উন্নত চিকিৎসার জন্য 'অতি শিগগিরই' বিদেশে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শুক্রবার সকালে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তথ্য জানান।
নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে বিএনপির দাবি দীর্ঘ দিনের। কিন্তু আইনি জটিলতার দোহাই দিয়ে এতদিন তার বিদেশ গমন ঠেকিয়ে রাখা হয়। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এক দিনের ব্যবধানে পাসপোর্ট হলে খালেদা জিয়ার বিদেশ গমনের আলোচনা ফের শুরু হয়। কাঙ্ক্ষিত এই বিদেশ যাওয়ার খবরকে দেশনেত্রীর জন্মদিনের সুসংবাদ হিসেবে অবহিত করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ''ম্যাডামের (বেগম খালেদা জিয়া জন্মদিন একটা সুসংবাদ দিতে চাই আমি। আলস্নাহ যদি রহম করেন ম্যাডাম অতি শিগগিরই বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাবেন। এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।"
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, 'এক মাস ১৬ দিন এভারকেয়ার হাসপাতালে আছেন ম্যাডাম। গত দুই দিন যাবত উনার অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল বলা যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তাকে থাকতে হয়। এখন সিসিইউর সুবিধা সমেত কেবিনে তার চিকিৎসা চলছে।'
বিদেশে মাল্টিপল সেন্টারে উনাকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য মেডিকেল বোর্ড সুপারিশের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, 'ফ্যাসিস্ট সরকার এটা কর্ণপাত করেনি। এখন সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসেছে, ম্যাডাম মুক্তি পেয়েছেন। আমরা এখন তাকে বিদেশে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।'
গত ৮ জুলাই থেকে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন। ৮০ বছর বয়সি খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন যাবত লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থাইটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। গত ২৩ জুন এভারকেয়ার হাসপাতালে তার হৃদযন্ত্রে 'পেসমেকার' বসানো হয়েছিল। এর আগে ২৩ সালের অক্টোবরে খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস রোগের চিকিৎসা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত জনস হপকিন্স হাসপাতালের তিন চিকিৎসক ঢাকায় এসে চিকিৎসা দেন।
খালেদা জিয়ার জন্মদিনে বিভিন্ন স্থানে দোয়া মাহফিল
বিএনপি নেতাকর্মীরা এক সময় ১৫ আগস্টে ঘটা করে কেক কেটে তাদের নেত্রীর জন্মদিন পালন করতেন। ২০১৬ সালে থেকে তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃতু্য দিন জাতীয় শোক দিবসের দিন দলীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি না দিয়ে পরের দিন মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করে আসছে। এবারেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। জন্মদিনের পরেরদিন শুক্রবার জন্মদিন উপলক্ষে নয়া পল্টনে বিএনপির উদ্যোগে মিলাদ মাহফিলে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি ও আশু সুস্থতা কামনা এবং চলমান আন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করে মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেসারুল হক। বিকালে গুলশান কার্যালয়ে দ্রম্নত সুস্থতা কামনায় দোয়ায় ভার্চুয়ালি অংশ নেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান। এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটি সদস্যগণ কেন্দ্রীয় নেতারা মহানগর নেতাসহ ও অঙ্গ সহযোগী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন থানায় নেতাকর্মীরা দোয়া মিলাদ ও তবারক বিতরণ করেন। বনানী থানা ও ২০নং বিএনপির উদ্যোগে দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন বনানী থানা বিএনপির আহ্বায়ক, সাবেক কমিশনার আবুল কালাম আজাদ, সাবেক বনানী থানার সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাচ্চু, ২০নং ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, ২০ ওয়ার্ডের সভাপতি আব্দুল সাত্তার, যুবদল আহ্বায়ক নজরুল, নাসির আহমেদ রতন প্রমুখ। এ ছাড়া ৩৫ ওয়ার্ডে হাতিরঝিল থানা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুনতাকিম সারোয়ার রিকি, ৬নং ওয়ার্ডে রায়হান হাসান সৌরভ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন।