ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। বৈঠক শেষে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, 'নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই।'
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের অফিসে ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে হওয়া এই বৈঠকে দেশের নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সার্বিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক অবস্থা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন গোয়েন লুইস এবং আমীর খসরু।
আমীর খসরু বলেন, বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা এসেছে। দেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষায় জাতিসংঘের বড় সমর্থন ছিল। এখন মানুষের শঙ্কা কেটে গেছে। সবাই মিলে আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। সেখানে জাতিসংঘের সমর্থন প্রয়োজন রয়েছে।
গোয়েন লুইস সাংবাদিকদের বলেন, ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত এই অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতিসংঘ সমর্থন দিচ্ছে। বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে কীভাবে সহায়তা করতে পারে, সে জন্য জাতিসংঘ সব অংশীদার, দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে কথা বলছে। তিনি আরও বলেন, গত কিছুদিনে যা ঘটেছে, তার তদন্ত হবে বলেও জাতিসংঘ আশা করছে। এ ছাড়া দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে শান্ত থাকতে হবে বলেও জানান।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ এবং ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হুমা খান।
গোয়েন লুইস বলেন, ডক্টর ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন বিষয়ে আলোচনা করেছি। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি ইউনাইটেড ন্যাশন সমর্থন জানিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সব স্টেকহোল্ডারস, রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি, সংগঠনের সঙ্গে আলাপ করছি। আজকে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশ গড়ার জন্য কীভাবে জাতিসংঘ সহযোগিতা করতে পারে, আন্দোলনকে ঘিরে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তার তদন্তে জাতিসংঘ কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে এবং উন্নয়ন অগ্রাধিকারে সহযোগিতা করা যায়। এই নতুন সরকারকে আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে উন্নয়নে জাতিসংঘ সহযোগিতা দিয়ে যাবে। এসব বিষয়ে এই আলোচনা করেছি। আমরা রাস্তায় সহিংসতা বন্ধ এবং সর্বত্র শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আসুক এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এগিয়ে যাক- এই প্রত্যাশা করছি।
ষড়যন্ত্রের নীল নকশা সম্পর্কে সজাগ
থাকার আহ্বান ফখরুলের
এদিকে পতিত স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্রের নীল নকশা সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসররা পরিকল্পিতভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তথা বিজয়ী ছাত্র-জনতার ওপর প্রতিশোধের নীল নকশা নিয়ে মাঠে নেমেছে। বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এসব ঘৃণ্য অপরাধের দায় সুকৌশলে বিএনপিসহ সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির ওপর চাপানোর জন্য সামাজিক গণমাধ্যমকে ব্যবহার করছে ব্যাপকভাবে। বিশেষ করে প্রতিবেশী একটি দেশের কিছু কিছু নিউজ চ্যানেলসহ সোসাল মিডিয়ার পস্নাটফর্মগুলোকে ব্যবহার করছে একটি চিহ্নিত মহল।
জনরোষে পালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সম্প্র্রদায়ের নাগরিকদের সম্পদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়কে বিশেষভাবে টার্গেট করেছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার লক্ষ্যে সমাজকে বিভক্ত করাই এই মুহূর্তে তাদের ষড়যন্ত্র। বিজয়ী সব শক্তি তথা জনগণের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করার অপচেষ্টায়ও তারা মরিয়া হয়ে লেগেছে।
পতিত স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্রের নীল নকশা সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা আশা করি, ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, প্রশাসন তথা সর্বস্তরের সব নাগরিকরা এ বিষয়ে সজাগ আছেন। বিএনপি ইতিমধ্যে সাধ্যমতো সব পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলছে। দলের নাম ব্যবহার করে যারাই এই ধরনের অপতৎপরতায় জড়িয়ে পড়বে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পরিস্থিতি ও পরিবেশের গভীরতা অনুভব করে দেশবাসীসহ সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি সব সহায়ক শক্তিকে আবারও সজাগ করতে চাই, পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসরদের এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে। বিশেষভাবে আহ্বান করতে চাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সব নাগরিকদের। আহ্বান রাখছি, এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যার যার স্থান থেকে সামাজিক সচেতনতা ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, দেশপ্রেমিক প্রতিরক্ষা, প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য দল মতনির্বিশেষে তাদের পাশে দাঁড়াতে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।