শেখ হাসিনা পালায় না কোথায় গেল দম্ভোক্তি

প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

রংপুর, পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও ও সৈয়দপুর প্রতিনিধি
রংপুরের পীরগঞ্জে মির্জা ফখরুল
'গণঅভু্যত্থানে শেখ হাসিনা ভয়ে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছেন' বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'তিনি (শেখ হাসিনা) খুব বড় গলায় বলতেন, আমি পালাব না। আমি শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে, কোনোদিন পালাই না। কোথায় গেল এমন দম্ভ শুধু পালানো নয়, তাকে লেজ গুটিয়ে পালাতে হয়েছে।' বুধবার দুপুরে রংপুরের পীরগঞ্জের জাফরপাড়া দারুল উলুম বহুমুখী কামিল মাদ্রাসায় এক সম্প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রংপুরের জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সম্প্রীতি সমাবেশের আয়োজন করে পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'তারা হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গুম, খুন করেছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। তারা পালিয়ে গেলেও তাদের প্রেতাত্মারা এখনো রয়েছে। আমরা পরিষ্কারভাবে দাবি জানিয়েছি, যে সমস্ত পুলিশ এই হত্যাকান্ডর সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার করতে হবে। হাসিনার বিচার করতে হবে। হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্যদের লুটপাট ও খুনের বিচার করতে হবে। বিচার শুরু হয়েছে। আলস্নাহ করে দিয়েছেন। আলস্নাহর মাইর দুনিয়ার বাইর। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। তারা আজ নিজেরাই পালিয়েছে আর দেশের মানুষ জেগে উঠেছে।' ছাত্র-জনতার গণঅভু্যত্থানে ক্ষমতাচু্যত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গিয়ে চুপ করে বসে নেই মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, 'ভারত থেকে আবার চক্রান্ত শুরু করেছেন। দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চলছে, এই গুজব তুলে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন চক্রান্ত করছেন।' মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান- সবাই একসঙ্গে যে নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি, তাকে সুসংহত করার জন্য সম্প্রীতি সমাবেশ করছি।' তিনি বলেন, 'আবু সাঈদ বুকের রক্ত দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। যে ইতিহাস হচ্ছে, তরুণদের আত্মত্যাগের ইতিহাস। ফ্যাসিবাদি, খুনি সরকারের পতনের দাবিতে শত শত মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ যখন গণভবনের দিকে যাচ্ছিল তখন হাসিনা ভয়ে পালিয়ে গেলেন। পালিয়ে গেলেও চুপ করে বসে নেই। ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে।' সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, 'হাসিনার বিচার দাবিতে সব রাজনৈতিক দল আজ সমাবেশ করছে। হাসিনা শত শত মানুষকে হত্যা করেছে, গুম করেছে। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে। সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে হাসিনা একটা একনায়কতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র, ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল।' আবু সাঈদ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আবু সাঈদ একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তার মা-বাবার সঙ্গে দেখা করেছি। আজ তারা বাকরুদ্ধ। কথা বলতে পারছেন না। অনেক স্বপ্ন ছিল ছেলেকে নিয়ে। আবু সাঈদের মতো যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মত্যাগ সফল করতে আমাদের সবসময় সজাগ থাকতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।' এর আগে তিনি গাড়িবহর নিয়ে পীরগঞ্জের মদনখালী ইউনিয়নের জাফরপাড়া বাবনপুর গ্রামে এসে পৌঁছান। সেখানে তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন। পরে নিহতের পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু, রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, মহানগরের আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। 'দলের কেউ চাঁদাবাজি করলে কঠোর ব্যবস্থা' এর আগে বিএনপি' মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুর যাওয়ার পথে নীলফামারীর সৈয়দপুরে স্থানীয় বিএনপি কার্যালয়ে বুধবার সকাল ১১টার দিকে কর্মিসভায় যোগ দেন। