অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছে জামায়াতে ইসলামী। সোমবার বিকাল ৫টায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ও কার্যালয় যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, 'নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। দেশের নানা বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা ধর্মীয় নাকি রাজনৈতিক কারণে হয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। ধর্মীয় কারণে হয়েছে বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না, রাজনৈতিক কারণেও হয়েছে। বিষয়গুলো
নিয়ে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে।'
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা এ প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন এ নিয়ে কথা হয়নি।
'তিনি বলেন, এখানে দলীয় কথা বলতে আসিনি। তবে কেউ নিষিদ্ধ করলেই আমরা নিষিদ্ধ হয়ে যাই না। তারা ভুল কাজ করেছে, যার মাশুল দেশবাসীকে দিতে হচ্ছে।'
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার দাবি
এদিকে, সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর দুষ্কৃতকারীদের হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। একই সঙ্গে শক্তিশালী কমিশন গঠনের মাধ্যমে দ্রম্নততম সময় হামলার বিচারও দাবি করেছে সংগঠনটি।
সোমবার বিকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কার্যালয়ে আয়োজিত হিন্দু-বৌদ্ধসহ ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জামায়াতের পক্ষ থেকে এসব দাবি উপস্থাপন করেন দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুলস্নাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেন, হিন্দুদের সুরক্ষায় জামায়াত দুটি দাবি নিয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম দাবি হলো- রাষ্ট্রীয়ভাবে হিন্দু সম্প্রদায়কে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো একটা দল বা কোনো একটা লোক দাড়ি-টুপি পরে লাঠি হাতে মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকাটা খুবই বেমানান দেখায়। আমরা মনে করি, এখন যেহেতু সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজে ফিরেছে, এখন সরকারের উদ্যোগে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। আমাদের দ্বিতীয় দাবি হলো- স্বাধীন কমিশন গঠন করে হিন্দুদের ওপর হামলা-নির্যাতনের বিচার দাবি জামায়াতের।
সৈয়দ আবদুলস্নাহ মো. তাহের বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে হিন্দুবিদ্বেষী দল বলে ধারণা করা হয়। এটা এক ধরনের অপপ্রচার ছাড়া কিছুই না। পাশাপাশি হিন্দুদের ব্যবহারেও একটি অপপ্রচার দেশে আছে, সেটি হলো হিন্দু মানেই মনে করা হয় আওয়ামী লীগ। জামায়াতকে যেমন হিন্দুবিরোধী অপপ্রচার দেওয়া হয়েছে, তেমনি হিন্দুদেরও আওয়ামী লীগের একটা ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য হিন্দুদেরও যেমন জামায়াতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধে কাজ করতে হবে, তেমনি জামায়াতকেও হিন্দু মানেই আওয়ামী লীগ 'তকমা' দূরীকরণে কাজ করতে হবে।
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, জামায়াত হিন্দুদের ওপর আঘাতে বিশ্বাস করে না। আঘাত হিন্দু হোক, মুসলমান হোক দুই ধর্মেই নিষিদ্ধ। আমি নিজে হিন্দু অধু্যষিত এলাকার এমপি ছিলাম। আমাকে হিন্দুরাও অনেক ভোট দিয়েছিল, তারা আমাদের বিশ্বাস করে। আমাদের ওপর তাদের পুরোপুরি আস্থা আছে। এটা আমার আদর্শিক দায়িত্ব।
হিন্দু-বৌদ্ধসহ অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদের উদ্দেশে জামায়াতের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বাইরেও যদি আপনারা আপনাদের নিরাপত্তায় জামায়াতকে প্রয়োজন মনে করেন, রাত ৩টা বা ৪টা যেকোনো সময়ই আমাদের ফোন করবেন, আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়াব।