খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মদিন আজ থাকছে না কোনো আনুষ্ঠানিকতা
প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মদিন আজ। গত কয়েক বছরের মতো এবারও খালেদা জিয়ার জন্মদিন দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়েই পালন করবে দলটি। জন্মদিনের এ লগ্নে বিএনপি প্রধান অসুস্থ হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গত ৬ আগস্ট মুক্তি পান খালেদা জিয়া। তাই এবারের জন্মদিনে খালেদা জিয়ার কারামুক্তিকে 'বড় উপহার' হিসেবে দেখছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। অবশ্য তারা বলছেন, খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে দারুণ অসুস্থ। তাকে সুস্থ করাই এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য। বেগম জিয়ার মুক্তির স্বাদ তারা তখনই পরিপূর্ণভাবে পাবেন, যখন বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারবেন।
জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করতে যাচ্ছে বিএনপি। তবে জন্মদিন পালনে কেক কাটাসহ আড়ম্বরপূর্ণ কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও শুধুমাত্র দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে জন্মদিন পালিত হবে। বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, জন্মদিনের পরদিন ১৬ আগস্ট শুক্রবার খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা এবং সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনায় সারাদেশের দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে দলীয় চেয়ারপারসনের জন্মদিন উপলক্ষে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সারাদেশের নেতাকর্মীদের কেক কাটাসহ কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা করতে নিষেধ করা হয়েছে। সবাইকে তার জন্য দোয়া করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, দলীয় এই নির্দেশনা প্রতিপালনে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং সেলও গঠন করা হয়েছে। সেলের সদস্যরা সারাদেশের নেতাকর্মীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন।
১৯৪৫ সালের এই দিনে তিনি দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে খালেদা জিয়া চতুর্থ। বাবা এস্কান্দর মজুমদার, মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। পৈতৃক নিবাস ফেনীর ফুলগাজী হলেও তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরে বাবার কর্মস্থলে। ১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে তৎকালীন সেনাকর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন বেগম খালেদা জিয়া। এ দম্পতির কোলজুড়ে ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর তারেক রহমান এবং ১৯৬৯ সালের ১২ আগস্ট আরাফাত রহমান কোকো জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৮১ সালের ৩০ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে বিপথগামী সৈন্যদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। এর পরপরই জিয়াউর রহমানের গড়া বিএনপির রাজনীতিতে আগমন ঘটে খালেদা জিয়ার। দলের নেতাকর্মীদের দাবির মুখে ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হন।
\হস্বৈরাচার এরশাদবিরোধী দীর্ঘ আপসহীন আন্দোলনের পর ১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এ পর্যন্ত তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন খালেদা জিয়া। ১৯৯৩ সালে তিনি সার্কের প্রথম মহিলা চেয়ারপারসন হন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট নির্বাচনে জয়লাভের পর তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। ওয়ান-ইলেভেনের পর মঈন-ফখরুদ্দীন সরকার ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তাকে কারাবন্দি করে। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কারাভোগ করেন তিনি। সেবার কারাগারে প্রথম জন্মদিন কেটেছে তার। কারাগারে থাকা অবস্থায় তার অনড় মনোভাবের কারণে 'মাইনাস টু ফর্মুলা' থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় ওই সরকার। পরে তারা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি কাঙ্ক্ষিত ফল না পেয়ে সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়। সেই থেকে সরকারি দলের দমন-পীড়ন ও মামলা-হামলার বৃত্তে বন্দি দেশের অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন বর্জন করে দলটি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রম্নয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা হয় বেগম জিয়ার।
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয় সরকার। তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশ যেতে পারবেন না, এমন শর্তে সাজা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই থেকে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। এর মধ্যে কয়েক দফায় লিভার সিরোসিস, হার্ট জটিলতাসহ নানা রোগে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। এখনো অসুস্থ থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।