'সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য নির্বাচনের দিকে যাওয়া। নির্বাচনের মাধ্যমে এ সরকার সরে যাবে' উলেস্নখ করে অন্তর্র্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, এটা নিয়ে সন্দেহের কোনো সুযোগ নেই। আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে, স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। কিন্তু আমরা এখনই বলতে পারছি না যে, ঠিক কতদিন লাগবে। এটা নিয়ে আপাতত কোনো স্পেকুলেট না করি। আমরা কিছুদিন অপেক্ষা করি। এই পরিস্থিতি আসুক দেশের।
রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে করা এক ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা
নেওয়া হবে জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় কিছু বললে পদক্ষেপ নেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের মানুষ যেন ভাবে ভারত আমাদের বন্ধু। এ কাজে দিলিস্নও সহযোগিতা করবে ঢাকাকে।'
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। তিনি বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। এরই মধ্যে ছাত্র আন্দোলন দমনে অত্যাধিক বল প্রয়োগের অভিযোগে হতাহতের ঘটনায় তার বিচার চেয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয় বলেও মন্তব্য করে তৌহিদ হোসেন জানান, সোমবার সংখ্যালঘু নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, 'সংখ্যালঘুদের ওপর কিছু আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে রাজনৈতিক কারণেও ঘটেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। হয়তো আগামীকালই সংখ্যালঘু নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন প্রধান উপদেষ্টা। কোনো ধর্মীয় কারও ওপর নির্যাতন হলে তার তদন্ত ও বিচার সুনিশ্চিত করা হবে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।'
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগ এসেছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা গত কয়েকদিন ধরে শাহবাগসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভও করছেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, 'অন্তর্র্বর্তী সরকার ভারত ও আমেরিকাসহ সব দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক রাখতে চায়। দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাই প্রথম লক্ষ্য। আমাদের স্বার্থ রক্ষাই হবে প্রথম কাজ। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। এমন সম্পর্ক চাই, যেখানে দুই পক্ষই লাভবান হবে। সুষম সম্পর্ক চাই।'
ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলন সমর্থন করতে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাজা পাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের ফিরিয়ে আনতে অন্তর্র্বর্তী সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, 'আন্দোলনের সমর্থনে আরব আমিরাতে মিছিল করার কারণে যেসব বাংলাদেশি শ্রমিকদের জেল হয়েছে, তাদের মুক্ত করতে প্রধান উপদেষ্টা সেই দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্রম্নতই যোগাযোগ করবেন। বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বাড়ানোর বিষয়েও পদক্ষেপ নেবে এই সরকার।'
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এটা অস্বীকারের কিছু নেই। একজন যোগ্য ব্যক্তি অর্থনীতির দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি প্রচন্ডভাবে লেগেছেন। আশা করা যায় ১ থেকে ২ মাসে স্ট্রিমলাইনে নিয়ে আসবেন।'
তৌহিদ হোসেন বলেন, 'আপনারা জানেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদত্যাগ করেছেন। তার স্থলে নিয়োগ দিতে যোগ্য মানুষ খোঁজা হচ্ছে। এমন মানুষ পাওয়া খুব মুশকিল হয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি গভর্নর নিয়োগ দেওয়া যায় কিনা। ডেপুটি গভর্নর নিয়োগেরও চেষ্টা করছি।'
তিনি বলেন, 'আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে যিনি আছেন, তিনি আজ সারাদিন ব্যস্ত ছিলেন। পরিস্থিতির কিছু উন্নতি হয়তো আমরা ১ থেকে ২ দিনের মধ্যে দেখতে পাব। একজন বিদেশি সাংবাদিক আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরবে কিনা। অবশ্যই তারা ফিরবেন, এটা যাদের কাজ, তারা যখন ফিরবেন তখন শিক্ষার্থীরাও ফিরে যাবে।'
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্র স্মুথ করতে চাই। এখন পর্যন্ত পজিটিভ ইনডিকেশন পাচ্ছি। তাদের (বিদেশি) যেসব কনসার্ন, সেগুলো কিন্তু আমাদেরও কনসার্ন। মানবাধিকার নিয়ে কেউ কিছু বললে, সেটা তো আমাদেরও কনসার্ন।'
ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতা নিহতের তদন্ত হবে জানিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, 'প্রয়োজন হলে জাতিসংঘের সহায়তা নেওয়া হবে। বিভিন্ন দূতাবাসের কার্যক্রম শুরু করতে কাল (আজ সোমবার) কূটনীতিক বৈঠকে রাষ্ট্রদূতদের প্রতি আহ্বান জানানো হবে।'
এদিকে অন্তর্র্র্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন চলমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বি?ভিন্ন দে?শের রাষ্ট্রদূত/হাইক?মিশনারসহ জা?তিসংঘ এবং বি?ভিন্ন সংস্থাপ্রধান আজ ব্রিফ করবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।