কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে নাশকতার মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বিএনপি-জামায়াতের এক হাজারের বেশি নেতাকর্মীর জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ জামিন আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। পরে এদিন বিকাল ৫টায় নেতাকর্মী কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান।
কারাগার থেকে বের হয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'ছাত্রজনতার অভু্যত্থানে খুনি হাসিনার পতন হয়েছে। পালিয়ে যেন তিনি পার না পেতে পারেন। তাকে গ্রেপ্তার করে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।'
এসময় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দেশের কোটি কোটি ছাত্রজনতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান রিজভী।
কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া উলেস্নখযোগ্য
অন্য নেতারা হলেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউলস্নাহ আমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল আলম নীরব, দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনু, ১২ দলের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এমএ সালাম ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রমুখ।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়ালও নেতাকর্মীদের মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আটক শিক্ষার্থীরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হওয়ার জন্য মূল ফটক ভাঙার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে সেনাবাহিনী গিয়ে ফাঁকা গুলি করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এক পর্যায়ে পুরো কারাগার নিয়ন্ত্রণে আনে কারা কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সকালে কারাগারে এ ঘটনা ঘটে।
কারাগারে আটক থাকা যেসব আসামি হামলায় আহত হয়েছেন তাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কারাগারের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ ছিল। তাদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা চালুর জন্য টিকিট কাটাও সম্পন্ন করা হয়। এর মধ্যেই ছাত্র ও অন্য বন্দিরা মিলে গেট ভাঙতে চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ফাঁকা গুলি করে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
কাশিমপুর কারাগারেও উত্তেজনা
গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি জানান, কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর হঠাৎ উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ভেতরে থাকা আসামিরা এ উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে বলে জানা গেছে। এ সময় ভেতরে গুলির শব্দ শুনে কারা ফটকের বাহিরে সাধারণ মানুষ ও মুক্তিপ্রাপ্ত আসামিদের স্বজনরা ভিড় করেন। এতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কারা ফটক। মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
কারাগার সূত্র জানায়, সকাল থেকে কাশিমপুর কারা ফটকে জামিনে মুক্তি আসামিদের স্বজনরা অপেক্ষা করছিলেন, দুপুরের দিকে কারাগারের ভেতর উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় গুলির শব্দ শুনতে পায় বাহিরে থাকা লোকজন। পরে বাহিরে থাকা স্বজনরাও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর টহলরত সদস্যরা দ্রম্নত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। সেনাবাহিনীর গাজীপুর জোনের আর্টিলারি বিগ্রেড মেজর হায়দার বলেন, 'সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক।'