সড়কে ফিরেছে ট্রাফিক পুলিশ সঙ্গে আছেন ছাত্র-জনতা

চট্টগ্রামে ফুল দিয়ে বরণ

প্রকাশ | ১৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সরকার পতনের আন্দোলনের আগে পরে হামলায় সড়ক থেকে উধাও হয়ে যাওয়া ট্রাফিক পুলিশের ফিরে আসা সদস্যদের মনোবল চাঙা করতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও চেষ্টা করছে। সোমবার ঢাকার অধিকাংশ রাস্তায় ছাত্রদের সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। ছাত্র-জনতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। দায়িত্ব পালনকালে যাত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত ভালো আচরণ করতেও দেখা গেছে তাদের। এমন আচরণ অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন ছাত্ররা। একই সঙ্গে ট্রাফিক আইন মেনে যাতে গাড়ি চলাচল করে, তা নিশ্চিত করতে ট্রাফিক পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্র-জনতা। সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই চোখে পড়েছে। এদিন ঢাকার আগারগাঁও, বিজয় সরণি, চন্দ্রিমা উদ্যান, হাতিরঝিল চার রাস্তার মোড় ও সাতরাস্তা মোড়েও ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। জানা গেছে, সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় আগের মতোই দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। যদিও অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলকভাবে কম। এছাড়া অধিকাংশ সার্জেন্ট ও ট্রাফিক ইন্সপেক্টররাও কাজে যোগ দিয়েছেন। তাদেরও বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। যদিও সার্জেন্টদের গাড়ির কাগজপত্র যাচাইবাছাই, ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখা ও যানবাহনে তলস্নাশি করতে দেখা যায়নি। তারা শুধু ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবলদের যানজট নিরসনে এবং নির্দিষ্ট লেনে যানবাহন চলাচল সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন। ঢাকার আগারগাঁও চৌরাস্তা মোড়ে দেখা গেছে অন্যান্য দিনের মতোই ছাত্ররা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের যানজট নিরসনসহ নির্দিষ্ট লেনে যানবাহন চলাচলে নানাভাবে সহায়তা করতে দেখা গেছে ছাত্র-জনতাকে। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা যানবাহন চলাচল বা বন্ধ করার কাজটি ইশারা দিয়ে বুঝাচ্ছিলেন। তাদের এমন ইশারা অনুযায়ী ছাত্র-জনতা যানবাহন চলাচলে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছিলেন। সরেজমিন আরও দেখা গেছে, আগারগাঁও চৌরাস্তা মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দুইজন সার্জেন্ট। তাদের সঙ্গে ৮ থেকে ১০ জন ছাত্র ছাড়াও কোস্টগার্ড, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের দেখা গেছে। ছাত্ররা প্রতিটি রাস্তার লেনগুলোতে দাঁড়িয়ে থেকে যানবাহনগুলোকে নির্দিষ্ট লেনে চলতে অনুরোধ করছেন। এক লেনের গাড়ি আরেক লেনে ঢুকে পড়লে তা দ্রম্নত সামাল দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে বিজয় সরণিসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি যানজটপ্রবণ সড়কে। বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা ছাত্র-জনতার সঙ্গে কাজ করলেও রাস্তায় বিকল হয়ে পড়া যানবাহন সরানোর জন্য কোনো রেকার দেখা যায়নি। যে কারণে রাস্তায় কোনো গাড়ি বিকল হয়ে পড়লে তা ঠেলে রাস্তার এক পাশে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যেতে দেখা গেছে ছাত্র-জনতাকেই। যদিও বিকল যানবাহন সরানোর জন্য ট্রাফিক পুলিশের রেকার রয়েছে। সোমবার ঢাকার আগারগাঁও, বিজয় সরণি, চন্দ্রিমা উদ্যান, ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগ, সাতরাস্তার মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রেকার দেখা যায়নি। ঢাকার সার্বিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের অধিকাংশ সদস্যই কাজে যোগ দিয়েছেন। যদিও ঢাকার সব গুরুত্বপূর্ণ স্পষ্টগুলোতেই ট্রাফিক পুলিশকে দৃশ্যমান রাখা হয়েছে। