশ করেন। এ সময় আন্দোলনে শামিল হওয়া ২১০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও দাবি করেন রাকিব। তিনি বলেন, 'এই আন্দোলনে হাজারের বেশি ছাত্রজনতা শহীদ হয়েছেন। আমি আমাদের ছাত্রদলের ৪৯ জন শহীদসহ সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জনাচ্ছি এবং তাদের জন্য জান্নাতুল ফেরদৌসের প্রার্থনা করছি।' জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রদলের ত্যাগকে 'নজিরবিহীন' হিসেবে বর্ণনা করে রাকিব বলেন, 'আন্দোলনে শুরু থেকেই ছাত্রদল পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্রদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আন্দোলনকে বেগবান করেছে।' নিহতদের নাম- চট্টগ্রাম কলেজের ওয়াসিম আকরাম, ঢাকা মহানগর (পূর্ব) ছাত্রদলের আরিফুর রহমান রাসেল, শেরপুর সরকারি কলেজের মাহবুব আলম, শ্রীবর্দী সরকারি কলেজের সবুজ মিয়া, ময়মনসিংহের গৌরীপুর মোজাফফর আলী ফকির উচ্চ বিদ্যালয় কলেজের বিপস্নব হাসান, টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরের অর্জুন ইউনিয়নের ইমন মিয়া, মাগুরা জেলা ছাত্রদলের মেহেদি হাসান রাব্বী, কুড়িগ্রামের উলিপুর ছাত্রদলের রায়হানুল ইসলাম, লক্ষ্ণীপুর সরকারি কলেজের মো. শহীদ কাউসার হোসেন বিজয়, ঢাকা মহানগর (পূর্ব) ছাত্রদলের ফজলে রাব্বী, মুন্সীগঞ্জ মীরকাদিম ছাত্রদলের মানিক মিয়া শারিক, রামপাল ছাত্রদলের ফরিদ শেখ, ঢাকা মহানগর ৪০নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের ইসমাইল হোসেন রাব্বী, সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের শাওন, ঢাকা মহানগর (পশ্চিম) ছাত্রদলের শামীম হাওলাদার, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির ইরফান ভুঁইয়া, ভাটারা থানার ছাত্রদলের মুনির হোসেন, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির, ঢাকা মহানগর (উত্তর) ছাত্রদলের তাহিদুল ইসলাম, চাঁদপুরের মতলব ছাত্রদলের পাভেল হাসান রাব্বী, মানিকগঞ্জের শিবালয়ের ৭নং ওয়ার্ডের রফিকুল ইসলাম, ফতু্‌লস্না ইউনিয়ন ছাত্রদলের রাকিব আহমেদ, গাজীপুরের গাছা মেট্রো থানা ছাত্রদলের হৃদয় হোসেন, সাভার ছাত্রদলের আফিকুল ইসলাম সাদ, পলস্নবী থানা ছাত্রদলের লিটল হাসান লালস্নু, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি বারগাঁও ইউনিয়নের তানভীর হোসেন মাহমুদ, জামালপুরের শরীফপুর ছাত্রদলের সপ্ত, জামালপুরের দিকপাইভ ছাত্রদলের মো. জাহিদুল ইসলাম, হবিগঞ্জের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রিপন চন্দ্র শীল, নেত্রকোনার দুর্গাপুর থানার গুজিরকোনা ছাত্র দলের সাইফুল ইসলাম, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর ছাত্রদলের মলিস্নক আফজল মিয়া, পঞ্চগড় জেলার বোদার ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সুমন ইসলাম, মিরপুর বাংলা কলেজ ছাত্রদলের সাগর আহমেদ, যশোর ছাত্রদলের তানভীর রায়হান আলিফ, ইউসুফ আলী, বাগেরহাটের চিতলমারী শেরেবাংলা কলেজ ছাত্রদলের সাব্বির মলিস্নক, আমিনুর রহমান কলেজের আহাদ আলী, মাগুরার জগদল ইউনিয়নের রাজু আহমেদ, নরসিংদীর মাধবদীর মো. শাওন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের জালালউদ্দিন ডিগ্রি কলেজের আসিফ হোসেন, কক্সবাজারের মহেশখালীর আশেকান আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের তানভীর সিদ্দিকী, ঈদগাহ উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের নুরুল মোস্তফা, ঝালকাঠির ৭ ওয়ার্ডের রাকিব হাওলাদার, মুলাদী সরকারি কলেজের মো. রিয়াজ, পটুয়াখালীর গলাচিপার সাগর গাজী, সোনারগাঁও ইউনির্ভাসিটির রাসেল মাহমুদ, সিরাজগঞ্চ জেলার সদরপুরের সুমন ও নরসিংদীর শিবপুর শহীদ আসাদ কলেজের আমজাদ হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে রাকিব বলেন, 'নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, এক-এগারোর আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের ভ্যানগার্ড হিসেবে ছাত্রদল এবারও পূর্ণশক্তি নিয়ে শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনে ছাত্রজনতার সঙ্গে শামিল হয়েছিল। এই আন্দোলনে ছাত্রদলের ২১০০ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে, যাদের সবাই পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছে।' ছাত্রদল কোনো বিশৃঙ্খলার সঙ্গে 'সম্পৃক্ত নয়' দাবি করে সংগঠনের সভাপতি বলেন, 'আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে ছাত্রদল শত নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করে টিকে আছে। আমাদের কোনো নেতারা কোনো বিশৃঙ্খলা, দখলবাজির সঙ্গে জড়িত নয়।' 'ছাত্রদল ইতিবাচক রাজনীতি চলমান রাখবে' সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, 'গত এক যুগের বেশি সময় ধরে ছাত্রদলের প্রত্যেক নেতাকর্মী একটি গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস এবং সাম্য-সম্প্রীতির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য বদ্ধপরিকর ছিল। একই সঙ্গে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য ছাত্রদলের যে সংগ্রাম সচল ছিল, তা এখনো আছে।' আগামীতে রাজনীতির মাঠে দেশের প্রতিটি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে তারা 'ইতিবাচক রাজনীতির প্রতিযোগিতা' চলমান রখতে চান বলেও মন্তব্য করেন নাছির। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমরা যেটা মনে করছি, একটি ক্যাম্পাসে সুস্থ রাজনীতির জন্য, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য অবশ্যই ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন রয়েছে। যারা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি করেছে, পিটিয়ে মানুষ মেরে ফেলেছে, ক্ষমতার দাপট, ছিনতাইর মতো ঘটনা ঘটেছে যে ছাত্র সংগঠনের তাদের রাজনীতি বন্ধ করার সময় এসেছে। ছাত্রদের অধিকারের জন্য ছাত্র রাজনীতি দরকার আছে বলে আমরা মনে করি।' ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন।