বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরের তিন দিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ শতাধিক ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৪২ জন। তাদের অনেকের মরদেহ হস্তান্তরও করা হয়েছে। বাকিদের মরদেহ রাখা হয়েছে হাসপাতাল মর্গে। গুলিবিদ্ধ কেউ কেউ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেলেও এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন অনেকে।
শুক্রবার সকালে ঢামেক হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরের তিন দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত দেড়শর মতো মানুষকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের কেউ কেউ হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান। তাদের মধ্যে পুলিশ ওর্ যাব সদস্যও ছিলেন। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে মঙ্গলবার ৩০ জন, বুধবার ৮ জন ও বৃহস্পতিবার চারজনের মৃতু্য হয়েছে।
জানা গেছে, ৬ আগস্ট সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ১২৮ জনকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে মারা যান ৩০ জন এবং ভর্তি করা হয় ১১ জনকে।
নিহতরা হলেন ১। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর গ্রামের সোলায়মান আলী মোলস্নার সন্তান কনস্টেবল মাহফুজুর রহমান (২৪) তিনি সংসদ ভবন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন, ২। আশরাফুল হাওলাদার (২০) বাড্ডায়, ৩। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি (২২) উত্তরা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল থেকে, ৪। মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান (২৬) তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ার সরাইল উপজেলার আব্দুল সাত্তারের সন্তান, গুলিবিদ্ধ হন রাজধানীর উত্তরায়, ৫। অজ্ঞাতপরিচয় পুলিশ সদস্য (৪০) যাত্রাবাড়ী, ৬। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি (৩০) মিরপুরের আজমল হাসপাতাল থেকে, ৭। আনোয়ার হোসেন (৫৭) যাত্রাবাড়ী, ৮। রাব্বি (২১) মতিঝিল, ৯। পুলিশ সদস্য আব্দুল আলিম (৪৬) গাজীপুর, শ্রীপুর থেকে, ১০। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি (৩৫) হাতিরঝিলে, ১১। অজ্ঞাতপরিচয় পুলিশ সদস্য (৩০) যাত্রাবাড়ী, ১২। পুলিশ সদস্য রাসেল মাহমুদ (২১) যাত্রাবাড়ী, ১৩। মনির (৪৫) যাত্রাবাড়ী, ১৪। পুলিশের এসআই রাসেল (৪৪) উত্তরা পূর্ব থানা, ১৫। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি (৩৮) উত্তরা থানা, ১৬। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি (৩২) উত্তরা থানা, ১৭। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি (৪০) উত্তরা থানা, ১৮। আসিব (১৬) গুলশান, ১৯। পুলিশ সদস্য সুলতান (৩০) কুমিলস্না, ২০।র্ যাব সদস্য ইন্সপেক্টর হাসমত আলী যাত্রাবাড়ী, ২১। নুর আলম (২১) তিনি কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে, ২২।র্ যাব সদস্য আনোয়ার বিজিবি জেসিও, ২৩। নায়েক মো. আব্দুল আলিম বয়স (৪৫) ৩৯ বিজিবি গাজীপুর, ২৪। পুলিশ সদস্য সঞ্জয় কুমার দাস (৩৯) যাত্রাবাড়ী, ২৫। ডিবি ইন্সপেক্টর রাসেল উত্তরা, ২৬। শাওন (২২) বংশাল, ২৭। অজ্ঞাতপরিচয় পুলিশ সদস্য (৫০) উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল থেকে, ২৮। পুলিশ সদস্য রুবেল (১৮) মিরপুর, ২৯। মনির (৪৫) পোস্তগোলা এবং ৩০। মিরপুর-১১ এলাকার সালেহ আহমেদের সন্তান চাকরিজীবী বাপ্পি আহমেদ (৩৫) হাতিরঝিল।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া সংবাদ মাধ্যমকে জানান, সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রাজধানীসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ১২৮ জনকে ঢামেক হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে ৩০ জন মারা যান, ১১ জন চিকিৎসাধীন। আহত ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এখনো অনেককে আনা হচ্ছে।
জানা গেছে, ৭ আগস্ট সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাত পুলিশ সদস্য ও একজন আনসার সদস্যকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতরা হলেন ১। পুলিশ সদস্য আব্দুল মজিদ (৪৫), নীলফামারী সদরের ট্যাপরা হাজিরপাড়া গ্রামের আইনুদ্দিনের ছেলে, যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি। ২। এসআই সুজন চন্দ্র দে (৪১), ভোলার বোরহানউদ্দিন থানার ছোট মানিকদি গ্রামের খোকন চন্দ্র দে'র ছেলে, যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ৩। এএসআই ফিরোজ হোসেন (৪৮), গোপালগঞ্জ সদরের গোবিনাথপুর গ্রামের আব্দুল জলিল শেখের ছেলে, যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ৪। পুলিশ সদস্য আবু হাসনাত রনি (২৪), ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর থানার টেংরিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে, উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ৫। এসআই খগেন্দ্র চন্দ্র সরকার (৪৯), উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ৬। কনস্টেবল শাহিদুল আলম (৪৮), বনানীর মহাখালী ওয়ারলেস এলাকার আছির উদ্দিন আহমেদের ছেলে, উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ৭। কনস্টেবল রেজাউল করিম (৪৮), বগুড়ার নজরুল ইসলামের ছেলে, যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ৮। আনসার সদস্য আবু জাফর (৪৬), টাঙ্গাইলের সখিপুর থানার বোয়ালী গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে, যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া জানান, মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
সবশেষ বৃহস্পতিবার গুলিবিদ্ধ হয়ে আরও চার পুলিশ সদস্য ঢামেক হাসপাতালে মারা যান। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের চারজনকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতদের মধ্যে তিনজন অজ্ঞাতপরিচয় পুলিশ সদস্য (বয়স ৩২, ৪০ ও ৩২) যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘর্ষে নিহত হন। অন্যজনও অজ্ঞাতপরিচয় পুলিশ সদস্য (৩২), তিনি উত্তরা এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজ উদ্দিন জানান, গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া পুলিশের চার সদস্যের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।