আবু সাঈদ এখন ঘরে ঘরে :ড. ইউনূস

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

রংপুর/পীরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শনিবার রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের মাসহ স্বজনদের সাত্ত্বনা দেন -ফোকাস বাংলা
চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদ এখন বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরের সন্তান বলে মন্তব্য করেছে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি সন্তানকে আগলে রাখার দায়িত্ব এখন সবার। অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেওয়ার দুদিন পরেই শনিবার রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত ছাত্র আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে এ কথা বলেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, "আবু সাঈদ এখন ঘরে ঘরে। প্রত্যেক ঘরে আবু সাঈদ এবং বাংলাদেশে যত পরিবার আছে সব পরিবারের এবং জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবারই সন্তান সে। এখানে হিন্দু পরিবার হোক, মুসলমান পরিবার হোক, বৌদ্ধ পরিবার হোক সবার ঘরের সন্তান এই আবু সাঈদ।" ড. ইউনূস বলেন, "কাজেই আপনারা খেয়াল রাখবেন যে কোথাও কোনো গোলযোগ যেন না হয়, কেউ ধর্ম নিয়ে কথাবার্তা না বলে, কারণ আমরা এ মাটিরই সন্তান। সবাই আবু সাইদ। কাজেই সন্তানদের রক্ষা করা জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে এটা এখন আমাদের কর্তব্য। আমরা যেন এটা নিশ্চিত করি। আমরা এখন সামনের পথে দাঁড়াই, আবু সাঈদ যেমন দাঁড়িয়েছিল, আমাদেরকেও এমন দাঁড়াতে হবে।" শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুহাম্মদ ইউনূস ও উপদেষ্টা পরিষদে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি পীরগঞ্জের মেরিন একাডেমিতে অবতরণ করে। বেলা ১১টার পরে পীরগঞ্জ উপজেলার জাফরপাড়া গ্রামে সাঈদের বাড়িতে পা রাখেন ইউনূস। সাঈদের কবর জিয়ারত করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন প্রধান উপদেষ্টা। ওই সময় সাঈদের মা তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ২৫ বছর বয়সি সাঈদ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বাদশ ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। সাঈদ ছিলেন কোটা আন্দোলনে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমন্বয়ক। রংপুরে শিক্ষার্থীরা গত ১৬ জুলাই দুপুর ১টার দিকে জেলা স্কুল মোড়ে থেকে মিছিল নিয়ে বের হলে লালবাগ খামার মোড়ে শিক্ষার্থীদের আরেকটি মিছিল তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। পরে মিছিলটি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করে। সে সময় সেখানে থাকা ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলার সময় পুলিশের সঙ্গেও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এতে আবু সাঈদসহ পুলিশ ও বেশ কয়েক শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের রংপুর মেডিকেল কলেজে নেওয়া হলে হাসপাতালে আনার আগেই গুলিবিদ্ধ আবু সাঈদের মৃতু্য হয় বলে জানান চিকিৎসকরা। পুলিশের বন্দুকের সামনে দু'হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকা সাঈদকে গুলি করার ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সারা দেশে আন্দোলন জোরদার করা হয়। একপর্যায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পস্ন্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে। ড. ইউনূস বলেন, 'বাংলাদেশের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যখন বড় হবে, তারা স্কুলে পড়বে আবু সাঈদের কথা। তারাও বলবে- 'আমিও ন্যায়ের জন্য লড়ব'। তিনি বলেন, "আবু সাঈদের মা আমাদের সবার মা। কাজেই তাকে এবং সাঈদের বোনদের রক্ষা করতে হবে। তাদের ভাইদের রক্ষা করতে হবে। সবাইকে রক্ষা করতে হবে। আবু সাঈদের এই বাংলাদেশে কোনো ভেদাভেদ নেই। কাজেই আপনাদের কাছে অনুরোধ, যে যেখানেই আছেন এই আবু সাঈদের বাবা, মা এবং তার পরিবারকে রক্ষা করুন। কোনোরকম গোলযোগ হতে দেবেন না।" মুহাম্মদ ইউনূস নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব বাস্তবায়নে আবু সাঈদকে স্মরণের কথাও বলেন। তিনি বলেন, "স্বাধীন এই নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব এখন আমাদের। তার (আবু সাঈদ) কথা স্মরণ হবে এই কাজটা বাস্তবায়ন করার মধ্যে। কাজেই সে কাজটা যেন আমরা করি।"