শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

রাজধানীতে প্রচন্ড যানজট

যাযাদি রিপোর্ট
  ১২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ছিল তীব্র যানজট। ছবিটি প্রগতি সরণি নর্দা এলাকা থেকে তোলা -যাযাদি

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন থেকে ঢাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামা শিক্ষার্থীরা সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলেও রোববারের প্রথম কর্মদিবসে হিমশিম খেয়েছেন তারা। ফলে সকাল থেকে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। যার প্রভাবে দুপুরের পর গোটা রাজধানী অনেকটা অচল হয়ে পড়ে। ফলে বিকালের পিকআওয়ারে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরতে কর্মজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থীরা জানান, এতদিন ভলেন্টিয়ারের সংখ্যা অনেক বেশি থাকলেও রোববার তা আকস্মিক অনেকটাই কমে যায়। ফলে আগের মতো তারা প্রয়োজনীয় সব স্পটে ভলেন্টিয়ার নিয়োগ করতে পারেনি। এ ছাড়া টানা ৫ দিন দায়িত্ব পালন করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই তাদের অনেকে ডিউটিতে যোগ দিলেও ঠিকভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি।

তবে যানবাহন চালকরা বলছেন, সরকারের পট পরিবর্তনের পর থেকে ৪/৫ দিন সারাদেশে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করে। ফলে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউই তেমন ঘরের বাইরে বের হননি। এমনকি গণপরিবহণের সংখ্যাও ছিল খুবই কম। যা সামাল দিতে অনভিজ্ঞ শিক্ষার্থীদের খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসায় এবং রোববার প্রথম কর্মদিবস হওয়ায় নগরীর রাস্তায় যানবাহনের প্রচন্ড চাপ বাড়ে। যা সামাল দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এ কারণেই অলিগলি থেকে প্রধান সড়ক সর্বত্রই যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এ সংকট দিন যাওয়ার সঙ্গে পালস্না দিয়ে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই অতি দ্রম্নত ট্রাফিক পুলিশকে রাস্তায় নামানো জরুরি। তা না হলে শুধু যানজটে নগরী অচল হয়ে পড়বে তাই-ই নয়, সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই কল্যাণপুর থেকে নতুন বাজারের প্রশস্ত রাস্তাতেও ছিল তীব্র যানজট। বাজারটির

চৌরাস্তা মোড়ে স্থানীয় অগ্রদূত ক্লাবের নিরাপত্তারক্ষীদের পাশাপাশি ছাত্রদের যানজট নিরসনে কাজ করতে দেখা গেছে। একদিকের রাস্তা বন্ধ করে ছাত্রদের দৌড়ে গিয়ে আরেক রাস্তায় যানবাহন চলার ইশারা করতে দেখা যায়। মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের সামনেও ছিল একই অবস্থা। এখানকার চার রাস্তার মোড়ে অন্তত ১০ জন ছাত্রকে চৌরাস্তার প্রত্যেক মোড়ে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এছাড়া ছাত্ররা রাস্তায় পস্নাস্টিকের ডিভাইডার ও দিক-নির্দেশক ফেলে লেন তৈরি করেছেন। অনেক আগ থেকেই যানবাহনগুলোকে যার যার নির্ধারিত গন্তব্যের দিকে যেতে প্রয়োজনীয় লেনে যেতে বাধ্য করে। এতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি জমে যায়।

একই অবস্থা ছিল টোলারবাগ চৌরাস্তা মোড়েও। সেখানেও ৮ জন ছাত্রকে লেনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে। লোকাল বাসগুলো আচমকা মাঝখানের লেন থেকে একবারে রাস্তার বামদিকের লেনে চলে যাওয়ার কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মিরপুর-১ নম্বর চাইনিজ গলি, মিরপুর ফুটওভার ব্রিজেও একই অবস্থা। অনেক আগ থেকেই ছাত্ররা ফুলের টব দিয়ে লেন মার্কিং করে রেখেছেন। কিন্তু অনেকেই তা মানেননি। আচমকা তারা লেন পরিবর্তন করায় যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হতে দেখা গেছে। অনেকেই নিজের ভুলের জন্য ছাত্রদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। তবে হিউম্যান হলার ও ছোট ছোট যানবাহন বিশেষ করে থ্রি হুইলার, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কারণে কোনোভাবেই যেন যানজট নিয়ন্ত্রণে আসছিল না। অন্যান্য দিনের তুলনায় রোববার রাস্তায় তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যক্তিগত যানবাহন চলতে দেখা গেছে। যদিও গণপরিবহণের সংখ্যা ছিল স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশ কম। যেসব পাবলিক পরিবহণ নিয়ম না মেনে চলছিল, তাদের কাগজপত্র চেক করছিল ছাত্ররা। এ সময় অনেক চালক তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির যথাযথ কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের রাস্তার একদিকে রেখে মৌখিকভাবে সাবধান করেছে ছাত্ররা। খানিকটা এগুতেই মিরপুর নিউমার্কেটের সামনেও একই অবস্থা। গোলচত্বরের চার দিকে অন্তক ৫০ জন শিক্ষার্থীকে রাস্তায় বাঁশি বাজিয়ে ও লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে যানজট নিরসনের কাজ করতে দেখা গেছে। তবে এত কিছুর পরেও ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে কোনোভাবেই যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না শিক্ষার্থীরা।

