তিন দিনের মধ্যে ছাত্রদের মামলা প্রত্যাহারসহ ৫ সিদ্ধান্ত

আইন উপদেষ্টার প্রথম সভা

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
আসিফ নজরুল
ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে দায়ের করা সব ফৌজদারি মামলা আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রত্যাহার ও এ সময়ে হওয়া হত্যাকান্ডে জড়িতদের দ্রম্নত বিচারের আওতায় আনার ব্যবস্থা করাসহ ৫ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। শনিবার আইন মন্ত্রণালয়ে আইন ও বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এদিন প্রথম সচিবালয়ে আসেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে তিনি শপথ নেন। সভায় নেওয়া বাকি চারটি সিদ্ধান্ত হলো, গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে যেসব ফৌজদারি মামলা হয়েছে, সেগুলো আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রত্যাহারের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে যেসব শিশু-কিশোর মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় আটক রয়েছে, তাদের আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে \হছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সন্ত্রাস দমন আইন এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো দ্রম্নত প্রত্যাহার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আইন ও বিচার বিভাগের ১৬৪৩০ নম্বরে (সরকারি আইনগত সহায়তার টোল ফ্রি জাতীয় হেল্পলাইন নম্বর) মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার ক্ষেত্রে সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সভা শেষে সাইবার নিরাপত্তা আইন কী থাকবে, নাকি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, 'যেকোনো ধরনের খারাপ আইন, যেটি সংস্কার করা প্রয়োজন বা বাতিল করা প্রয়োজন সেটি আমরা সুচিন্তিতভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করব। সাইবার নিরাপত্তা আইনে তো আমিও আসামি ছিলাম, কাজেই বুঝতে পারছেন সাইবার নিরাপত্তা আইনকে ভালোবাসার তো কোনো কারণ নেই আমার।' এর আগে শনিবার বেলা একটার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় দেশের নিম্ন আদালতের কোনো ক্ষতি না করার আহ্বান জানান আসিফ নজরুল। তিনি বিভিন্ন জেলায় নিম্ন আদালত ঘেরাও হওয়ার খবর পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, 'নিম্ন আদালত বিষয়ে ছাত্র-জনতার কোনো দাবি নেই। কেউ কিছু বললেও সেটা ভুল করে বলেছে।' আইন উপদেষ্টা বলেন, 'আমি যত দূর জানি, আপনাদের নিশ্চিত করছি, ছাত্র-জনতার দাবি ছিল উচ্চ আদালতের অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য কয়েকজন বিচারপতির পদত্যাগের বিষয়ে। নিম্ন আদালতের ক্ষেত্রে তাদের কোনো কর্মসূচি নেই।' জেলার আদালত, অর্থাৎ নিম্ন আদালত ঘেরাও হওয়ার উদ্বেগজনক খবর পাওয়ার কথা জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, 'আমি আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার কাছে অনুরোধ করব, জেলা আদালতে কোনোভাবে ধ্বংসযজ্ঞ বা নাশকতামূলক কাজ করবেন না। সেখানে ঘেরাওয়ের কোনো প্রয়োজন নেই।' আসিফ নজরুল বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতিতেও নিম্ন আদালতের বিচারকরা কাজ করে যাচ্ছেন। অতীতে ভুল-ভ্রান্তি কিছু হয়েছে, সেটা থেকে তারা বের হয়ে আসবেন বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন। তিনি নিম্ন আদালতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান।' এর আগে শনিবার সকাল ১০টায় সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের অংশগ্রহণে ফুল কোর্ট সভা ডাকা হয়েছিল। সভাটি ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আপিল বিভাগের সাতজন বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করছিলেন। এর মধ্যেই ফুল কোর্ট সভা ডাকা হয়। খবর পেয়ে কয়েকশ' বিক্ষোভকারী সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় জড়ো হন। পরে ওই সভা বাতিল করা হয়। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পোস্টে জানান, প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সাতজন বিচারপতির পদত্যাগ দাবিতে এই অবস্থান কর্মসূচি চলছে। জেলা জজকোর্টের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।