১৫ আগস্টের সাধারণ ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত
প্রকাশ | ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঘোষিত ১৫ আগস্টের সাধারণ ছুটি বাতিল করা হয়েছে। মঙ্গলবার অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে ব্যাপক ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঘোষিত ১৫ আগস্টের সাধারণ ছুটি বাতিলের বিষয়টি মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদিত হয়।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ছুটি বাতিলের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
শেখ হাসিনার সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের দিন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করত।
সোমবার অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পৃথক বৈঠক হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। বিএনপি-জামায়াত ছাড়াও গতকাল গণতন্ত্র মঞ্চ, সিপিবি, বাসদ, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, এবি পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ও গণ-অধিকার পরিষদের দুই অংশের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের দিন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হবে কিনা, সে বিষয়ে আলোচনায় ভিন্ন ভিন্ন মত আসে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, কোনো কোনো দল ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস বাতিল করার কথা বলেছে। আবার কোনো কোনো দল জাতীয় শোক দিবস বাতিল না করার পক্ষে মত দেয়।
নাগরিক হিসেবে অধিকার চাইবেন : ড. ইউনূস
এদিকে, নিজেদের সংখ্যালঘু হিসেবে নয় বরং মানুষ হিসেবে দেশের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করে সাংবিধানিক অধিকার চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বিভিন্ন হামলার ঘটনায় দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করারও প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের
\হসঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এ আহ্বান জানান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এমন বাংলাদেশ আমরা করতে যাচ্ছি, যেখানে সবাই এক পরিবার। এটা হলো মূল জিনিস। এখানে পরিবারের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা, বিভেদ করার কোনো প্রশ্নই আসে না। আমরা মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ হিসেবে বিবেচিত নই; মানুষ হিসেবে বিবেচিত। আমাদের অধিকারগুলো নিশ্চিত হোক।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনারা যদি টেনে টেনে নিয়ে আসেন আমি অমুক, আমি তমুক, এটা আবার পুরনো জায়গায় চলে গেল। আপনারা বলেন যে আমি মানুষ, আমি বাংলাদেশের মানুষ, আমার সাংবিধানিক অধিকার এই, আমাকে দিতে হবে। সব সরকারের কাছে এটাই চাইবেন।
বিগত বছরগুলোয় দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে নষ্ট করা হয়েছে মন্তব্য করে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ইউনূস বলেন, সমস্ত সমস্যার গোঁড়া হলো আমাদের যত প্রতিষ্ঠান আছে সবকিছু পচে গেছে। এ কারণেই এই গোলমালগুলো হচ্ছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক করতে হবে।
তিনি বলেন, ন্যায়বিচার হলে কে বিচার পাবে না আমাকে বলেন। কোন ধর্মের, কোন জাতের, আইনে কি বলা আছে যে মুসলমান সম্প্রদায় হলে এই আদালতে হবে, হিন্দু সম্প্রদায় হলে ওই আদালতে যাবে। সবার জন্য আইন একটা, কার সাধ্য আছে সেখানে বিভেদ করে যে এ রকম একটা, ওই রকম একটা।
ড. ইউনূস বলেন, এটা এমন রোগ, মূলে যেতে হবে। আপনারা যদি বলেন আমাদের সংখ্যালঘুরা, এটা বললে মূল সমস্যা থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি। আমাদের বলতে হবে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেটা পেলে আমার বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটিই হলো আমাদের মূল লক্ষ্য।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সনির্বন্ধ অনুরোধ আপনারা বিভিন্ন খোপের (বিভেদ) মধ্যে চলে যাইয়েন না। এই খোপ হলে, খোপের মধ্যে মারামারি-কাটাকাটি লেগে যাবে। এক হয়ে আসেন। এক আইন, আমাদের আইনি অধিকার দিতে হবে। বলেন, আপনারা আইনি অধিকার পান না, বিচার হয় না। এটাই হলো আসল জিনিস। বিচারব্যবস্থা আমাদের দিকে তাকায় না, পুলিশ আমাদের দিকে তাকায় না। কারণ, আমি অধিকারটা আদায় করতে পারি নাই। আমাদের নীতিটা আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারি নাই।
ড. ইউনূস বলেন, যারা খোপ খোপ করতে আরম্ভ করবেন, তারাও মজা পেয়ে যাবে। ওই মজার খেলায় আমাদের আর নিয়ে যাইয়েন না। আমরা এসেছি, আমরা এক মানুষ, আমাদের এক অধিকার। এর মধ্যে কোনো পার্থক্য করা যাবে না।
সবার সহযোগিতা চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একটু সহযোগিতা করেন আমাদের, একটু ধৈর্য ধরেন। কি করতে পারলাম, কি পারলাম না সেটা পরে বিচার কইরেন। যদি না পারি আমাদের দোষ দেবেন।
এর আগে সনাতন ধর্মের ধর্মীয় নেতারা বিভিন্ন সময় তাদের ওপর হামলার কথা তুলে ধরেন। অন্তর্র্র্বর্তী সরকারপ্রধানের কাছে এসব সমস্যার স্থায়ী প্রতিকার চান তারা। ড. মুহাম্মদ ইউনূস অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে তাদের আশ্বাস দেন।