আরও ৬ মামলায় আসামি ৩৮১

এর মধ্যে চট্টগ্রামে হাসিনা ও নওফেলকে আসামি করে হত্যা মামলা

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
দেশের পাঁচ জেলায় আওয়ামী লীগের আরও ৩৮১ নেতাকর্মীর নামোলেস্নখ করে ৬ মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে সদ্য ক্ষমতাচু্যত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাছান চৌধুরী নওফেলসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে দায়ের করা হয়েছে হত্যা মামলা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে বাধা, হামলা, হত্যা ও বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় এসব মামলা দায়ের করা হয়। চট্টগ্রাম ছাড়া অন্য জেলার মধ্যে ঢাকার আশুলিয়ায় সাবেক দুই এমপিসহ আসামি করা হয়েছে ১১৯, নাটোরে সাবেক এমপিসহ দুই মামলায় ৬২, দিনাজপুরে সাবেক নৌপ্রতিমন্ত্রীসহ ২৭ ও কক্সবাজারে সাবেক হুইপ ও এমপিসহ আসামি করা হয়েছে ১৫০ জনকে। এসব মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও প্রায় দুশ'। চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা চট্টগ্রাম বু্যরো জানায়, চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে কলেজছাত্র তানভীর ছিদ্দিকী (১৯) নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাছান চৌধুরী নওফেলসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে নগরের চান্দগাঁও থানায় নিহত ছাত্র তানভীর ছিদ্দিকীর চাচা মোহাম্মদ পারভেজ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তানভীর হত্যা মামলাসহ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ছয়টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি খুনের মামলা ও একটি অপহরণ মামলা। তবে তানভীর হত্যা মামলাটিই চট্টগ্রামে প্রথম মামলা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। শনিবার বিকালে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন চাঁন্দগাও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির। তিনি বলেন, গত ১৮ জুলাই নগরের বহদ্দারহাটে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গুলিবর্ষণের ঘটনায় তানভীর নামে এক কলেজছাত্র নিহত হন। এ ঘটনায় হত্যার অভিযোগ এনে নিহতের চাচা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওসি জাহিদুল কবির বলেন, মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীসহ ৩৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে। মামলাটি তদন্ত করার জন্য পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ছাবেদ আলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা ও নওফেলসহ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের চার নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসরারুল হক, জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, চকবাজারের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু, আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া উপ-কমিটির সদস্য আজিম রনি, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা বাবর আলী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মহিউদ্দীন ফরহাদ, মো. দেলোয়ার, মো. জালাল, মো. ফরিদ, সিটি কলেজছাত্র সংসদের ভিপি মো. তাহসীন, সিটি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম \হআহ্বায়ক হোসাইন অভি, এইচ এম মিঠু, নুরুল আলম প্রকাশ কালা বদা, আরিফ ইফতেকার রশিদ, ওসমান গণি, থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইলিয়াছ বাবুল, মাইনুল ইসলাম শরীফ, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. জিয়াউদ্দীন আরমান, যুগ্ম সম্পাদক মনির উদ্দিন, যুবলীগ নেতা মো. ফিরোজ, মো। জাফর, জাফর আলম, মনছুর আবেদীন, আবুল হাসনাত, মোহাম্মদ সুমন উদ্দীন, বাঁশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজান সিকদার ও যুবলীগ নেতা মো. শোয়াইবসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। দিনাজপুরে খালিদ মাহমুদের নামে মামলা দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, সাবেক নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ ২৪ জনের নাম উলেস্নখ করে ও ৭৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বোচাগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় বোচাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আফসার আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যার পর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আফসার আলী ৫ আগস্ট তার বাসায় হামলার অভিযোগে থানায় মামলা করতে গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা তাকে আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। এ সময় তিনি ছাত্রজনতার চাপের মুখে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন। বোচাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু বক্কর সিদ্দিক রাসেল মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আটক উপজেলা চেয়ারম্যানকে ছাত্রদের মিছিলে হামলা করার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোর্টে চালান দেওয়া হয়েছে। বিচারক তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন। অন্য আসামি পলাতক রয়েছেন। আশুলিয়ায় ১১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যার দায়ে ঢাকা-১৯ আসনের (সাভার-আশুলিয়া) সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও তৌহিদ জং মুরাদসহ ১১৯ জনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আরও অনেককে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। শনিবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ এএফএম সায়েদ। এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় মামলাটি দায়ের করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আশুলিয়ার বাইপাইলে নিহত আস-সাবুরের চাচাতো ভাই সাহিদ হাসান ওরফে মিঠু। আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ এএফএম সায়েদ জানান, শুক্রবার রাতে ১১৯ জনের নাম উলেস্নখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আশুলিয়ার বাইপাইল মোড় এলাকায় গত ৪ ও ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীর হামলায় ৩৬ জনের মৃতু্য হয়। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধসহ আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও অনেকে। নাটোরে দুই মামলায় ৬২ আসামি নাটোর প্রতিনিধি জানান, নাটোর-২ আসনের (সদর-নলডাঙ্গা) এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলকে প্রধান আসামি করে ২ মামলায় ৩৮ জনের নাম উলেস্নখসহ অজ্ঞাত ২৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে সদর থানায় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন ও জেলা বিএনপির সদস্য সাইফুল ইসলাম আফতাব মামলা দুটি করেন। উভয় মামলায় সাবেক এমপি শিমুলের ছোটভাই সাজেদুল ইসলাম সাগর, তাদের ঘনিষ্ঠজন বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া নাটোর পৌরসভার কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ও অ্যাডভোকেট সায়েম হোসেন উজ্জ্বল এবং গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সদর উপজেলায় পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী যুবলীগ নেতা জামিল হোসেন মিলন ও তাদের সহযোগী নাটোরের তিন শীর্ষ সন্ত্রাসী কোয়েল, তার ছোটভাই কানন ও সেলিম ওরফে কুত্তা সেলিম এবং নলডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মাহতাব হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। নাটোর থানার ওসি মিজানুর রহমান মিজান মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। কক্সবাজারে ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজার শহরে ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে জেলার সাবেক হুইপ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌর মেয়রসহ ১৫০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় দিকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রকিবুজ্জামান। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য ও হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিনুল হক মার্শাল, তার ছোটভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী, পৌরসভার প্যানেল মেয়র সালাউদ্দিন সেতু, যুবলীগ নেতা ইশতিয়াক আহমেদ জয়, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি হাসান তারেক, সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামসহ দেড় শতাধিক নেতাকর্মী।