ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টায় কর্মকর্তাদের ওপর হামলা, সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
রোববার সকালে ঢাকার মতিঝিলের দিলকুশায় ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধদের মধ্যে শফিউলস্নাহ সরদার, আবদুলস্নাহ আল মামুন, আব্দুর রহমান ও বাকিবিলস্নাহ ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকি দুজনের পরিচয় জানা যায়নি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পরদিন এস আলম গ্রম্নপের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বের করে দেন বিক্ষুব্ধ ব্যাংকাররা। এরপর গত ৭ ও ৮ আগস্ট ব্যাংকারদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এস আলম গ্রম্নপের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় বিপুল অঙ্কের ঋণ কেলেঙ্কারির প্রতিবাদ জানাতে রোববার সকাল সোয়া ১০টার দিকে তারা ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারের সামনে বিক্ষোভ করছিলেন।
এ সময় এস আলম গ্রম্নপের হয়ে কাজ করা কয়েকজন কর্মকর্তা শতাধিক লোক নিয়ে অস্ত্রসহ কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেন। পরে সেখানে সংঘর্ষ বেধে যায় এবং এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের এসএভিপি ড. শওকত আলী বলেন, 'আমরা জানতে পেরেছিলাম, এস আলমের নিয়োগকৃত কর্মকর্তারা ব্যাংক দখলের চেষ্টা করবে। সে জন্য আমরা সকাল থেকেই ব্যাংকের সামনে অবস্থান করছিলাম। পরে এস আলমের নিয়োগকৃত কর্মকর্তা ও বহিরাগতরা সিটি সেন্টারের সামনে থেকে আমাদের কর্মকর্তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে আমাদের ৬ জন ভাই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।'
কর্মকর্তারা ইসলামী ব্যাংকের
পর্ষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে 'লুটেরাদের' বের করে দেওয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল মাওলা, অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাউসার আলী, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আকিজ উদ্দিন, মিফতাহ উদ্দিনসহ এস সালাম গ্রম্নপের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়ার দাবি জানান তারা।
২০১৭ সালের জুন থেকে বাজার থেকে শেয়ার কিনে ব্যাংকটির মালিকানায় চলে আসে এস আলম গ্রম্নপ। ব্যাংকটির প্রায় অধিকাংশ শেয়ার কিনে নেয় তারা। এরপর দেশি-বিদেশি অনেক কোম্পানি ও ব্যক্তি শেয়ার ছেড়ে দিতে শুরু করেন।
ওই সময়ের পর থেকে নিয়োগপ্রাপ্তদের অবৈধ বলে এখন দাবি করছেন অন্য কর্মকর্তারা।
গোলাগুলিতে যারা জড়িত তাদের ছাড় দেওয়া হবে না : অর্থ উপদেষ্টা
এদিকে, ইসলামী ব্যাংকের দখল নিয়ে সংঘাত ও গোলাগুলিতে যারা জড়িত তাদের শিগগির আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, 'আমি নিজেও একসময় ম্যাজিস্ট্রেট ছিলাম। এসব ধরপাকড় কম করিনি।'
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, ইসলামী ব্যাংকের এ ঘটনার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলা হবে। যারা দোষী তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে মতবিনিময় সভার পর দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ব্যাংক থেকে টাকা তোলার ক্ষেত্রে সীমা আরোপ করা হয়েছে (দুই লাখ) এবং সেই সঙ্গে এটিএম বুথে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না, এসব কারণে মানুষ বিপাকে পড়েছেন। এ পরিস্থিতি কত দিন চলবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'টাকা নেই, তা নয়। এটা করা হয়েছে নিরাপত্তাহীনতার কারণে। এটিএম বুথেও হামলা হয়েছে, সে জন্য শঙ্কা ছিল। অর্থসচিব বিষয়টি দ্রম্নততার সঙ্গে দেখবেন।'
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, 'আমি তো জানি, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকাররা প্রতিদিন বড় ট্রাঙ্কে করে টাকা নিয়ে যান। কিন্তু এখন রাস্তা দিয়ে সেই টাকা পরিবহণ করা বিপজ্জনক। সে জন্য এটা করা হয়েছে। পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হয়ে আসবে।'
বৈঠকে কর্মকর্তাদের কী বার্তা দেওয়া হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করার কথা বলেছি। কোনো কিছু ফেলে রাখা যাবে না। সেই সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের কথা বলেছি।'
গভর্নর ও এনবিআর চেয়ারম্যানের নিয়োগ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'এখন গভর্নর নিয়োগের বিষয়ে চিন্তিত, এনবিআরের বিষয় ভিন্ন। চেয়ারম্যান তো প্রশাসন থেকেই আসেন। গভর্নর ও সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান শিগগিরই নিয়োগ দেওয়া হবে।'
গভর্নর নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন মানদন্ড বিবেচনা করা হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গভর্নর না থাকলেও ডেপুটি গভর্নররা কাজ চালিয়ে নিতে পারেন। পেমেন্ট সিস্টেমের জন্য তো গভর্নর প্রয়োজন হয় না।