বিচার দাবি মায়ের ডাকের সানজিদার

চাকরিচু্যত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ৮ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ছাত্র আন্দোলনে দোকান কর্মচারী শাহজাহান আলীকে হত্যার অভিযোগে চাকরিচু্যত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে শুক্রবার আদালতে হাজির করা হয় -ফোকাস বাংলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় দোকান কর্মচারী শাহজাহান আলীকে হত্যার অভিযোগে চাকরি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে ৮ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। শুক্রবার বিকালে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিবের আদালত এই আদেশ দেন। এদিন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার সাব-ইন্সপেক্টর মো. সজিব মিয়া তাকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তার ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে আসামি জিয়াউল আহসানের পক্ষের আইনজীবী নাজনীন নাহার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জিয়াউল আহসানের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকা থেকে জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিউমার্কেট থানায় এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ভুক্তভোগী শাহজাহান আলী নিউমার্কেট থানার মিরপুর রোডের বলাকা সিনেমা হলের গলির মুখে পাপোশের দোকানে কাজ করতেন। প্রতিদিনের মতো গত ১৬ জুলাই সকাল ৯টার দিকে দোকানে কাজ করার জন্য যান। ওই দিন সন্ধ্যায় অজ্ঞাতনামা একজন মামলার বাদীকে মোবাইল ফোন দিয়ে জানান যে শাহজাহান আলী গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য শাহজাহানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে ছেলের মরদেহ শনাক্ত করেন তিনি। একই মামলায় গত ১৪ আগস্ট সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তারের পর ১০ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। বিচার দাবি মায়ের ডাকের সানজিদার এদিকে, আলোচিত সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে শুধু গ্রেপ্তার নয়, বিচার-তদন্ত ছাড়া শত শত গুম-খুনে তার মতো জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার ও কমিশন গঠন করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম। তিনি বলেন, 'দেশে ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময় গুম হওয়াদের সন্ধান ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে আমরা তাকে (জিয়াউল আহসান) গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছিলাম। গত রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে শুধু গ্রেপ্তার করলেই হবে না, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতসহ প্রত্যেকটা গুম-খুনের গ্রহণযোগ্য তদন্ত করতে হবে।' বিতর্কিত সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান অসংখ্য লোকের ফোনে আড়িপাতা ও গুম-খুনে অভিযুক্ত। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরদিন ৬ আগস্ট তাকে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা দোকান কর্মচারী হত্যা মামলায় (৮ নম্বর মামলা) বৃহস্পতিবার রাতে তাকে খিলক্ষেত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার তথ্য ডিএমপি থেকে নিশ্চিত করার পর এক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন সানজিদা ইসলাম। মায়ের ডাক এমন সব পরিবারের একটি পস্ন্যাটফর্ম, যারা বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সরকারি সংস্থা কর্তৃক বলপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রিয়জনের ভাগ্যের পরিণতি জানার জন্য এ পস্ন্যাটফর্ম চালু করেন। তাদের স্বজনদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়ার পর তারা নিখোঁজ বা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। মায়ের ডাকের সমন্বয়ক বলেন, গুমে জড়িত জিয়াউল আহসানসহ জড়িত সবার বিরুদ্ধে শিগগিরই মামলা করা হবে। তিনি বলেন, 'আমরা অনেকবার গুম হওয়াদের সন্ধানের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছি। দ্বিতীয়বার দেশ স্বাধীনের পর গত কয়েকদিনে মাত্র তিনজন গুম হওয়া মানুষ বের হয়ে এসেছেন। কিন্তু আমরা বাকি ভাইদের ফেরত পাইনি। আমরা জানতে চাই আমাদের ভাইদের কী হয়েছে।' সানজিদা বলেন, অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের যারা উপদেষ্টা রয়েছেন তাদের কাছে দাবি, জিয়াউল আহসানের মতো যারা গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হোক। যারা আয়নাঘরের মতো বিভিন্ন জায়গায় এখনও বন্দি রয়েছেন তাদের মুক্ত করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। প্রত্যেকটা গুমের ঘটনাকে আলাদা করে বিচার করা হোক। তিনি বলেন, 'আমাদের দাবি, জাতিসংঘের অধীনে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে মানবতাবিরোধী, বিচারহীনভাবে গুম-খুনে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা হোক। এটা নিশ্চিত করা হোক, আর নতুন করে কেউ যেন গুম-খুনের শিকার না হন। এমন দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা হোক, যাতে নতুন করে কেউ যেন জিয়াউল আহসান হওয়ার সাহস না পায়।