কুমিলস্না ও নোয়াখালীর বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করেছে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। সোমবার এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সারাদেশের মতো কুমিলস্নার বিভিন্ন থানা এবং পুলিশ লাইন্সে হামলা, ভাঙচুর ও অস্ত্র লুট হয়।
আনসার জেলা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আনসার ভিডিপি সদস্যরা এসব অস্ত্র উদ্ধারে কাজ শুরু করেন। সোমবার কুমিলস্না জেলা আনসার অফিসের তত্ত্বাবধানে ২৮টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৬৬৭টি গুলি, ১১টি খালি ম্যাগাজিন, হাতকড়া এবং চাবি উদ্ধার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে
কমান্ড্যান্ট রাশেদুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পরিত্যক্ত অবস্থায় ড্রেনের ভেতর, বনজঙ্গল থেকে খোঁজাখুঁজি করে এবং এলাকার মসজিদের মাইকে জানান দিয়ে মানুষকে উদ্বুব্ধ করে এসব অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্গে এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এসব অস্ত্র সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে কুমিলস্না পুলিশ লাইন্সে জমা দেওয়া হবে।
আনসার ভিডিপি কুমিলস্না রেঞ্জ পরিচালক আশীষ কুমার ভট্টাচার্য জানান, কুমিলস্নার পাশাপাশি নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুরে বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার, থানা পাহারা এবং ট্রাফিকিংয়ের কাজে আনসার ভিডিপির সদস্যরা সচেষ্ট রয়েছেন।
নোয়াখালীতে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার
স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী জানান, নোয়াখালীতে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা চাটখিল ও সোনাইমুড়ি থানা থেকে লুণ্ঠিত বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করেছেন।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে এসব অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অন্যান্য মালামাল আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী নোয়াখালী জেলা কমান্ড্যান্ট কার্যালয় থেকে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর কাছে এসব অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অন্যান্য মালামাল হস্তান্তর করেন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ১৮ আনসার ব্যাটালিয়ন পরিচালক ও নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ের কমান্ড্যান্ট (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রোকসানা বেগম।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এসব অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অন্যান্য মালামাল গ্রহণ করেন ১৬ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, নোয়াখালী আর্মি ক্যাম্পের উপ-অধিনায়ক মেজর রিফাত আনোয়ার।
সোনাইমুড়ি থানার উদ্ধার হওয়া অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অন্যান্য মালামালের মধ্যে রয়েছে- ৭.৬২ মি.মি রাইফেল ১টি, পিস্তল ২টি, পাইপগান ১টি, পিস্তলের গুলি ১১ রাউন্ড, ৭.৬২ মি.মি রাইফেলের বুলেট ৬৩৫ রাউন্ড, রাবার কার্তুজ ৬৭টি, সীসা কার্তুজ ১২টি, হ্যান্ডকাপ ৩ সেট, টিয়ারশেল ৭টি ও সাউন্ড গ্রেনেড ৪টি।
চাটখিল থানার উদ্ধার অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অন্যান্য মালামালের মধ্যে রয়েছে- শর্টগান ৫টি, ৭.৬২ মি.মি এসএমজি ১টি, সীসা কার্তুজ ২০টি, ৭.৬২ মি.মি রাইফেলের বুলেট ১২০ রাউন্ড, ৭.৬২ মি.মি এসএমজি ম্যাগাজিন ১টি, টিআরশেল ৩টি, হ্যান্ডকাপ ৪ সেট, ওয়ারলেস ১টি, ট্রাফিক সিগনাল লাইট ১টি, ওয়াকি টকির ব্যাটারি ১টি, হ্যান্ড মাইক ১টি, ল্যাপটপ ২টি, কীবোর্ড ১টি এবং মাইচ ১টি।
উদ্ধার করা অস্ত্র ও গোলাবারুদ হস্তান্তরের সময় আনসার ব্যাটালিয়নের নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ের কমান্ড্যান্ট (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রোকসানা বেগম বলেন, গত ৫ আগস্ট চাটখিল ও সোনাইমুড়ি থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর লুণ্ঠিত অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অন্যান্য মালামাল বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার করেছে। উদ্ধার অভিযান চলমান থাকবে। পাশাপাশি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন থানা পাহারা, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজসহ এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবে বলে জানান তিনি।