শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে চায় বিএনপি

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -ফোকাস বাংলা

নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব বিষয় সমর্থন করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সময় দিতে চায় বিএনপি। এছাড়া এই সরকারকে সহায়তা করা প্রতিটি দেশপ্রেমিকের একমাত্র কর্তব্য বলেও মনে করে দলটি।

সোমবার বিকালে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের পর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। বিকাল ৪টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন 'যমুনা'য় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এই বৈঠক শুরু হয়। এক ঘণ্টার এই বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী কী করছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে অবহিত হন বিএনপি নেতারা। 'যমুনা' থেকে বেরিয়ে এসে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, 'ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মুক্ত পরিবেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম বিএনপির সঙ্গে বসেছে। আমরা দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কী কী করা যায় এ বিষয়ে মতামত দিয়েছি। তারা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন কী কী করেছে, কী কী করতে যাচ্ছে। এখন আমরা মনে করি, এই সরকারকে সহায়তা করা প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের একমাত্র কর্তব্য।'

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন,

'বাংলাদেশের অধিকার হরণ করে নেওয়া সেই মহলটি পালিয়ে গিয়ে ভারতে অবস্থান নিয়ে আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের জনগণের বিজয়কে নস্যাৎ করার চক্রান্ত শুরু করেছে। এখানে তথাকথিত মাইনোরিটির ওপরে নির্যাতনের যে একটা গল্প ফাঁদা হয়েছে সেই গল্পটা পুরোপুরিভাবে উদ্দেশ্যমূলক, বাংলাদেশকে ম্যালাইন করা, সরকারকে ম্যালাইন করা, ছাত্র-জনতার বিপস্নবকে নস্যাৎ করে দেওয়ার আরেকটি চক্রান্ত।'

নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আমরা কথা বলিনি। আমরা আগেও বলেছি, একটা নির্দিষ্ট সময় লাগবে নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে। আমরা তাদের সেই সময়টি অবশ্যই দিয়েছি। আমরা তাদের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের) সব বিষয়গুলোতে সমর্থন দিয়েছি।'

তিনি বলেন, 'আমরা একটা কথা খুব পরিষ্কার করে বলেছি যে, বর্তমানে দেশে যে অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে, সাম্প্রদায়িকতার ধোঁয়া তোলা হচ্ছে এগুলোতে জনগণ যাতে বিভ্রান্ত না হয় এবং জনগণ ঠিক পূর্বের মতোই সেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে অক্ষুণ্ন রেখে, তাদের নিরাপত্তাকে অক্ষুণ্ন রেখে তারা যেন সরকারকে সহায়তা করে এবং আমরাও পুরোপুরিভাবে তাদের সেইভাবে সহায়তা করছি।'

দেশের স্বার্থবিরোধীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার উলেস্নখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, এতো হত্যা, এতো নির্যাতন, এতো নিপীড়ন, এতোগুলো ছাত্র হত্যা করার পরও সেই দলটি (আওয়ামী লীগ) আবারো বিভিন্নরকমভাবে কথা বলছে যা বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে। বিএনপি মনে করে সরকারের এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সরকার অবশ্যই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলবে। কিন্তু হত্যাকারীর সঙ্গে যারা ছাত্রদের হত্যা করেছে, যারা শিশুদের হত্যা করেছে, যারা রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করেছে তাদের বিরুদ্ধে জনগণ আছে এবং এই ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে গেলে আমরা সরকারকে অবশ্যই সমর্থন দেব।'

বিএনপির বৈঠকের পর ৫টায় জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে করেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপর এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদের দুই অংশের সঙ্গেও যৌথ বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

পরাজিতরা চক্রান্ত করছে :ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ছাত্র-জনতার বিপস্নব ব্যর্থ করতে পরাজিতরা চক্রান্ত করছে। তা প্রতিরোধে জনগণকে সজাগ থাকতে হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকোর ৫৫তম জন্মদিন উপলক্ষে সোমবার সকালে বনানী কবরস্থানে তার কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর তিনি একথা বলেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমে বলেছেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ দিতে রাজি হননি বলেই তাকে ক্ষমতাচু্যত করা হয়েছে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'বাকোওয়াজ। নিজে যখন ব্যর্থ হন সেই তখন অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো তাদের একটা বৈশিষ্ট্য। শেখ হাসিনা বলুন, অন্যান্যরা বলুন সবাই এখন এটাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। জনগণের কাছে আবেদন, আপনারা কেউ বিভ্রান্ত হবেন না।'

জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা আশা প্রকাশ করছি, নতুন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তারা সমর্থ হবে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে। অনুরোধ থাকবে, অতি দ্রম্নত নির্বাচনের জন্য একটা ক্ষেত্র তৈরি করা এবং সব বিপদগুলোকে কাটিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা মুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণ করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।'

ভারতীয় কিছু গণমাধ্যমে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এসব ভ্যাক প্রোপাগান্ডা। বাংলাদেশের এই গণজাগরণ এই অভু্যত্থানকে নস্যাৎ করার জন্য, ব্যর্থ করার জন্য এই যে নতুন গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন যে সরকার তাকে ব্যর্থ করার জন্য তারা এই মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে।'

ক্রীড়া ক্ষেত্রে আরাফাত রহমান কোকোর ভূমিকার প্রশংসা করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, 'আমরা সবাই জানি, কোকোকে অত্যাচারে-নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছিল। দেশের বাইরে চলে যেতে হয়েছিল ১/১১ সরকারের নির্যাতনের কারণে। বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন।'

বেলা ১১টায় বিএনপি মহাসচিব নেতাদের নিয়ে কোকোর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এই সময়ে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উলস্নাহ আমান, আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনার, কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শামীমুর রহমান শামীম, রফিক শিকদার, এসএম জাহাঙ্গীর, যুবদলের নুরুল ইসলাম নয়ন, ঢাকা মহানগর বিএনপির সাইফুল ইসলাম নিরব, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, তানভীর আহমেদ রবিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে