জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার না করেই রাস্তা পার হতে যাচ্ছিলেন এক যুবক। এরপর দৌড়ে এসে তাকে আটকালেন এক তরুণী। সুরক্ষার জন্য তাকে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করতে বাধ্য করা হয়। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে। সেখানে ওই তরুণীর মতো আরও ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিলেন।
শিক্ষার্থীরা এমনভাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, সেখানে কারও পক্ষে ট্রাফিক রুলস ভঙ্গ করার কোনো সুযোগ ছিল না। কাছে গিয়ে জানা যায়, ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা ওই তরুণীর নাম ফাতেমা তুজ জোহরা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিমাপবিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশের মতো বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে কাজ করছিলেন তিনি।
ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, 'আমরা সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। অনেকে ট্রাফিক রুলস সম্পর্কে জানেন না। তাদের এই বিষয়ে অবগতও করা হচ্ছে।'
এদিকে, ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এতে সড়কে যানবাহন চলাচলে অনেকটাই গতি ফিরেছে। পাশাপাশি স্বস্তি ফিরেছে মানুষের মাঝে।
শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে রিকশাচালক সুমন হোসেন বলেন, 'মামা এরা পুলিশের থেকে কড়া। পুলিশকে কিছু বললে শুনত, কিন্তু এরা কিছু শোনে না। যা নিয়ম তাই করতে হবে।'
পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীরা সড়ক ও আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলো পরিষ্কার করছিলেন। শিক্ষার্থীদের এই ভূমিকায় সাধারণ মানুষ প্রশংসা করছিলেন। পথচারীরা তাদের বাহবা দিচ্ছিলেন।
সড়ক পরিষ্কারের পরে মাথায় ছাতা ও হাতে বাঁশি নিয়ে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিলেন আরেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার সাবা। তিনি ইস্পাহানি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
সাবা বলেন, 'আমরা ট্রাফিক রুলস মানার ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেব না। সবাইকে আইন মানতে হবে। আইন না মানলে সড়কে শৃঙ্খলা আসবে না।'
সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা সড়কের সিগন্যালে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিলেন। কেউ ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করলেই তারা চালকদের বাধা দিচ্ছিলেন। এতে রাস্তায় বড় ধরনের কোনো যানজট দেখা যায়নি। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সাধারণ মানুষকে রাস্তা পারাপারে সহায়তা করতেও দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের এই চেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ মানুষ।
এদিকে নগরীর মৎস ভবন এলাকায় চার মোটরসাইকেল চালককে আটকে রেখেছিলেন শিক্ষার্থীরা। হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল আরোহীদের ৫ থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষায় রাখা হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি রাস্তা পরিষ্কার ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করছিলেন ফায়ার সার্ভিস, ইসলামী আন্দোলন ও আনসার সদস্যরা। মৎস্য ভবন এলাকায় দায়িত্বরত ছিলেন হাবিবুলস্নাহ্ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাদমান সাদাত। তিনি বলেন, 'শুধু বাইক চালক নন, যাত্রীরা হেলমেট না পরলেও ছাড় নেই। যারা হেলমেট ব্যবহার করছেন না আমরা তাদের ৫ থেকে ১০ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখছি। এই মুহূর্তে পুলিশ বা ট্রাফিক পুলিশও নেই। তাই রাস্তায় যেন যান চলাচলে সমস্যা না হয় তা নিশ্চিত করতে আমরা শিক্ষার্থীরা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছি।'