দেশের গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর এবার আলোচনায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠন প্রসঙ্গ। কেননা প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে সূত্রপাত হওয়া বিক্ষোভ গণআন্দোলনে রূপ নেওয়ায় হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আলোচনা উঠেছে নতুন কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করবেন কিনা সমন্বয়করা। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
শুক্রবার বার্তা সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের সব জায়গায় সংস্কার আনতে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আলোচনা করছেন তারা। আগামী এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আন্দোলনে জড়িত এমন একাধিক সমন্বয়কের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্র্বর্তী সরকারের কাছে দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দাবি জানিয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা বলছেন, গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনা সরকার মানুষকে কঠিন দমন-পীড়ন চালিয়েছে। তারা আর এমন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি চান না।
রয়টার্স জানিয়েছে, তারা শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দলের নেতা এবং বিশ্লেষকসহ অন্তত ৩০ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ এবং আবু বাকের মজুমদার নামের তিন সমন্বয়কও রয়েছেন। আন্দোলন চলাকালে তাদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সরকার পতনের বিষয়ে আবু বাকের মজুমদার বলেন, তাকে অন্যায়ভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা আটক এবং মারধর করেছে। ফলে তিনি মুক্ত হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার সময় শেখ হাসিনা সরকারের পতনের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন।
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক নাঈম আবেদিন বলেন, ওই সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিংসতার ঘটনা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করে। তাদের জন্য তখন রাস্তায় নেমে আসা আমাদের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
তিনি বলেন, আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাজপথে নামার বিষয়টি টার্নিং পয়েন্ট ছিল। এ সময়ে অপ্রত্যাশিতভাবে অনেক অভিভাবকও আন্দোলনে যোগ দেন।
গত ১ জুলাই থেকে দেশে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন। এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংসতায় রূপ নেয়। ১৬ জুলাই সংঘর্ষে নিহত হন ছয়জন। ৫ আগস্ট পর্যন্ত এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ৪৩৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এর বাইরে গত ৬ আগস্ট পর্যন্ত আরও ১০৩ জনসহ দেশে মোট ৫৪২ জনের মৃতু্যর তথ্য পাওয়া গেছে। ৭ আগস্টও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাওয়া যাওয়া আরও ২৬ জনের মরদেহ, যা নিয়ে আগস্টের ৭ তারিখ পর্যন্ত আন্দোলনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৬৮।
এর আগে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
অন্তর্র্বর্তী সরকারে জায়গা করে নেন আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলাম। এ সরকার গঠনের পর থেকেই দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। কিন্তু আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও অন্তর্র্বর্তী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে দ্রম্নত নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। তবে তাদের এ দাবি আমলে নিচ্ছে না অন্তর্র্বর্তী সরকার।
আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকায় থাকা মাহফুজ আলম নামের এক শিক্ষার্থী জানান, দেশের মানুষ দুই রাজনৈতিক দলের ওপর ক্লান্ত-বিরক্ত। জনগণের আমাদের ওপর আস্থা রয়েছে। এজন্য নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে এক মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে তার আগে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে আলাপ করতে চান তারা।
তাহমিদ চৌধুরী নামের আরেক সমন্বয়ক বলেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। অসাম্প্রদায়িকতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা হবে এ দলের মূল ভিত্তি।
নতুন দল গঠন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, রাজনৈতিক ধারা পরিবর্তন হবে। কেননা এতদিন তরুণরা এ রাজনীতি থেকে বাদ পড়েছিলেন। তবে ছাত্রদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়নি।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে আমরা এখন অজানা নদীতে এসে পড়েছি। এই অন্তর্র্বর্তী সরকারের ক্ষমতা কেমন হবে তাও বলা যাচ্ছে না। কেননা এই সরকার আইন মেনে হয়নি।