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'দলের কেউ দখল, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি ও নির্যাতনমূলক কর্মকান্ড চালালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।' তিনি বলেন, 'এখন সময় সম্প্রীতির সোনার বাংলাদেশ গড়ার। দেশ নিয়ে এখনো গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ছাত্র-জনতার ওপর বর্বর হামলা চালানো সেই পলাতক আসামিরা দেশে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর ভর করেছে। এ অবস্থায় এখন হিন্দু সম্প্রদায়ের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব বিএনপির নেতাকর্মীদের। দেখিয়ে দিতে হবে আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশে বিশ্বাসী। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই বিএনপির কাছে নিরাপদ।' মহাসচিব আরও বলেন, 'এখন কঠিন সময়। দেশটাকে নতুন করে সাজাতে হবে। তাই, দয়া করে কাউকে কোনোরকম উচ্ছৃঙ্খলতা, কারো ওপর হামলা, আক্রমণ করতে দেবেন না। এমন কোনো কথা বলবেন না, যে কথাটা দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দেবে।' বিএনপিন সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা শাখার সভাপতি আলহাজ আব্দুল গফুর সরকারের সভাপতিত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- দলের সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা শাখার সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম জনি ও সুমিত কুমার আগারওয়াল, সাধারণ সম্পাদক শাহিন আকতার, সহ-সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন পাপ্পু, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রামাণিক, শাহিন আকতার, বিএনপি' নেতা সাবেক এমপি' আলহাজ শওকত চৌধুরী, প্রভাষক শওকত হায়াত শাহ, একরামুল হক, জিয়াউল হক জিয়া, যুবদল নেতা তারিক আজিজ প্রমুখ। সভা শেষে একটি মিছিল শহরের প্রধান-প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। 'সীমান্তে লোকজন জড়ো করার ঘটনা স্টেজ ড্রামা' এদিকে বুধবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের কালীবাড়ি এলাকার নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঠাকুরগাঁওয়ে গত ৫ আগস্ট থেকে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা রাজনৈতিক; এগুলো কোনো ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ঘটনা নয় বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, 'রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় দেশে কিছু না কিছু ঘটনা ঘটেই। কিন্তু এখানে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, যেটার জন্য এখানে (ঠাকুরগাঁওয়ে) সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতন হচ্ছে- এমন কথা বলা যাবে। একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে ও পতিত সরকারের লোকেরা বিভিন্ন ঘটনার নাটক সাজিয়ে, সেটা প্রচার করছে।' মির্জা ফখরুল বলেন, 'কয়েক দিন আগে বালিয়াডাঙ্গীতে তিন থেকে চারশ' লোককে সীমান্তে জড়ো করে দেখাতে চেয়েছিলেন যে সংখ্যালঘু লোকজন ভারতে চলে যেতে চাচ্ছেন। আমি গোয়েন্দাদের কাছ থেকে, প্রশাসনের কাছ থেকে জেনেছি, এটা ছিল স্টেজ ড্রামা। কারণ, ওই লোকগুলো সবাই খালি হাতে ছিলেন। তাদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যারা কেউ সঙ্গে নেই, কোনো ব্যাগও তাদের সঙ্গে নেই। তারা সীমান্তে গিয়ে বলছেন যে, "আমরা চলে যাব।" এটা একটা নাটক করে ওই পারে ধারণা দেওয়া যে আমরা এ দেশে নির্যাতিত হচ্ছি। তাই এ দেশে থাকব না। এটা সম্পূর্ণভাবে সাজানো একটা নাটক।' তবে দু-একটি জায়গায় বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে বলে স্বীকার করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'আপনারা দেখেছেন, আমাদের দলের লোকজন এসব ঘটনা প্রতিরোধে কীভাবে গোটা জেলায় ছুটে বেড়িয়েছেন। দল থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এসব ঘটনায় যদি দলের কারও জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে তাহলে দল থেকে তাকে সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার করা হবে।' এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমীন, পৌর বিএনপির সভাপতি পয়গাম আলী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আল মামুনসহ জেলা, উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।