মিরপুর স্টেডিয়ামের দিকে যেতেই দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা রাস্তার মার্কিং করা লেনের উপর খানিকটা দূরে দূরে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা নানাভাবে যানবাহনগুলোকে নির্দিষ্ট লেনে চলতে অনুরোধ করছেন। অধিকাংশ যানবাহন এমন নির্দেশনা মেনে চললেও, কিছু কিছু যানবাহনের চালক তা মানছিলেন না। যে কারণে রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। মিরপুর স্টেডিয়াম মোড়েও ছিল তীব্র যানজট। বিশেষ করে রাস্তার যেসব জায়গায় লেন ভাগ হয়েছে, সেসব জায়গায় সৃষ্টি হয়েছিল তীব্র যানজটের। কারণ ডান দিকের লেনে চলা যানবাহন আগে যাওয়ার জন্য বাম দিকের খালি লেন দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। ফলে বাম দিকের লেনগুলো বন্ধ হয়ে যায়।

মিরপুর হযরত শাহআলী মাজারের সামনেও ছিল তীব্র যানজট। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের দিকে যাওয়ার রাস্তাতেও একই অবস্থা দেখা গেছে। ছাত্ররা রাস্তার মাঝ বরাবর লেনে দাঁড়িয়ে থাকলেও অনেকেই তাদের নির্দেশ মানছিলেন না। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনেক যানবাহন চালকের বাকবিতন্ডা হয়।

অন্যদিকে দুপুরে মিরপুর মাজার রোডে পড়েছিল ভয়াবহ যানজট। মিরপুর-১ থেকে যাওয়া গাড়ি থেমে যায় মাজার রোডের মাথায়। অন্যদিকে সাভার ও গাবতলীর দিক থেকে আসা যানবাহনও থেমে যায় সেখানেই। এছাড়া বাম দিকে দুটি জ্বালানি তেলের পাম্প থেকে জ্বালানি নিতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এই যানবাহনের সারিটি পুরো রাস্তার বাম দিক বন্ধ করে রাখে। ফলে মাজার রোড থেকে শ্যামলী টেকনিক্যাল মোড় পর্যন্ত ছিল তীব্র যানজট।

মাত্র কয়েকগজ রাস্তা পার হতে সময় লাগে আধা ঘণ্টা। একই অবস্থা টেকনিক্যাল মোড় থেকে ঢাকা শিশুমেলা পর্যন্ত। এখানকার যানজট ছিল তীব্র থেকে তীব্রতর। এরই মধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির সঙ্গে রোদ আর গরমে মানুষের ভোগান্তি ছিল চরমে।

অন্যদিকে আগারগাঁও রেডিও অফিস থেকে পাসপোর্ট অফিসের সামনের রাস্তা পর্যন্ত ছিল ফাঁকা। তবে পাসপোর্ট অফিস থেকে আগারগাঁও চৌরাস্তা মোড় পর্যন্ত ছিল নজিরবিহীন যানজট। পুরো এলাকায় কাজ করছিল একশ' শিক্ষার্থী। তারা পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে করতে এক প্রকার ক্লান্ত হয়ে পড়েন। চৌরাস্তার মোড়ের যানজট প্রতিটি যানবাহন অন্তত ২০ মিনিট আটকে থাকে। এছাড়া বিজয় সরণি মোড়েও ছিল প্রচুর যানজট। ফলে অনেকেই গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে বসেছিলেন। তার উপর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর ভ্যাপসা গরমের মাত্রা যেন ক্রমেই বাড়ছিল।

এদিকে কারওয়ান বাজার এলাকার সড়কে ছিল তীব্র যানজট। সেখানে অন্তত আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে অধিকাংশ যানবাহনকে। এছাড়া সোনারগাঁও হোটেল থেকে শুরু করে বাংলামোটর হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট। ইস্কাটন নেভি ভবনের সামনেও দীর্ঘ যানবাহনের সারি দেখা গেছে। এছাড়া মিন্টো রোডের কর্নার থেকে শুরু করে প্রধান বিচারপতির বাসভবন, কাকরাইল, মৎস্য ভবন, সেগুন বাগিচা, সার্ক ফোয়ারা থেকে শুরু করে গুলিস্তান পর্যন্ত ছিল তীব্র যানজটে নগরবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এদিকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের ছিল অসহনীয় যানজট। রাস্তাটিতেও শিক্ষার্থীদের যানজট নিরসন করার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। এছাড়া সেগুনবাগিচা থেকে শুরু করে মগবাজার পর্যন্ত পুরো রাস্তায় ছিল ভয়াবহ যানজট। এ সময় বাংলাদেশ নৌ বাহিনী, আনসার ও ছাত্রদের যানজট নিরসনে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

\হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে