৯ বছর পর দেশে ফিরেছেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন

দ্রম্নতই ফিরবেন তারেকসহ আরও ২ ডজন নেতা

প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দীর্ঘ ৯ বছর পর দেশে ফিরেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরও দুই ডজনের বেশি নেতার দেশে ফেরার বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলছে। যতদ্রম্নত সম্ভব দেশে ফিরবেন তারা। রোববার দিলিস্ন থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে দুপুর ২-১৬ মিনিটে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান সালাহউদ্দিন আহমেদ। কয়েক হাজার নেতাকর্মী বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে তাদের প্রিয় নেতাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান দলের ভাইস চেয়ারম্যান রবকত উলস্নাহ বুলু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সরকারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে সালাহউদ্দিনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ ৬২ দিন নিখোঁজ থাকার পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। মেঘালয়ের পুলিশের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, সালাহউদ্দিন শিলংয়ে ঘোরাঘুরি করার সময় লোকজনের ফোন পেয়ে তাকে আটক করা হয়। সালাহউদ্দিনকে আটক করার পর বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। একই বছরের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযোগ গঠন করা হয়। সেই মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়। পাসপোর্ট না থাকায় সালাহউদ্দিন আহমেদ ট্রাভেল পাস (ট্রাভেল পারমিট) নিয়ে দেশে ফিরেছেন। তিনি এই ট্রাভেল পারমিটের জন্য গৌহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে আবেদন করেন। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সালাহউদ্দিন আহমেদের দেশে ফেরার পথ সুগম হয়। আইনি জটিলতা কাটিয়ে এবার তিনি নিজ দেশে ফিরলেন। নির্বাসন জীবন শেষে দেশে ফিরে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই বীরের জাতিকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। এখন একদিকে বহিঃশত্রম্নর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রকারীদের কাছ থেকে এই রাষ্ট্রকে হেফাজত করতে সবাইকে সর্তক থাকতে হবে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় দরকার, সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে হবে, সর্বস্তরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে, সব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে এবং সব গোষ্ঠীর সব ধর্ম-বর্ণ-দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সমভাবে সমদৃষ্টিতে দেখতে হবে। এ দেশের সবাইকে যেন বাংলাদেশি হিসেবে দেখি। তিনি বলেন, এই স্বাধীনতাকে, এই বিজয়কে অর্থবহ করতে হবে। এ দেশের সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক কাঠামোগুলো সুন্দরভাবে সংস্কার করে প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে এ দেশের জনগণকে উপহার দিতে হবে। এ দেশের জনগণ যাতে স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের এবং এই বিজয় দিবসের সুফল ভোগ করতে পারে, সে জন্য সর্বস্তরের জনগণকে আহ্বান জানাব, আপনারা ধৈর্য্য ধরুন, আপনারা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সালাহউদ্দিনের পর বিএনপির দুই ডজনের বেশি নেতা দেশে ফেরার জন্য অপেক্ষায় আছেন। এসব নেতাদের মধ্যে বেশিরভাগই আওয়ামী সরকারের অত্যাচারে দেশ ছাড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন। বিএনপি নেতারা জানান, বিগত ১৫ বছরে সরকারের হামলা-মামলা ও নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়ে বিএনপির প্রায় তিন ডজন নেতা দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়েছেন। এই তালিকায় থাকা নেতাদের অনেকে সাজাপ্রাপ্ত। এ অবস্থায় আইনি প্রক্রিয়া শেষ করেই নেতারা দেশে ফিরবেন। বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাড়াও বিভিন্ন সময় দেশ ছাড়ার তালিকায় থাকা নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, বিএনপির আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, তথ্য ও প্রযুক্তি-বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান, ক্ষুদ্র ঋণ-বিষয়ক সম্পাদক এমএ কাইয়ুম, সহ-আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, আনোয়ার হোসেন খোকন, নাজমুল আবেদীন মোহন, বেবি নাজনীন, প্রবাসী কল্যাণ-বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহাম্মদ আব্দুস সালাম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য গাজী শাহজাহান জুয়েল, শেখ সুজাত মিয়া, মোশারফ হোসেন, কয়ছর এম আহমেদ, আব্দুল লতিফ সম্রাট, মির্জা খোকন ও দারাদ আহমেদ প্রমুখ। বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অতি দ্রম্নতই দেশে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর তারেক রহমানের আইনজীবী ও বিএনপির আইন-বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, তারেক রহমান সর্বদাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো ছিল রাজনৈতিক। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব মামলা মোকাবিলা করা হবে। দ্রম্নত সময়ের মধ্যে দেশে ফেরার বিষয়ে কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ যায়যায়দিনকে বলেন, মিথ্যা মামলার জন্য দীর্ঘদিন তাকে বিদেশে থাকতে হয়েছে। কিছুদিন আগে তার একটি অপারেশন হয়েছে। এখনো শরীর অসুস্থ। সুস্থ হলেই দেশ ফিরবেন। একই বিষয়ে এমএ কাইয়ুম বলেন, মামলা-মোকদ্দমার কারণে বিদেশে চলে গিয়েও শান্তি পাননি। বিদেশে যাওয়ার পরও মামলা দিয়ে দেশে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আওয়ামী ষড়যন্ত্রের কারণে বিদেশেও জেল খাটতে হয়েছে। এ জন্য পাসপোর্ট নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছে। এই জটিলতা নিষ্পত্তি হওয়া মাত্র দেশে ফিরব। দারাদ আহমেদ বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ১/১১ প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করায় সরকারের রোষানলে পরে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। এবার যতদ্রম্নত সম্ভব, দেশে ফিরব।