আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ

আজ পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ

প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
দীর্ঘ ৩২ মাস পর পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ দল। যদিও আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ অংশের এই দুই ম্যাচের সিরিজে টাইগাররা জয়ের স্বপ্ন দেখলেও সমীকরণের দিক দিয়ে এগিয়ে স্বাগতিকরা। একাধিকবার জয়ের সম্ভাবনা জাগালেও এখন পর্যন্ত মোট ১৩ বারের দেখায় ১২ ম্যাচে হেরেছে লাল-সবুজ, আর ড্র করেছে একটিতে। বাংলাদেশ টেস্টে সবশেষ পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল ২০২১ সালে। ঘরের মাঠে দুই ম্যাচের সেই সিরিজে টাইগাররা হয়েছিল হোয়াইটওয়াশ। মেন ইন গ্রিনদের বিপক্ষে সমীকরণও খুব খারাপ লাল-সবুজের। দীর্ঘ ৩২ মাস পর আবারও তাদের সঙ্গে লাল বলের লড়াই শান্ত-মিরাজদের। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের প্রথম টেস্টে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ২০০১ সাল থেকেই পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট খেলে আসছে বাংলাদেশ। মেন ইন গ্রিনদের সঙ্গে মোট ১৩টি টেস্ট খেলেছে লাল-সবুজ। তবে বাংলাদেশ কখনো দেখেনি জয়ের মুখ। এখন পর্যন্ত ১২ হারের বিপরীতে টাইগারদের প্রাপ্তি মাত্র এক ম্যাচে ড্র। যদিও লাল-সবুজদের সামনে জয়ের সুযোগ এসেছিল একাধিকবার। ২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে ২৬১ রানের টার্গেটে পাকিস্তানকে বেশ চাপেই ফেলেছিল খালেদ মাসুদ সুজনের দল। তবে রশিদ লতিফের এক বিতর্কিত ক্যাচ আর ইনজামাম-উল হকের দুর্দান্ত ইনিংস বাঁচিয়ে দেয় মেন ইন গ্রিনদের। ১৬৪ রানে ৭ উইকেট হারানোর ১৩৮ রানে অপরাজিত থেকে পাকিস্তানকে এনে দেন ১ উইকেটের জয়। সঙ্গে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র ড্র করেছিল ২০১৫ সালের খুলনা টেস্টে। সেই ম্যাচেও অবশ্য জয় পেতে পারত টাইগাররা। তবে বোলাররা দিতে পারেননি দায়িত্বের পরিচয়। যদিও সেই টেস্ট দিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম উঠিয়েছিল লাল-সবুজ। তৃতীয় ইনিংসে ওপেনিংয়ে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের করা ৩১২ রানের পার্টনারশিপ টেস্টে ক্রিকেটের ইতিহাসে তৃতীয় ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটা প্রথম। এর আগে ১৯৬০ সালে তৃতীয় ইনিংসে ওপেনিং জুটিতে ২৯০ রান করেছিলেন ইংল্যান্ডের জিওফ পুলার ও কলিন কাউড্রে। এবার আক্ষেপ ঘোচানোর সুযোগ এসেছে বাংলাদেশের সামনে। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হিসেবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে বড় স্বপ্ন নিয়ে পাকিস্তান গিয়েছে শান্তর দল। এখন দেখার অপেক্ষায় ২৩ বছরের ইতিহাস বদলাতে পারেনি কি না টাইগাররা। পাকিস্তান সিরিজ শুরুর আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরেছে বাংলাদেশ। টি২০ বিশ্বকাপের পর ভিন্ন ফরম্যাট দিয়ে মাঠে ফিরছে বাংলাদেশ দল। নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত ক্রিকেটাররা, এমনটিই মনে করেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ম্যাচের আগে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক জানান, খেলোয়াড়রা যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। শান্ত বলেন, 'ম্যাচে টসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেটি নিয়ে ভাবছি না। আমাদের দলের প্রায় সবাই ফিট। তারা যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের মানিয়ে নিতে তৈরি আছে। চ্যালেঞ্জ নিতে মুখিয়ে আছে সবাই।' পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশের রেকর্ড ভালো নয়। যদিও, তা নিয়ে চিন্তিত নন বাংলাদেশ অধিনায়ক। পুরনোকে পেছনে ফেলে নতুনভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় শান্তর কণ্ঠে। অধিনায়ক বলেন, 'রেকর্ড তো ভাঙা যায়। জানি, কাজটি সহজ হবে না। তবে আমি বিশ্বাস করি, এবার নতুন কিছু সম্ভব হবে। আমাদের খেলোয়াড় সবাই খেলার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। সবাই মিলে মাঠে বিশেষ কিছু অর্জন করা কঠিন নয়।' এর আগে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও দল নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছিলেন, 'রাওয়ালপিন্ডির যে পিচ দেখলাম, তাতে মনে হচ্ছে আমাদের পেসাররা ভালো সুবিধা পাবে। দলে দারুণ সব পেসার আছেন। তারা নিজেদের প্রস্তুত করেছেন। শুধু পেসাররা নন, আমার মনে হয় স্পিনাররাও নিজেদের মেলে ধরতে তৈরি। অলরাউন্ডার হিসেবে সাকিব, মিরাজদের কাছে প্রত্যাশা থাকে। তারাও ভালো করবেন বলে আমি মনে করি।' আজ শুরু হতে যাওয়া প্রথম টেস্টের স্কোয়াডে কোনো বিশেষজ্ঞ স্পিনার রাখেনি তারা। অর্থাৎ পুরো পেস নির্ভর বোলিং বিভাগ নিয়ে টাইগারদের মুখোমুখি হবে স্বাগতিকরা। এমন দৃষ্টান্ত ২৮ বছর আগে প্রথম দেখিয়েছিল পাকিস্তান। নিজেদের মাটিতে দ্বিতীয়বার তারা শুধু পেসারদের নিয়ে টেস্ট খেলতে নামছে। সেখানকার পিচ অনেকটা পেস-বান্ধব। এ কারণে স্বাগতিকরা বাড়তি পেসার খেলাতে পারে, এমনটা অনুমেয় ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা কোনো বিশেষজ্ঞ স্পিনারকেই দলে রাখছে না। স্কোয়াডে থাকা একমাত্র স্পিনার আবরার আহমেদকেও প্রথম টেস্টের জন্য বাদ দেওয়া হয়েছে। এর আগে ১৯৯৫ সালে প্রথমবার শুধু পেসারদের নিয়ে টেস্ট খেলেছিল পাকিস্তান। এরপর ২০১৯ সালেও তারা একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ওই সময়ও রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল টেস্ট ম্যাচটি। পাকিস্তানের টেস্ট কোচ জেসন গিলেস্পি ব্যাটিং অলরাউন্ডার সালমান আলি আগাকে অফ-স্পিনার হিসেবে খেলানোর পরিকল্পনা আছে বলে আগেই জানিয়েছেন। সম্ভবত সেটাই দেখা যাবে রাওয়ালপিন্ডিতে। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের আগে পাক স্কোয়াড থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে দুজনকে। বাদ পড়া আবরার আর কামরান গুলামকে রাখা হয়েছে পাকিস্তান শাহিনসের সঙ্গে, যারা বাংলাদেশ 'এ' দলের সঙ্গে টেস্ট সিরিজ খেলেছে। ম্যাচের আগেরদিন মঙ্গলবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে চার পেসার খেলানোর কারণও জানালেন অধিনায়ক শান মাসুদ। দলের আক্রমণ কৌশল প্রকাশ করেন অধিনায়ক। জানান, রাওয়ালপিন্ডির পিচ কন্ডিশনের কথা বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত, 'রাওয়ালপিন্ডিতে যখনই আমরা ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছি, কন্ডিশন পেসার এবং ব্যাটারদের পক্ষে ছিল। স্পিন বোলিং বড় কোনো ভূমিকা রাখছে না। ঘরোয়া ক্রিকেটেও আমরা নতুন কিছু প্রয়োগ করার চিন্তা করি না, সাধারণত যা আমরা রাওয়ালপিন্ডিতে পাই না। যে কন্ডিশন সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করে এগিয়ে যেতে চাই।' পেস আক্রমণে শাহিন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ ও খুররাম শেহজাদের পাশাপাশি জায়গা পেয়েছেন মোহাম্মদ আলি। মীর হামজার পরিবর্তে দলে এসেছেন আলি। কারণ হিসেবে শান বললেন, ভারসাম্য বজায় রেখে একাদশ ঘোষণা করা হয়েছে। 'যদি বিচ্ছিন্নভাবে দেখেন, যুক্তি দিতে পারেন, কেন এই নির্দিষ্ট বোলারকে অন্যের চেয়ে পছন্দ করা হযেছিল। আমরা বিবেচনা করেছি, শাহিন আফ্রিদি এবং নাসিম শাহকে সবচেয়ে ভালো সমর্থন করতে পারে কে। আশা করি যারা নতুন বল নেবেন, আমাদের মনে হয়েছে, মোহাম্মদ আলি এই ভূমিকার জন্য উপযুক্ত। তিনি জোরে বল করতে পারেন, গতির সঙ্গে বল বাতাসে নাড়াতে পারেন। তাই বলে তার অতিরিক্ত গতি আছে এজন্য অন্য বোলার থেকে ভালো, বিষয়টি তা নয়। মূলত কন্ডিশনে কে সবচেয়ে মানানসই, সেটা বিবেচনা করা হয়েছে।'