দিনাজপুরে পথসভায় মির্জা ফখরুল
আ'লীগের সঙ্গে কোনো আপস হতে পারে না
১৪ ও ১৫ আগস্ট সারাদেশে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি
প্রকাশ | ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
'আওয়ামী লীগ দেশে হত্যাকারীদের দল' মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'তাদের (আওয়ামী লীগ) দোসরদের নিয়ে আবার ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করছে। মানুষ হত্যাকারী শেখ হাসিনার নির্দেশে শত শত ছাত্র-সন্তান নিহত হয়েছে, আমাদের অনেক ছেলেরা আহত হয়ে হাসপাতালে পঙ্গু হয়ে আছে, কারো হাত নাই, কারো পা নাই। সেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের কোনো আপস হতে পারে না।'
মঙ্গলবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও যাওয়ার পথে দিনাজপুরের রানীরবন্দর ও দশমাইল মোড়ে খোলা জিপে দুটি পৃথক অনির্ধারিত পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ৬০ লাখ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। প্রায় ১ হাজার লোককে গুম করেছে, প্রায় ৩ হাজার লোককে হত্যা করেছে, হাজার হাজার লোককে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করেছে, আমি ১১ বার জেলে গিয়েছি।
আমাদের চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দর বাজারে উপজেলা বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত এক পথসভায় বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। সেখানে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমরা এক ভেল্কিবাজি, ভয়ানক, হত্যাকারী, ফ্যাসিস্ট, নিষ্ঠুর নির্যাতনকারী শাসক শেখ হাসিনার হাত থেকে মুক্তি
পেয়েছি।' এসময় তিনি যারা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। পাশাপাশি আহতদের প্রতি সহমর্মিতা কামনা করেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, 'কোনো লড়াই-সংগ্রাম একদিনের জন্য নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর অনেক নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে। আমরা তখন থেকেই তাদের এ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে আসছি। আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের ৬০ লাখ লোকের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে। আমাদের প্রায় ১ হাজার লোককে গুম ও ৩ হাজার লোককে হত্যা করেছে। বিভিন্ন সময় আমাদের হাজার হাজার লোককে গ্রেপ্তার করেছে। আপনাদের অনেকে অনেকবার জেলে গেছেন। আমিও আপনাদের সঙ্গে জেলে গেছি। আওয়ামী লীগ তাদের দোসরদের নিয়ে আবারও এ অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। শত শত ছাত্র-জনতার হত্যাকারীদের বিচার করতে হবে।'
পথসভায় দিনাজপুর-৪ আসনের সাবেক এমপি কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ আখতারুজ্জামান মিয়া, জেলা পরিষদের সদস্য চিরিরবন্দর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. নূর-এ-আলম সিদ্দিকী নয়ন, খানসামার ভাবকী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম তুহিন, গোয়ালডিহি ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন লিটন, দিনাজপুর জেলা নেতারাসহ খানসামা ও চিরিরবন্দর উপজেলার বিএনপি, ছাত্রদল, কৃষকদল, তাঁতীদল ও বিভিন্ন অঙ্গদলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কাহারোল (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার সৈয়দপুর বিমানবন্দর হতে ঠাকুরগাঁও যাওয়ার পথে দুপুর ১২টায় কাহারোল উপজেলার দশমাইলে কিছুক্ষণ পথসভায় বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।
বিএনপির মহাসচিব দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, 'আমাদের বিজয় হয়েছে কিন্তু বিএনপির সব স্তরের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে। মানুষের পাশে থেকে এই সরকারকে সহায়তা করতে হবে। কোনো প্রকার অন্যায় পেলে বিএনপির সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। এলাকার মন্দির, গির্জা ও হিন্দুদের বাড়িঘরে যেন কোনো হামলা না হয় আপনারা সজাগ থেকে প্রতিহত করবেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যদি কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এসময় কাহারোল, বীরগঞ্জ, বোচাগঞ্জ ও বিরল উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
১৪ ও ১৫ আগস্ট সারাদেশে
বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি
এদিকে, ১৪, ১৫ ও ১৬ আগস্ট সারাদেশে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে ১৪ ও ১৫ আগস্ট কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের সব দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে।
ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গণহত্যার বিচারের দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্মদিন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের জন্য ১৬ আগস্ট দোয়া অনুষ্ঠান হবে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য ফ্রন্টের এক সম্প্রীতি সমাবেশে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
রাজধানীর শাহবাগে অনুষ্ঠিত এই সম্প্রীতি সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ-সম্পাদক অপর্ণা রায়, কেন্দ্রীয় নেতা রমেশ চন্দ্র রায়, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক তরুণ কুমার দে প্রমুখ।
অন্যদিকে, জাতীয়তাবাদী যুবদল ও ছাত্রদলও দুই দিনের পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে যুবদল ১৪ আগস্ট ও পরদিন ১৫ আগস্ট সারাদেশের সব জেলা, মহানগর, থানা-উপজেলা ও পৌর ইউনিটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে ছাত্র-জনতাকে হত্যার 'নির্দেশদাতা' শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে সংগঠন দুটি এ কর্মসূচি ঘোষণা করে। ছাত্রদল ১৪ ও ১৫ আগস্ট শাহবাগে সমাবেশ এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে ১৬ আগস্ট দোয়া মাহফিল করবে।