বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মতিঝিলে গণহত্যাসহ হাসিনার বিরুদ্ধে ৬ মামলা

কাদের, আসাদুজ্জামান ও হাছান মাহমুদসহ আসামি প্রায় দেড় হাজার
যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
মতিঝিলে গণহত্যাসহ হাসিনার বিরুদ্ধে ৬ মামলা

এগারো বছর আগে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে 'গণহত্যা'র অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রোববার বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে (সিএমএম) এই মামলার আবেদন করেন। এছাড়া এদিন ঢাকা, জয়পুরহাট, রংপুর ও নাটোরে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। এর আগে শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার নামে একটি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় ৩৬৩ জনের নামোলেস্নখ করে অজ্ঞাত আরও ৮শ' জনকে আসামি করা হয়েছে। সদ্য ক্ষমতাচু্যত সরকারের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের প্রভাবশালী নেতাকর্মী ও প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে।

'গণহত্যার' অভিযোগে মামলা : রোববার সকালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকার মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশে 'গণহত্যার' অভিযোগে মামলার আবেদন করেন বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী।

মহানগর হাকিম জাকী-আল ফারাবী আবেদনকারীর জবানবন্দি শুনে মতিঝিল থানার ওসিকে ওই অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেন।

সম্প্রতি ক্ষমতাচু্যত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের আসামি করার আর্জি জানানো হয়েছে তার আবেদনে।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম

হানিফ, তৎকালীন আইজিপি হাসান মাহাবুব খন্দকার, তৎকালীনর্ যাবের প্রধান এ কে এম শহিদুল হক, তৎকালীন ডিসি মোহাম্মদ বিপস্নব কুমার সরকার, মতিঝিল থানার তৎকালীন ওসি ওমর ফারুক, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনসুর আহমেদ, মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল হক হিরণের নাম রয়েছে ওই তালিকায়।

পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইমরান, মোহাম্মদ সাঈদ, সদ্য সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, আকরাম হোসেন, সাবেক কাউন্সিলর ফারজানা আক্তার ডলি, আওয়ামী লীগ নেত্রী মমতাজ পারভীন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান সরকার, আওয়ামী লীগের আলমগীর হোসেন, মতিঝিল থানার ওসি রমান আলী বিশ্বাস, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন সালু, তৎকালীন সামরিক উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, মতিঝিল বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ নাজমুল আলম, মেজর ইকবাল, মতিঝিল বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান, এনএসআইয়ের সাবেক প্রধান জিয়াউল আহসান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস, মোহাম্মদ শাহদাত হোসেন, সাবেক তথ্যমন্ত্রীর এপিএস মোহাম্মদ এমদাদুল হক ও শেখ শাহে আলম তালুকদারকে আসামি করার কথা বলা হয়েছে আর্জিতে।

নারী উন্নয়ন নীতি ও শিক্ষা নীতির বিরোধিতা করে ২০১০ সালে গড়ে উঠেছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তবে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ আন্দোলনের পাল্টায় রাজপথে নেমে সংগঠনটি বেশি পরিচিতি পায়।

শাহবাগের আন্দোলনের বিপরীতে বস্নগারদের শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে সমাবেশ ডাকে সংগঠনটি। সেই সমাবেশ ঘিরে পুরো মতিঝিল এলাকায় ব্যাপক সহিংসতা আর তান্ডব চলে। পরে সেই রাতে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের মতিঝিল থেকে সরানো হয়।

মামলার আবেদনে বলা হয়, 'ওই রাতে শেখ হাসিনার মদদে অন্য আসামিরা রাস্তা ও বিদু্যৎ লাইন বন্ধ করে দিয়ে নিরীহ মাদ্রাসা ছাত্র ও পথচারীদের ওপর গণহত্যা চালায়। তারা সিটি করপোরেশনের গাড়ি এনে লাশগুলো অজ্ঞাত স্থানে গুম করে ফেলে।'

শাপলা চত্বরের অভিযানে ৬১ জন নিহত হন বলে সে সময় এক প্রতিবেদনে দাবি করে মানবাধিকার সংগঠন 'অধিকার'। যদিও পুলিশের দাবি, রাতের অভিযানে কেউ মারা যাননি, আর দিনভর সংঘাতে নিহতের সংখ্যাটি ১১।

অধিকারের প্রতিবেদনে প্রকাশিত সংখ্যাটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে ওই বছরের ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে জিডিটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।

ওই মামলায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে থাকা অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের দুই বছরের কারাদন্ড হয় গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর। এক মাস জেলে ধাকার পর তারা জামিনে মুক্তি পান।

আদিলুর রহমান খান বর্তমানে অন্তর্র্বর্তী সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন।

ঢাকায় দুই শিক্ষার্থী হত্যায় মামলা

এদিকে রোববার পুরান ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের দুই শিক্ষার্থী হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা হয়েছে।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) তরিকুল ইসলামের আদালতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাসরিন বেগম মামলাটি করেন। বাদীর অভিযোগ এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করার জন্য সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতের বেঞ্চ সহকারী সিরাজুল হক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌?মেদ, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক উপমহাপরিদর্শক সৈয়দ নুরুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আবদুলস্নাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপস্নব কুমার ও ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে।

জয়পুরহাটে হত্যা মামলা

জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থী নজিবুল সরকার (১৮) গুলিতে নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে আরেকটি মামলা দায়ের হয়েছে।

