বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ভারত সতর্ক অবস্থানে রাখবে সেনাবাহিনী :জয়শঙ্কর
প্রকাশ | ০৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
বাংলাদেশে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পর্যবেক্ষণের নীতি অনুসরণ করবে ভারত। পাশাপাশি দেশটি সেনাবাহিনীকে সতর্ক অবস্থানে রাখবে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আজ মঙ্গলবার পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় বৈঠকে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতে ষড়যন্ত্রও থাকতে পারে।
পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার এক দিন পর আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে ভারত তাদের অবস্থান স্পষ্ট করল। শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন থেকে সরকারবিরোধী এ বিক্ষোভের সূত্রপাত। সহিংস বিক্ষোভে কয়েকশ' মানুষ নিহত হয়েছেন।
সূত্র বলছে, সর্বদলীয় বৈঠকে জয়শঙ্কর বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারতের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করেন। এ বিষয়ে অন্য কোনো দেশ
\হহস্তক্ষেপ করলে কী নীতি গ্রহণ করা হবে, সে বিষয়ও উঠে আসে বৈঠকে।
এ সময় লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী জানতে চান, বাংলাদেশ ইসু্যতে বাইরের কোনো গোষ্ঠীর ভূমিকা নিয়ে সরকারের কাছে তথ্য আছে কি না। উত্তরে জয়শঙ্কর বলেন, ভারত সরকারের কাছে শুধু এই তথ্য আছে যে পাকিস্তানের কূটনীতিকরা বিক্ষোভের সমর্থনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করেছেন।
\হবৈঠকে রাহুল গান্ধী ছাড়াও কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা কে সি ভানুগোপাল, জনতা দলের লালস্নান সিং, সমাজবাদী পার্টির রাম গোপাল যাদব, তৃণমূল কংগ্রেসের সুদ্বীপ বন্দ্যোপাধ্যায়সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, বৈঠকে জয়শঙ্কর বলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতে ষড়যন্ত্রও থাকতে পারে। তিনি বলেন, 'আমরা জানতে পেরেছি, শেখ হাসিনাকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল জড়িত থাকতে পারে।'
জয়শঙ্কর বলেন, 'খুব অল্প সময়ের নোটিশে ভারতে আসার আবেদন করেছিলেন বাংলাদেশের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত সেই অনুমতি দেওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যায় দিকে গাজিয়াবাদের (উত্তর প্রদেশের) বিমানঘাঁটিতে শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে অবতরণ করে একটি উড়োজাহাজ।'
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, জয়শঙ্কর বৈঠকে বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারত সরকারের কিছু আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করতে ভারত সরকার তাকে কিছুটা সময় দিতে রাজি, তা তাকে জানানো হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় হাসিনা ভারতে এসে পৌঁছান। দিলিস্নর উপকণ্ঠ গাজিয়াবাদের কাছে হিন্দন বিমানঘাঁটিতে তার সঙ্গে দেখা করেন ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। সোমবার রাতেই খবর রটে হাসিনা ভারত থেকে লন্ডনে যাবেন। সর্বদলীয় বৈঠকে জয়শঙ্করের মন্তব্য থেকে মনে করা হচ্ছে, লন্ডন যাত্রার দিনক্ষণ হয়তো এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
ভারতের একটি গণমাধ্যমের খবর, বৈঠকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে সে দেশে একটা অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার সম্ভবত গঠিত হতে চলেছে। কাজেই ভারতের দুটি পরিকল্পনা করে রাখা উচিত। একটি মাঝারি মেয়াদের, অন্যটি দীর্ঘ মেয়াদের।
রাহুল বৈঠকে বলেন, শিক্ষার্থীরা অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেখতে আগ্রহী।
সূত্র অনুযায়ী, জয়শঙ্কর এর জবাবে বলেন, পরিস্থিতি এখনো টলমলে। ক্রমাগত রূপ বদলাচ্ছে। কাজেই দেখেশুনে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, সে দেশের কোনো কোনো এলাকায় ভারতবিরোধী মনোভাব দেখা গেছে। তবে বাংলাদেশে যারাই সরকারে থাকুক, ভারত সরকার তাদের সঙ্গে কাজ করবে।
\হবৈঠক শেষে শিবসেনার প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী বলেন, বাংলাদেশে যাই ঘটুক, তার প্রভাব ভারতের ওপর পড়ে। সেখানে নৈরাজ্য দেখা দিলে ভারতের পক্ষে তা মঙ্গলের হতে পারে না। সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। প্রয়োজনে ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনতেও দেশকে প্রস্তুত থাকতে হবে।