সারাদেশের ৫৩৮ থানায় সীমিত কার্যক্রম শুরু
প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর রাজধানীসহ সারাদেশে ৫৩৮ থানার কার্যক্রম চালু হয়েছে। পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শনিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত সারাদেশের ৬৩৯ থানার মধ্যে ৫৩৮ থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে মেট্রোপলিটনের ১১০ থানার মধ্যে ৮৪টি এবং জেলার ৫২৯ থানার মধ্যে ৪৫৪টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর আগে সেনা পাহারায় সীমিত পরিসরে থানার কার্যক্রম শুরু হয় শুক্রবার থেকেই। এদিন ডিএমপির আওতাধীন ৫০ থানার মধ্যে ২৯ থানাসহ সারাদেশে ৩৬১ থানায় পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়। তবে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলো এখনো কার্যক্রম শুরুর উপযোগী হয়নি বলে জানা গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও প্রাণহানি হয়। শেষ তিনদিন (শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে-পরে) থানা, ফাঁড়িসহ পুলিশের বেশকিছু স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুলিশ সদস্যদের হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে থাকে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সারাদেশে পুলিশি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা প্রাণ বাঁচাতে চলে যান আত্মগোপনে। এতে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে শুরু করে। স্থাপনা পাহারা দেওয়ার জন্য আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়।
পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম ৭ আগস্ট বুধবার সব পুলিশ সদস্যকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্মস্থলে
যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরদিন তিনি পুলিশ সদস্যদের কর্মস্থলে যোগদানের ক্ষেত্রে আপামর জনসাধারণকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। তবে নিরাপত্তার অভাবে কোনো পুলিশ সদস্য এদিন থানায় যোগ দেননি। এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন শুক্রবার সেনা পাহারায় সীমিত পরিসরে সারাদেশে আবার শুরু হতে থাকে থানার কার্যক্রম।
চট্টগ্রামে শুরু ১৫ থানার কার্যক্রম
চট্টগ্রাম বু্যরো জানায়, মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ১৬ থানার মধ্যে ১৩টি ও জেলার ১৭ থানার মধ্যে ২টির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেনা সদস্যদের পাহারায় কাজে যোগ দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট বিকাল থেকে চট্টগ্রামের অধিকাংশ থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানা-পুলিশের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি। অনেক জায়গায় অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নথি লুট হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ে। এ অবস্থায় সরকারের কিছু উদ্যোগের ফলে পুলিশ সদস্যরা শুক্রবার থেকে কাজে যোগ দিতে শুরু করেন।
শনিবার নগরের কোতোয়ালি থানায় গিয়ে দেখা যায়, ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী থানা পরিচ্ছন্নের কাজ করছেন। তাদের সহযোগিতা করছেন সেনা সদস্যরা।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম ওবায়দুল হক যায়যায়দিনকে বলেন, 'আমাদের থানা পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। আপাতত দুটি রুমে থানার কার্যক্রম শুরু হবে।'
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, 'দু-একটি থানা বাদে আমাদের সব থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যেসব থানা বন্ধ আছে সেগুলোও চালুর চেষ্টা করছি। তবে আপাতত থানাগুলোতে সীমিত আকারে কার্যক্রম চলছে। পুরোপুরি কাজ শুরু হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। আমরা নাগরিকদের সব ধরনের সেবা প্রদানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ধীরে ধীরে সব থানার কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে।'
সিএমপির সূত্র জানায়, চালু হওয়া থানার মধ্যে আছে চান্দগাঁও, বায়েজিদ বোস্তামী, খুলশী, পাঁচলাইশ, সদরঘাট, চকবাজার, বাকলিয়া, পাহাড়তলী, আকবরশাহ, কর্ণফুলী, বন্দর, কোতোয়ালি ও হালিশহর থানা। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় উপকরণ সামগ্রীর অভাবে শুরু করতে পারেনি ডবলমুরিং থানার কার্যক্রম। তারা আজ রোববার থেকে থানার কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলে আশাবাদী। অন্যদিকে ইপিজেড থানার কার্যক্রম নিউমুরিং ফাঁড়িতে সীমিত পরিসরে শুরু হবে। নতুন ভবন খোঁজা হচ্ছে পতেঙ্গা থানার কার্যক্রম শুরুর জন্য।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলার ১৭টি থানার মধ্যে পটিয়া এবং চন্দনাইশ থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকি থানাগুলোর কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি চলছে। চট্টগ্রামে নগরী ও জেলা মিলে ৩৩টি থানা রয়েছে। এর মধ্যে জেলায় ১৭টি এবং নগরীতে রয়েছে ১৬টি।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম শফিউলস্নাহ বলেন, 'আমাদের বেশকিছু থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। থানাগুলোর মেরামতে কাজ চলছে। আমরা সীমিত আকারে দুটি থানার কার্যক্রম শুরু করছি। বাকি থানার কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি চলছে।'
দোহার ও নবাবগঞ্জ থানায় ফিরেছে পুলিশ
শনিবার সকাল থেকে সেনা সদস্যের সহায়তায় কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ থানার পুলিশ সদস্যরা। এতে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে স্বস্তি দেখা দিয়েছে।
এদিন সকালে নবাবগঞ্জ থানায় গিয়ে পুলিশ সদস্যরা কর্মস্থলে ফিরলেও কোনো কাজ শুরু করেননি। থানার ফটকে সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যরা পাহারায় আছেন।
নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহ জালাল বলেন, 'থানার অনেক জিনিসপত্র ও গাড়ি নষ্ট হয়েছে। এসব ঠিক করে কাজ করতে সময় লাগবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে সহায়তা করতে তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।'
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সব মহলের প্রতিনিধিদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করা হবে বলে জানিয়েছেন নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান।
এনায়েতপুর থানার কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা
এনায়েতপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, থানার কার্যক্রম না থাকায় বিভিন্ন স্থানে চুরি ডাকাতি ছিনতাই হচ্ছে। যারা প্রকৃত অপরাধী তারা এ সময় এসব সুযোগ নিচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের বিপদ আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় পুলিশ হেড কোয়ার্টারের অ্যাডিশনাল ডিআইজি সোয়াইব রিয়াজ আলম এনায়েতপুর থানার কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন।
শনিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানা পরিদর্শন শেষে উপস্থিত রাজনৈতিক ও পেশাজীবীদের নিয়ে সমাবেশ ও থানার কার্যক্রম নতুন করে শুরুর ঘোষণা দিয়ে এসব কথা বলেন।
এসময় রাজশাহী বিভাগীয় অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম মন্ডল, ক্যাপ্টেন সুদীপ্ত দাস, এনায়েতপুর থানা বিএনপির সদস্য সচিব মঞ্জুরুল আলম শিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রওশন আলী সরকার মন্টু, থানা জামায়াতের আমির ডা. মো. সেলিম রেজা, সাধারণ সম্পাদক ডা. মোফাজ্জল হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীরা ছিলেন।
এদিকে নতুন করে ওসি হিসেবে এনায়েতপুর থানায় যোগদান করেছেন হাসিব আলম। তিনি থানার সেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।