বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় হবে ফাউন্ডেশন নারী নেত্রীদের ইউনূস

যাযাদি রিপোর্ট
  ২১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় ফাউন্ডেশন তৈরি করা হবে জানিয়ে সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা এবং পানি উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, 'ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যত মানুষ আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসা প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে একটা উদ্যোগ আছে। এটা কার্যকর হচ্ছে, আমরা একটা ফাউন্ডেশন সৃষ্টির মাধ্যমে যারা সাহায্য করতে আগ্রহী, তাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে এই কাজগুলো করবো।'

মঙ্গলবার অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার কার্যালয় যমুনায় নারী নেত্রীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।

এদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয়ে বৈঠকটি চলে এক ঘণ্টারও বেশি সময়। দুপুর ১টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার গেটে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বৈঠকে ৩০ জনের মতো নারী নেত্রী উপস্থিত ছিলেন। একইসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নারী সমন্বয়কও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সরকারের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, ফরিদা আখতার ও শারমিন এস মুরশিদ উপস্থিত ছিলেন।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন,

'চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সব কিছু করা হবে। যেহেতু ফাউন্ডেশন করতে সময় লাগছে, তাই একটা দাবি উঠেছে অন্তর্বর্তীকালীন একটা কিছুর ব্যবস্থা করার। যাদের চিকিৎসায় টাকার প্রয়োজন আছে, যাতে তাড়াতাড়ি করে টাকা পেতে পারে।'

নারী নেত্রীদের মতামত নেওয়ার জন্য বৈঠক হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, 'তাদের মতামতের ভিত্তিতে সংস্কারের যে এজেন্ডা আছে তা ঠিক করবো। প্রধান উপদেষ্টা নারী নেত্রীদের একসঙ্গে বসার অনুরোধ করেছেন। সেখানে সরকারের কাজ করতে সুবিধা হয়- এমন কিছু প্রস্তাব দেওয়ার অনুরোধ করেন। অর্ধ সমাপ্ত কাজ করে লাভ নেই। তাই কিছু অগ্রাধিকার সুপারিশ করার জন্য, যাতে বর্তমান সরকার করে দিয়ে যায়, যা দলীয় সরকারের অধীনে করতে কষ্ট হয়ে যাবে।'

নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে বিক্ষিপ্তভাবে কাজ না করে নারী অধিকার কমিশন (ওমেন্স রাইটস) গঠনের প্রস্তাব বৈঠকে করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা। তিনি বলেন, 'তথ্য অধিকার কমিশন, মানবাধিকার কমিশন রয়েছে। যেগুলো দলীয় সরকারের সময় চাপে পড়ে দায়িত্ব প্রতিপালন করতে পারেনি। সেখানে স্বাধীনতা নিশ্চিতে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।'

মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'মন্ত্রণালয়টি আসলে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। সেটা ছাড়াও তাদের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হওয়া উচিত ৪৫টি মন্ত্রণালয়ের তদারকির ভূমিকা। সেই কাজটা তারা ঠিক মতো করছে না।'

নারীর প্রতি বৈষম্য নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক অনেক আইন আন্তর্জাতিক ও জাতীয়ভাবে আছে। সেগুলোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া। যেমন- উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সমান অধিকারের জন্য অবস্থান নেওয়া। পারিবারিক, অভিভাবকত্বে ও নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে যে আন্তর্জাতিক আইন আছে সেখানে বৈষম্যকে অ্যাড্রেস করেছে। সেখানে বাংলাদেশের কোথাও কোথাও রিজারভেশন আছে। সেটা প্রত্যাহার করার দাবি এসেছে। সিডোর রিজারভেশন প্রত্যাহারের পাশাপাশি আইএলও ১৯০ ও আরও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সমর্থন দিয়ে দেওয়া।

নারীর প্রতি সহিংসতা করা হলেও বিচার হয় না- এ মানসিকতা থেকে সরে আসতে হলে কেবল নারীর ক্ষমতায়ন করলে হবে না, সমাজকে নারীবান্ধব করার পরিবেশ আনতে হবে বলে বৈঠকে মতামত এসেছে বলে জানান সৈয়দা হাসান। তিনি বলেন, 'কল্পনা চাকমা, তনু, মুনিয়া এবং নুসরাতের হারিয়ে যাওয়া কিংবা নিহত হয়ে যাওয়ার কারণটা বের করা। দায়ী ব্যক্তিরা যতই শক্তিশালী হোক তাদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য বৈঠকের সবাই দাবি জানিয়েছেন।'

সরকার বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে করার পরামর্শ বৈঠকে এসেছে বলে জানান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, যে ভুলগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান, সেই সংস্কার করতে গিয়ে পুরনো ভুলগুলো পুনরায় যাতে না হয়। শিল্পকলা একাডেমিতে শিল্পকলা বোঝেন, এমন লোকদের নিয়োগ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে কুকি চীন ইসু্যতে বম জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন হচ্ছে বলে দাবি করে তা বন্ধের আহ্বান করা হয়েছে। দলীয় সরকার আমলে যাতে এনজিও বু্যরোর মাধ্যমে হয়রানির শিকার না হতে হয়, সেই বিষয়ে বৈঠকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।'

ড. ইউনূসকে জাতিসংঘের চিঠি

বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি চিঠিতে ড. ইউনূসের সরকারের সঙ্গে কাজ করাসহ বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে সমর্থন অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ অঙ্গীকারের কথা উলেস্নখ করেছেন।

ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ৮ আগস্ট ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় অন্তর্র্বর্তী সরকার। ১৬ আগস্ট ড. ইউনূসকে চিঠি দেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

চিঠিতে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, 'বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আপনাকে আমার পক্ষ থেকে জানাই শুভেচ্ছা। আমি বাংলাদেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই।'

চিঠিতে অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, 'এই ক্রান্তিকালে সহিংসতার অবসান ঘটাতে, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে, আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথে এগিয়ে যেতে আপনার নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ হবে।'

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, 'আমি আশা করি, আপনার সরকার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পন্থা অবলম্বন করবে, যার মধ্যে তরুণ ও নারীদের পাশাপাশি সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের কণ্ঠস্বর অন্তর্ভুক্ত করা হবে।'

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, 'আমি সব নাগরিক ও বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকারের ওপর আস্থা রাখছি।'

চিঠিতে বলা হয়, 'আমি আপনাকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কল্যাণ নিশ্চিত করার জোরালোভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি, বিশেষ করে মিয়ানমারে অবনতিশীল পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে।'

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ তার ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। জাতিসংঘ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ গণতন্ত্রের প্রতি বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে পূর্ণ সমর্থন করে। অন্তর্র্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিতে জাতিসংঘ প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে