এবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর মিরপুরের্ যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়ে বেসরকারি কোম্পানির অফিস সহায়ক ফিরোজ তালুকদারকে হত্যার অভিযোগে এ মামলা হয়েছে। নিহতের স্ত্রী রেশমা সুলতানা বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মেহেদী হাসানের আদালতে এই দু'জনসহ ৫ জনকে আসামি করে মামলার আবেদন করেন। ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর লক্ষ্ণীবাজারে গুলিতে যুবক ও তেজগাঁওয়ে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় আরও দুটি মামলা হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল আদালতের তদন্ত সংস্থায় গণহত্যার অভিযোগে দুটি আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া বুধবার সিলেট ও মঙ্গলবার রাতে গাজীপুরে পৃথক তিনটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এ নিয়ে গত দুদিনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৬ হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে আসামি আছেন তার বোন শেখ রেহানা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান খান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুলস্নাহ আল মামুনসহ সদ্য সাবেক সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও আ'লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী। এ ছাড়া বুধবার নারায়ণগঞ্জে ও মঙ্গলবার রাতে রাজশাহী ও গাজীপুর সাবেক মন্ত্রী, মেয়র ও আ'লীগের নেতাকর্মীকে আসামি করে পৃথক তিন মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় নামে ও অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে প্রায় চার হাজার।
শেখ হাসিনা ও সাবেক বিচারপতির বিরুদ্ধে মামলা
সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর মিরপুরের্ যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়ে অফিস সহায়ক ফিরোজ তালুকদারকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
বুধবার নিহতের স্ত্রী রেশমা সুলতানা ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মেহেদী হাসানের আদালতে ওই দুজনসহ ৫ জনকে আসামি করে এ মামলার আবেদন করেন। বিচারক বাদীর জবানবন্দি শুনে মিরপুর মডেল থানার ওসিকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলার অন্য তিন আসামি হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুলস্নাহ আল মামুন।
মামলার আর্জিতে বলা হয়, এ বি এম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি থাকাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে অন্য সব আইনজীবী তথা এমিকাস কিউরিদের মতামত উপেক্ষা করে একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেন। তার সেই রায় দেশে 'অঘোষিত স্বৈরতন্ত্র' কায়েম করে শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের যথেচ্ছভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ করে দেয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা ও অন্য আসামিরা কথিত নির্বাচনের মাধ্যমে একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে মানুষের ওপর 'জুলুম, নির্যাতন ও বাকস্বাধীনতা খর্ব করাসহ খুন, গুম ও ক্রসফায়ারের মাধ্যমে' মানুষ হত্যা ও নিষ্পেষণ অব্যাহত রাখে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে সরকার 'হত্যা, গুম ও গ্রেপ্তারের' মাধ্যমে দমন-পীড়ন চালায়। শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের নির্দেশে পুলিশ,র্ যাব, বিজিবিসহ কিছু 'বিপথগামী' সদস্য, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা দেশব্যাপী আন্দোলন দমনের জন্য ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে গুলি করতে থাকে।
১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টায় ফিরোজ তালুকদার মিরপুর-১০ গোলচত্বর পার হওয়ার সময়র্ যাবের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে আহত হন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকায় হাসিনা-মেনন-ইনু-মঞ্জুর
বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ
বুধবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ১৪ দলীয় জোটের শরিক, সাবেক মন্ত্রী, পুলিশ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ ৫২ জনের নাম উলেস্নখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের তদন্ত সংস্থায় গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
গত ১৮ জুলাই মিরপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত হন এইচএসসির শিক্ষার্থী শেখ শাহরিয়ার বিন মতিনের বাবা মো. আব্দুল মতিনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন এই আবেদন করেন।
এর আগে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত সংস্থায় শেখ হাসিনাসহ বিভিন্নজনের বিরুদ্ধে ঢাকায় চারটি এবং চট্টগ্রামে একটি অভিযোগ করা হয়। যেগুলোর ওপর তদন্ত চলমান রেখেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের তদন্ত সংস্থা।
আবেদনে ১৪ দলের নেতা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জেপির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোলস্নাহ, তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুলস্নাহ আল মামুন,র্ যাবের সাবেক ডিজি হারুন অর রশীদ, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বিপস্নব কুমার, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, যুবলীগ সেক্রেটারি মাইনুল হাসান নিখিল, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, ঢাকা-উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামসহ ৫২ জনের নাম উলেস্নখ করে এবং সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অন্য অঙ্গ সংগঠন এবং অজ্ঞাত ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
লক্ষ্ণীবাজারে হাসিনা-কাদেরসহ
৩৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
ছাত্র আন্দোলনে পুরান ঢাকার লক্ষ্ণীবাজারে এলেম আল ফায়দি নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সামসুল আরেফিন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগটি সূত্রাপুর থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।
বাদী সামসুল আরেফিন নিজেই গণমাধ্যমকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে উলেস্নখযোগ্যরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুলস্নাহ আল-মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপস্নব কুমার, ওয়ারীর ডিসি ইকবাল হোসেন, ঢাকা-৬ আসনের সাবেক এমপি আবু সাইদ খোকন, ঢাকা-৭ এর সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিম, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রহমান মিয়াজী, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রঞ্জন বিশ্বাস, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফ হোসেন ছোটন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজী, সাধারণ সম্পাদক এসএম আকতার হোসাইন, কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন সাগর, সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাওলাদার, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত মোড়ল, সাধারণ সম্পাদক আশিকুল ইসলাম আশিক।
তেজগাঁওয়ে হাসিনা, মুনতাসীর মামুন
ও নিঝুমের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিতে শিক্ষার্থী মো. তৌহিদুল হক নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ও নিঝুম মজুমদারসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হুদা চৌধুরীর আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী নিহতের বড়ভাই তারিকুল ইসলাম। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে তেজগাঁও থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীর আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার উলেস্নখযোগ্য আসামিরা হলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুলস্নাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ ও ডিএমপির বিপস্নব কুমার।
চট্টগ্রামে গণহত্যার অভিযোগ
বুধবার চট্টগামে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির, রেজাউল করিম, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ৭৭ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের তদন্ত সংস্থায় গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
১৬ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর বাবা মো. জাকির হোসেনের পক্ষে আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহাম্মদ হুজ্জাতুল ইসলাম খান।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী, মহিউদ্দিন বাচ্চু, আওয়ামী লীগ নেতা মোতাহেরুল ইসলাম, মফিজুর রহমান, এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুলস্নাহ আল মামুনসহ ৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আরও অজ্ঞাতপরিচয় এক হাজার থেকে এক হাজার দুইশ'জনের কথা বলা হয়েছে।
শেখ হাসিনাসহ ৮৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা
সিলেট অফিস জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৮৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে গুলি ও হামলার অভিযোগে বুধবার সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম ও দ্রম্নত বিচারিক আদালতে মামলাটি করেন মো. জুবের আহমদ (৩৫) নামে এক যুবক। তিনি সিলেট মহানগরের আম্বরখানা ইলেক্ট্রিক সাপস্নাই এলাকার কলবাখানি জালালি ৪১নং বাসার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে ও জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। মামলায় ৫০০-৬০০ জন অজ্ঞাত লোককে আসামি করা হয়েছে।
মামলার উলেস্নখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুর রহমান, সাবেক প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক এমপি কামরুল ইসলাম, সাবেক এমপি ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক এমপি ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক আইজিপি আব্দুলস্নাহ আল মামুন, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন-অর-রশিদ, সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনের সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, সাবেক এমপি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, সিলেট সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি এবং সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের পিএস সাজলু লস্কর।
শেখ হাসিনাসহ ১৩৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, ছাত্র আন্দোলনে নূর আলম (২২) নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩৯ জনের নাম উলেস্নখ করে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানায় মামলাটি দায়ের করেন নিহতের বাবা মো. আমির আলী (৪৪)। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম সদরের মোলস্নাপাড়া মধ্য কুমরপুর এলাকায়। তিনি গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানার ১৮নং ওয়ার্ডের তেলিপাড়া এলাকার ডাক্তার নাহিদের বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
মামলায় আসামিরা হলেন- আ'লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক এমপি সিমিন হোসেন রিমি, মেহের আফরোজ চুমকি, রুমানা আলী টুসি, গাজীপুর মহানগর আ'লীগের সভাপতি আজমত উলস্ন্যাহ খান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, মহানগর আ'লীগ নেতা মতিউর রহমান মতি প্রমুখ। মামলায় আ'লীগের অজ্ঞাতনামা আরও ১০০/১৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জে ১২৩ জনের নামে হত্যা মামলা
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কেয়ারটেকার মনির হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃতু্যর ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি শামীম ওসমানকে প্রধান আসামি করে ১২৩ জনের নাম উলেস্নখ করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার নিহতের ছোটভাই সাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন।
মামলায় শামীম ওসমান ছাড়াও উলেস্নখযোগ্য আসামি হলেন- সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আ'লীগের সভাপতি আলহাজ মো. মজিবর রহমান (৬৮), সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন (৬২), সাবেক এমপি নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান (৪৫), সাবেক এমপি শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান (৩৫), মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা শাহ নিজাম (৫৬), সাবেক কাউন্সিলর মো. ওমর ফারুক (৪৮), এবং হাবিবুলস্নাহ হবুল (৫০), মো. সাদেক আলী (৬২), নাসিক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল (৪৪), মতিউর রহমান (মতি), স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শিব্বির আহমাদ (৪০), দেলোয়ার হোসেন সরকারসহ ১২৩ জন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হামলার ৫ বছর পর লিটনের বিরুদ্ধে মামলা
রাজশাহী অফিস জানায়, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর বাড়ি ও তার নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলার ঘটনার পাঁচ বছর পর পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ আওয়ামী লীগের ৮২ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা থানায় মামলা দুইটি দায়ের করেন মিজানুর রহমান মিনুর বাড়ির কেয়ারটেকার মো. আলাউদ্দিন ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিই বিভাগের শিক্ষক ও জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আওরঙ্গজীব মো. আব্দুর রহমান।
চন্দ্রিমা থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, দুটি মামলায় ২২ জনের নাম উলেস্নখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৬০ জনকে। মামলায় হত্যা চেষ্টা, ছিনতাই, বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় খায়রুজ্জামান লিটনকে হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে উলেস্নখ করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।