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট কম। নানা কারণে সোমবার পর্যন্ত প্রয়োজনীয়সংখ্যক ফোর্স মোতায়েন করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে যাত্রাবাড়ীতে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যাত্রাবাড়ীর কিছু কিছু রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম চলছে। তবে সব সড়কে বা স্পটে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশের সদস্য মোতায়েন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান বলছেন, আশা করছি মঙ্গলবার ও বুধবারের মধ্যেই ঢাকার সব জায়গায় ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম শতভাগ চালু হবে। তখন বিকল যানবাহন সরানোর কাজে ব্যবহৃত রেকারসহ পুলিশের অন্যান্য প্রয়োজনীয় গাড়িও রাস্তায় থাকবে। এমনকি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আগের মতোই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সোমবার পর্যন্ত ঢাকার ৮০ ভাগেরও বেশি স্পটে ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে অবশ্যই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আরও ভালো ও উন্নত হবে। পুলিশ সদস্যদের যাত্রী, চালক থেকে শুরু করে সব স্তরের মানুষের সঙ্গে পেশাদার ও সুন্দর আচরণসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার নির্দেশনা দিয়েই মাঠে নামানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন পুলিশ সদস্যদের রোববার-বৃহস্পতিবারের মধ্যে কাজে যোগ দেওয়ার আলটিমেটাম দেন। এমন ঘোষণার পরপরই রোববার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয় উপদেষ্টার। এরপর রাতেই পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন। সোমবার সকালেই তারা কাজে যোগ দেন। গত ৫ আগস্ট ব্যাপক গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। পতনের পর থেকেই সারাদেশে পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। দেশের সাড়ে ৫ শতাধিক থানায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাজনিত কারণে আতঙ্কে পুলিশ অনেকটাই আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা ছাত্র হত্যার জন্য কতিপয় সুবিধাভোগী সিনিয়র কর্মকর্তাদের দোষারোপ করেন। একই সঙ্গে তারা দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তারা জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। সেই ধারাবাহিকতায় গত ৬ আগস্ট থেকে পুলিশ কর্মবিরতি পালন করছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্ররা রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব নেন। তারা নিজ উদ্যোগে রাস্তায় নেমে দিন-রাত এক করে ট্রাফিক পুলিশের কাজ করতে থাকেন। চট্টগ্রামে ফুল দিয়ে বরণ চট্টগ্রাম নগরীর সড়কগুলোতে এক সপ্তাহ পর দায়িত্বে ফিরেছে ট্রাফিক পুলিশ। এসময় তাদের রজনীগন্ধা দিয়ে বরণ করেন শিক্ষার্থীরা। ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতা করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদেরও। সোমবার সকাল থেকে দায়িত্ব পালনে নামেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। নগরের আগ্রাবাদ, টাইগারপাস, ওয়াসা, লালখানবাজার এবং জিইসি মোড় এলাকায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে দেখা যায় তাদের। সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পুলিশ সদস্যরা রাস্তায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা যখন রাস্তায় নেমেছেন তখন তাদের আলিঙ্গন করে স্বাগত জানান ছাত্র-জনতা। তাদের পানিসহ খাবার সরবরাহ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আব্দুলস্নাহ আল নোমান, আবদুল ছবুর ও অমিত চৌধুরী যায়যায়দিনকে বলেন, 'আজকে (সোমবার) থেকে আমরা কাজে যোগ দিয়েছি? নগরীর পাঁচটি পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। এক সপ্তাহ ধরে আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালোভাবেই ট্রাফিক ব্যবস্থা সামলেছে। তাদের নিয়ে গর্ববোধ করছি।' বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, 'চট্টগ্রাম নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে এখন ট্রাফিক পুলিশ রয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিও আছেন। প্রতিটি থানায় দল গঠন করা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে। পুলিশের নিরাপত্তার জন্য কাজ করবে শিক্ষার্থীরা।' চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহমেদ জানান, সোমবার সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশের সদস্যরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। তারা আজ মঙ্গলবার থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ট্রাফিক পুলিশরা পুরো নগরীতেই কাজে নেমে পড়বে। প্রসঙ্গত, গত ১০ আগস্ট থেকে চট্টগ্রাম নগরের ১৬টি থানার সবগুলোতে ফিরেছে পুলিশ সদস্যরা। তবে কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১৫ থানায়। পতেঙ্গা থানার কার্যক্রম শুরু করতে নতুন ভবন খোঁজা হচ্ছে। এই থানার কার্যক্রম শুরু করতে আরও কয়েকদিন লাগবে বলে সিএমপির পক্ষ থেকে জানা গেছে।