রোববার নিহতের বাবা মজিদুল সরকার বাদী হয়ে জয়পুরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১২৮ জনকে। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করতে জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুল মোমিন ফকির এ তথ্য জানিয়েছেন।

গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নজিবুল সরকার নিহত হন। তিনি পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর গ্রামের মজিদুল সরকারের ছেলে। নজিবুল সরকার পাঁচবিবি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

নারায়ণগঞ্জে হত্যা মামলা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবুল হাসান স্বজন নামের একজন নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ ৪৮ জনের নাম উলেস্নখ করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২শ'।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সাত্তার টিটু মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, 'শনিবার রাতে নিহতের ভাই আবুল বাশার অনিক বাদী হয়ে মামলাটি করেন।'

মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আসামি করা হয়েছে- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান, শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান প্রমুখ।

মামলার অভিযোগে জানা যায়, গত ৩ আগস্ট বিকালে শেখ হাসিনাসহ শীর্ষনেতা ও মন্ত্রীদের নির্দেশে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দেশীয় অস্ত্র ও আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে শহরে মহড়া দিতে থাকে ও ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় মিশনপাড়া এলাকায় ছাত্র-জনতার অবস্থানকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় তারা। এতে অয়ন ওসমানের গুলিতে আহত হন স্বজনসহ অনেকে।

আহত অবস্থায় স্বজনকে ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ আগস্ট তার মৃতু্য হয়।

জামালপুরে যুবলীগের বিরুদ্ধে মামলা

ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলার অভিযোগে জামালপুর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ৩০৩ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে। শনিবার রাতে জামালপুর সদর থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ মিঠু মিয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় তিনজনের নাম উলেস্নখ করা হয়েছে। বাকিরা অজ্ঞাতনামা আসামি।

মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারহান আহম্মেদ, জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক শাহরিয়া ইসলাম ওরফে রাফি ও ছাত্রলীগ কর্মী নাফিজুর রহমান ওরফে তুষার।

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ মহব্বত কবীর বলেন, শনিবার রাতে থানায় মামলাটি হয়েছে। মামলা হওয়ার পর থেকে আসামিদের ধরতে পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে।

রংপুরে হত্যা মামলা

রংপুর প্রতিনিধি জানান, রংপুরে আব্দুলস্নাহ আল তাহির হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০ জনের নামে হত্যা মামলার আবেদন করেছেন নিহতের বাবা আব্দুর রহমান। রোববার দুপুরে বাদীর আইনজীবী কোতোয়ালি মেট্রোপলিটন চিফ আদালতে মামলার আবেদন করলে বিচারক এসএম আহসানুল হক শুনানি শেষে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ওসিকে মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।

জানা গেছে, আবু তাহির ঢাকায় বেসরকারি চাকরি করতেন। তিনি ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। ১৯ জুলাই রংপুর সিটি বাজারের সামনে সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পরাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন, সাবেক পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান প্রমুখ।

আইনজীবী এএসএম মাহমুদুল হক সেলিম বলেন, আমরা বিজ্ঞ আদালতে মামলাটি দাখিল করেছি। এ মামলা আদালত শুনানি শেষে থানাকে মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। আমরা চাই সুষ্ঠু বিচার চাই, জনগণের প্রত্যাশিত রায় হোক। এ মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে দুই শতাধিক।

নাটোরে হত্যা মামলা

ইয়াসিন ইসলাম (১৭) নামের এক কিশোরকে ঘরে আটকে রেখে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে নাটোরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলামসহ (শিমুল) ১১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রোববার দুপুরে নিহত ইয়াসিনের বাবা ফজের আলী বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

সদর থানার উপপরিদর্শক কৃষ্ণপদ রায় বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছুটিতে থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে অভিযোগটি মামলা হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মামলার এজাহারে শেখ হাসিনা, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরীকে প্রধান আসামি উলেস্নখ করা হয়।

এ ছাড়া উলেস্নখযোগ্য আসামিরা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোর্তুজা বাবলু, সাংগঠনিক সম্পাদক মালেক শেখ, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ মোস্তাক আলী, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, ওয়ার্ড কমিশনার জাহিদুর রহমান, আরিফুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলামের পিএস আকরাম হোসেন, সহোদর সাজেদুল আলম, তেবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উমর আলী।

রাজশাহীতে ৮২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

রাজশাহী অফিস জানায়, বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলা, গুলি ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ জাকিরুল ইসলাম সান্টু ও তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র খন্দকার সায়লা পারভিনসহ আওয়ামী লীগের ৮২ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। শনিবার রাতে বাগমারা থানায় মামলাটি দায়ের করে উপজেলার হামিরকুৎসা ইউনিয়ন যুবদল নেতা আব্দুল মতিন (৩২)। মামলায় ২২ জনের নাম উলেস্নখ করে ৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগের বরাদ দিয়ে বাগমারা থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, 'গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের আগে উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় তৎকালীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ জাকিরুল ইসলাম সান্টু ও তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র খন্দকার সায়লা পারভিন দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলা, বাড়িঘর ও দোকান পাট ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হাট-বাজারে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়াও ওইদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপজেলার ভবানীগঞ্জ এলাকায় বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীদের মারপিট ও গুলি করে জখম করে বলে মামলায় উলেস্নখ করা হয়েছে।'

ওসি বলেন, 'পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে। একইসঙ্গে আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। আশা করছি দ্রম্নত আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে