সৈয়দ রেফাত আহমেদ নতুন প্রধান বিচারপতি, ওবায়দুল হাসানের বিদায়
আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতিসহ শিক্ষাঙ্গন ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের হিড়িক
প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। শনিবার রাতে তাকে এ পদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বঙ্গভবন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ ব্যাপারে শনিবার রাতেই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইনমন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ শপথের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
এর আগে শনিবার দুপুরে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতিপদত্যাগ করেছেন। অপর ৫ জন হলেন- বিচারপতি- এম ইনায়েতুর রহিম, মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. শাহিনুর ইসলাম, কাশেফা হোসেন। আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তারা রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠান। আইন মন্ত্রণালয় সূত্র তাদের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
এছাড়া শুক্রবার পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এদিন দুপুরে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গভর্নর তার এক পৃষ্ঠার পদত্যাগপত্রটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে পাঠান।
এদিকে শুধু প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরই নন সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। তাদের অধিকাংশই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেও নেপথ্যে ভিন্ন কারণ রয়েছে। তাদের একটি বড় অংশ চাপের মুখে পদত্যাগ করেছেন। উলেস্নখযোগ্য আর একটি অংশ নিরাপত্তাজনিত কারণে পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আবার কেউ কেউ সরকারি চাকরিতে থেকে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টু হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় অন্তর্বর্তী
সরকারের আমলে বিপাকে পড়ার ভয়ে স্বেচ্ছায় সরে গেছেন।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগ প্রসঙ্গে শনিবার বিকালে ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন ও বিচার উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, 'আমাদের প্রধান বিচারপতি কিছুক্ষণ আগে পদত্যাগ করেছেন। উনার পদত্যাগপত্র ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে এসে পৌঁছেছে। এটা উপযুক্ত প্রসেসিংয়ের জন্য আমরা কালবিলম্ব না করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেব এবং আমি আশা করব যে এটা খুব দ্রম্নত, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।'
সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে আন্দোলনকারীরা শনিবার আপিল বিভাগের সব বিচারকের পদত্যাগ দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও করে। তাদের দাবি মানা না হলে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ঘেরাওয়েরও হুঁশিয়ারি দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুলস্নাহ। অ্যানেক্স ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্স্নোগান তোলেন- 'এক দুই তিন চার, বিচারপতি গদি ছাড়', 'হাসিনার দালালরা হুঁশিয়ারি সাবধান', 'ঘেরাও ঘেরাও ঘেরাও হবে, বিচারপতির ভবন ঘেরাও হবে'।
এর আগে সকালে প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়ে ফুলকোর্ট সভা আহ্বান করলেও আন্দোলনকারীরা ঘেরাওয়ের ডাক দেওয়ার পর তা স্থগিত করা হয়।
ফুলকোর্ট সভা আহ্বানের পর পরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক, বর্তমানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ফেসবুক পোস্টে লেখেন, 'ফ্যাসিবাদের মদদপুষ্ট ও নানা অপকর্মে জড়িত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সরকারের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা না করে ফুলকোর্ট মিটিং ডেকেছেন। পরাজিত শক্তির যে কোনো প্রকার ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। আইনজীবীরা এরই মধ্যে এর প্রতিবাদে জড়ো হয়েছেন। আমরা আগেই প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ আহ্বান জানিয়েছিলাম। ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাদের উসকানি দিলে এর ভয়াবহ পরিণাম ভোগ করতে হবে। অনবিলম্বে বিনাশর্তে প্রধান বিচারপতি পদ থেকে পদত্যাগ করুন এবং ফুলকোর্ট মিটিং বন্ধ করুন।'
এদিকে নতুন প্রধান বিচারপতি কে হচ্ছেন- জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, 'সেটা আমরা বলব না, তবে একটা জিনিস বলব, প্রধান উপদেষ্টার মতামত গ্রহণ করব। কনসার্ন যারা আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলব। আমার মন্ত্রণালয় থেকে যদি এ বিষয়ে কোনো ভূমিকা রাখার থাকে, চেষ্টা করব সবচেয়ে যোগ্য, সৎ এবং নিরপেক্ষ একজন মানুষকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার।'
বাংলাদেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান তার পদত্যাগপত্রে বেশকিছু কারণ উলেস্নখ করেছেন। তিনি তার পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, 'সুপ্রিম কোর্ট বিল্ডিং এবং এর রেকর্ডসমূহ রক্ষা, কোর্ট প্রাঙ্গণ রক্ষা, বিচারপতিদের বাড়িঘর, জাজেজ টাওয়ার রক্ষা, বিচারপতিদের শারীরিক হেনস্তা থেকে রক্ষা করা এবং জেলা জজকোর্ট ও রেকর্ড রুমগুলো রক্ষার স্বার্থে আমাকে এ সিদ্ধান্ত নিতে হলো।'
এর আগে গত বুধবার পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনার সময় নিয়োগ পাওয়া অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান, বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা।
এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের মেয়াদে নিয়োগ পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল পদত্যাগ করেছেন। শনিবার তিনি শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, 'এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যেটা মঙ্গলজনক হয়, সেটা করাই হলো আমার দায়িত্ব। আমি মনে করেছি, এ সময় আমার পদত্যাগ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মঙ্গলজনক হয়, সেই কাজটা করাকে শ্রেয় মনে করেছি। আমাদের শিক্ষার্থীদেরও ডিমান্ড আছে, আমরা যেন সরে যাই।'
পদত্যাগের সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছেন জানিয়ে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, 'সরকারের সম্মানিত একজন উপদেষ্টার সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্তটা তো আগেই নিয়ে রেখেছি, সেটা আলোচনা করে কার্যকর করেছি। আমি চেয়েছি নতুন সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আমি দায়িত্ব থেকে সরে যাব। কিন্তু আগেভাগেই পদত্যাগ করে সরে গেলাম, কোনো আলোচনা হলো না, এটা কোনো সৌজন্যতা নয়।'
এর আগে বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমানসহ ১৩ জন সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করেন।
এদিকে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও তিন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। শনিবার বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. ফজলুর রহমান।
মো. ফজলুর রহমান বলেন, 'উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি জেনেছি। তবে দাপ্তরিক কোনো কাগজ আসেনি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন কর্মকর্তা- মো. আনোয়ার হোসেন, আসিফ ইকবাল ও মো. সাইফুল ইসলাম পদত্যাগ করেছেন। এই তিন কর্মকর্তা মুঠোফোনে আমাকে তাদের পদত্যাগের বিষয়টি জানিয়েছেন।'
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকেও নিশ্চিত করেন এক কর্মকর্তা।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী পদত্যাগ করেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, পাঁচটি আবাসিক হলের প্রভোস্টসহ নয়জন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার বরাবর তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন। জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার মো. জসীম উদ্দিন পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে বিষয়টি উপাচার্যকে অবহিত করা হয়েছে।
পদত্যাগ করা কর্মকর্তারা হলেন- প্রক্টর অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক বিপস্নব মলিস্নক, ভাষাশহীদ আবদুস সালাম হলের প্রভোস্ট কাউসার হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক উকিল হলের প্রভোস্ট রুহুল আমিন, হজরত বিবি খাদিজা হলের প্রভোস্ট মো. রফিকুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অবন্তী বড়ুয়া, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট মুহাম্মদ মহিনুজ্জামান, আইকিউএসির পরিচালক অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ ও অতিরিক্ত পরিচালক মোহাইমেনুল ইসলাম।
এদিকে ক্ষমতার পালাবদলের হাওয়া লেগেছে বাংলা একাডেমিতেও! মাত্র ২২ দিন আগে নিয়োগ পাওয়া বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হারুন-উর-রশীদ আসকারীও পদত্যাগ করেছেন।
'উদ্ভূত পরিস্থিতি ও ব্যক্তিগত কারণে' শনিবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ড. হারুন। তিনি বলেন, পদত্যাগপত্রটি যথাযথ মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। রোববার হয়তো পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে মন্ত্রণালয়।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, 'আমাকে দুপুরের পর তিনি (হারুন-উর-রশীদ আসকারী) ফোনে জানিয়েছেন যে পদত্যাগ করবেন। পদত্যাগপত্রটি আমার দপ্তরে এসেছে কিনা- তা চেক করে বলতে হবে।'
এর একদিন আগে শুক্রবার পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার পদত্যাগ করেন। গত বুধবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকে বিক্ষোভ হয়। ওইদিন একদল কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরপ্রধানের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল করেন। তারা একজন ডেপুটি গভর্নরকে সাদা কাগজে সই করতে বাধ্য করেন এবং আরও চার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে পদত্যাগে রাজি করান।
গত বুধবার রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তাকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেন।
শেখ হাসিনার সময়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের দায়িত্ব পালন করা মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে তাকে সরকারি চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার এক আদেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, মুখ্য সচিব পদে তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিল করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) চৌধুরী আবদুলস্নাহ আল-মামুনের চুক্তি বাতিল করে নতুন আইজিপি হিসেবে মো. ময়নুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাবেক আইজিপি আত্মগোপনে আছেন।
গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) পদত্যাগ করেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. হাসিবুর রশীদ। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাষ্ট্রপতির সচিবের কাছে উপাচার্য তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ ঊর্ধ্বতন ২৯ প্রশাসক ও কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার উপাচার্যসহ কর্মকর্তারা তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী। বৃহস্পতিবার রাতে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে সালাম মুর্শেদীর পদত্যাগের কথা জানিয়েছিলেন দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। পদত্যাগের কারণ হিসেবে বিবৃতিতে ব্যক্তিগত কারণ উলেস্নখ করা হয়েছে।
জানা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ার পরও অনেক কর্মকর্তা এখনো অফিসে আসছেন না। তারা বিদেশে অবস্থান করছেন, নাকি দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন সে বিষয়ে কারও কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। একটি সূত্র বলছে, অফিসে অনুপস্থিত কর্মকর্তাদের বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। এ ছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত আছেন এমন অনেক কর্মকর্তাকেও অন্য দপ্তরে বদলি করা হতে পারে বলে জানায় সূত্রটি।
গত বুধবার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে ইমেইলে পদত্যাগপত্র জমা দেন উপাচার্য। পদত্যাগপত্রে উপাচার্য লেখেন, 'আপনার আদেশক্রমে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে আমাকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছিল। সে অনুসারে আমি দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ সচেষ্ট ছিলাম। বর্তমানে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।'
একই দিন পদত্যাগ করেছেন জাবির রেজিস্ট্রার (চুক্তিভিত্তিক) আবু হাসান। পদত্যাগের বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, 'পারিবারিক কারণে আমিও পদত্যাগ করেছি। পদত্যাগের বিষয়টি আমি উপাচার্যকে মৌখিকভাবে জানিয়েছিলাম। উপাচার্যের বিশেষ অনুরোধে আজকে ভার্চুয়ালি সিন্ডিকেট সভা পরিচালনা করতে হয়েছে। এরপরই আমি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।'
এ ছাড়া জাবিতে একাধারে পদত্যাগ করেছেন প্রক্টর ও শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আলমগীর কবির এবং ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ছায়েদুল ইসলাম। তাদের পদত্যাগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টর হিসেবে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রুবেল, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের প্রভোস্ট হিসেবে সহযোগী অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার ও ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রভোস্ট হিসেবে অধ্যাপক আফসানা হককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯ জনপ্রশাসক ও কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। বৃহস্পতিবার বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক তারিকুল হাসান।
পদত্যাগ করা কর্মকর্তারা হলেন, রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম খান, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রণব কুমার পান্ডে, হিসাব পরিচালক ড. শামসুল আরেফিন, ইনস্টিটিউট অফ ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুলস্নাহ আল মামুন। কোয়ালিটি এসিউরেন্স সেলের পরিচালক ড. দুলাল চন্দ্র রায় এবং সহপরিচালক ড. মশিউর রহমান ও ড. আব্দুর রশিদ সরকার, কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক শহিদুল আলম, লিগ্যাল সেলের প্রশাসক সাদিকুল ইসলাম।
এ ছাড়া কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগারের পরিচালক সায়েদ মুস্তাফিজুর রহমান, টিএসসিসির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মিজানুর রহমান খান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসের প্রশাসক সাখাওয়াত হোসেন, রাকসু কোষাধ্যক্ষ ড. জাফর সাদিক, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার প্রশাসক অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, শহিদ মীর আব্দুল কাইয়ুম আন্তর্জাতিক ডরমিটরির ওয়ার্ডেন আতিউর রহমান।
পদত্যাগ করা সহকারী প্রক্টররা হলেন- ড. মাহফুজুর রহমান, ড. পুরনজিত মহালদার, ড. হাকিমুল হক, ড. জহুরুল আনিস, ড. সাইকা কবির মিতু, ড. হামিদুল হক, ড. জাকির হোসেন, ড. কনক পারভেজ, ড. রতন কুমার, ড. কামরুজ্জামান ও ড. আল মামুন।
১৮ আগস্ট থেকে ক্লাস পরীক্ষা এবং ১২ আগস্ট থেকে আবাসিক হল চালুর নোটিশ দিয়ে পদত্যাগ করেছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান। গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এতদ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, বিগত ৬ আগস্ট ২০২৪ তারিখে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার এক সরকারি ঘোষণার প্রেক্ষিতে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সব শিক্ষা কার্যক্রম (পরীক্ষাসহ) আগামী ১৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখ হতে শুরু হবে। এ প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো আগামী ১২ আগস্ট ২০২৪ তারিখ তারিখ হতে খুলে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরি নীতিমালা ২০০৩ এর আলোকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হলগুলো শিক্ষার্থীদের আবাসন কার্যক্রম চলমান থাকবে। এর আগে গত ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উপাচার্য রেজিস্ট্রার প্রক্টরসহ দপ্তরগুলোর পরিচালক এর পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর জয়দেবপুরের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি.) মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর পদত্যাগ করেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। ড. শাহজাহান কবীর ১৯৯৪ সালের ৩০ মার্চ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে যোগদান করেন। মহাপরিচালক হিসেবে যোগ দিয়েছেন ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট। ড. শাহজাহান কবীর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৭ সালে অনার্সসহ বিএসসি, ১৯৮৮ সালে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৬৬ সালে নেত্রকোনা জেলার দিগলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।