আজকের যায়যায়দিন

অন্তর্ভুক্তিমূলক, বহুবচনবাদী গণতন্ত্র রূপান্তর নিশ্চিত করতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে সরকার প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ বলে জানিয়েছেন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শনিবার তৃতীয় ভয়েস অব গেস্নাবাল সাউথ সামিটে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা জানান। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন, বিচার, স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যম, অর্থনীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার করা অন্তর্র্বর্তী সরকারের অন্যতম কাজ। এ ছাড়া দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সব স্তরে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, 'আপনারা সবাই জানেন যে, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ একটি 'দ্বিতীয় বিপস্নব'র সাক্ষী হয়েছে। আমাদের বীর ছাত্রদের নেতৃত্বে এবং জনসাধারণের সঙ্গে যোগদানের মাধ্যমে যা সম্ভব হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'আমাদের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ তরুণ। এরা সমাজের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অংশ। তারা আলাদা। তারা একটি নতুন বিশ্ব গড়তে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ।'

২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ড. ইউনূস মনে করেন, তরুণ ও শিক্ষার্থীরা সক্ষম এবং প্রযুক্তিগতভাবে তারা আগের প্রজন্মের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তরুণরা সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে

\হপারে। তারা উদ্যোক্তা। তারা যে কাজ চায়, তা উপভোগ করার কারণে নয়; বরং অন্য কিছু পাওয়া যায় না, তাই চায়। কারণ সব দেশের শিক্ষাব্যবস্থা তাদের চাকরির জন্য প্রস্তুত করে।

ড. ইউনূস বলেন, 'সব মানুষই সৃজনশীল জীব হিসেবে জন্মগ্রহণ করে। তারা স্বভাবজাত উদ্যোক্তা। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে শুধু চাকরিপ্রার্থী তৈরি ও তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য।' অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুন করে সাজাতে হবে। তিনি আশা করেন, তারা গেস্নাবাল সাউথে একসঙ্গে এটি করতে পারে। এটি দারুণভাবে সৃজনশীল তরুণ জনগোষ্ঠীসমৃদ্ধ।

সামাজিক ব্যবসার সঙ্গে উদ্যোক্তা সমন্বয় অলৌকিক কিছু ঘটাতে পারে উলেস্নখ করে ড. ইউনূস বলেন, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে তরুণ জনগোষ্ঠীর সৃজনশীলতা ও শক্তির বিকাশে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে তিনি গেস্নাবাল সাউথে কিছু সাধারণ সুযোগ-সুবিধার প্রস্তাব করতে চান।

ড. ইউনূস সব পরিবেশগত ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে সামাজিক ব্যবসা গড়ে তুলতে গেস্নাবাল সাউথের নেতাদের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তবে এটি একটি বিশাল শক্তি হয়ে উঠতে পারে।' তিনি বলেন, 'বুড়ো হওয়ার অর্থ এই নয় যে, আপনাকে অবসর নিতে হবে, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে হবে।'

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ গেস্নাবাল সাউথের নেতাদের ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন 'অন্যথায় আপনারা গুরুত্বপূর্ণ কিছু মিস করতে পারেন। ঢাকার বেশিরভাগ অংশ বিশ্বের গ্রাফিতির রাজধানীতে পরিণত হয়েছে।' তিনি বলেন, তরুণ শিক্ষার্থী এবং শিশুরা ৪০০ বছরের পুরনো এই শহরের দেয়ালে 'নতুন গণতান্ত্রিক' পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশের চিত্র দিয়ে রাঙিয়ে তুলছে।

ড. ইউনূস ইতিহাস উদ্ধৃত করে বলেন, ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য বাংলাদেশি ছাত্ররা প্রাণ দিয়েছিল। এটি সারা বিশ্বে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করেছিল। প্রায় সাত দশক পরে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় বিপস্নব গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মর্যাদা, সমতা এবং অংশীদারত্বমূলক সমৃদ্ধির জন্য তাদের কণ্ঠস্বর উত্থাপন করতে গেস্নাবাল সাউথজুড়ে যুবকদের অনুপ্রাণিত করছে। তিনি বলেন, 'আমি সবচেয়ে বয়স্ক 'তরুণ' হিসেবে এই বিপস্নবে অংশ নিতে পেরে এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। তাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। তাদের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।'

তিনি বলেন, 'আমার জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে দেখতে পাই, আমাদের আর্থিক ব্যবস্থা সম্পদ আত্তীকরণের বিষয়টি প্রচার করে। এক্ষেত্রে সবার সম্পদ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে আর্থিক ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে।'

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, 'সম্পদের একমুখী পথ থাকা উচিত নয়। আমাদের অবশ্যই সকল মানুষের, বিশেষ করে নারী ও যুবকদের জন্য আর্থিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারি যে, কীভাবে এটি সফলভাবে করা যায়। এই বিষয়ে বহু দেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এক্ষেত্রে আমার আরও এগিয়ে যেতে হবে।'

ভারতের নয়াদিলিস্নতে তৃতীয় ভয়েস অব দ্য গেস্নাবাল সাউথ সামিট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) ফোনালাপে সামিটে যোগ দেওয়ার জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানান নরেন্দ্র মোদি। তখন আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি সম্মেলনে যোগ দিতে রাজি হন প্রধান উপদেষ্টা।

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা থেকে এই বৈঠকে যোগ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এটাই অধ্যাপক ইউনূসের প্রথম বহুপক্ষীয় কোনো অনুষ্ঠানে যোগদান। রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান পর্যায়ে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।