বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১

শেখ হাসিনার ভিসা বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্র

যাযাদি ডেস্ক
  ০৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
শেখ হাসিনার ভিসা বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্র

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোর সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে সিএনএনের সহযোগী সংবাদমাধ্যম নিউজ-১৮।

এর আগে, দেশ ছেড়ে শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশে অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠন প্রক্রিয়াকে গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার আহ্বান জানায়।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিলের তথ্য জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, মার্কিন সরকার বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিসা প্রত্যাহার করেছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের ঘনিষ্ঠ সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে বলে এক্সে জানিয়েছেন বার্গম্যান।

সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ডাকে 'লং মার্চ টু' ঢাকা কর্মসূচির সময়ে শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এই ঘটনা ঘটার আগে রোববার রাত এবং সোমবার সকাল থেকে নানা নাটকীয়তা হয়েছে।

শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে যান। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিমানে করে তাকে গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমান ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসিনার ইচ্ছা ছিল তিনি যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় নেবেন।

তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতাচু্যত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিতে ইচ্ছুক নয় যুক্তরাজ্য।

এর আগে সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তুমুল গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ৩৬ দিন আগে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হওয়ার পর দেশজুড়ে সংঘাত আর তিন শতাধিক মানুষের মৃতু্যর মধ্যে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে হলো।

বিবিসি লিখেছে, শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে দেশ ছেড়েছেন। তিনি প্রথমে ত্রিপুরার আগরতলায় গেছেন। তার সঙ্গে তার বোন শেখ রেহানাও রয়েছেন।

সেখান থেকে সন্ধ্যায় দিলিস্ন লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের হিন্ডন এয়ারবেসে নেমেছে শেখ হাসিনাকে বহনকারী সামরিক বিমান। সেখান থেকে দিলিস্ন গেছেন। পরে এনডিটিভি লিখেছে, তিনি শিগগিরই লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে সর্বাত্মক অসহযোগের মধ্যে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া জনতা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনও দখল করে নিয়েছেন। সেখানে পতাকা হাতে তাদের উন্মুত্ত উলস্নাসের সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ।

শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্রটি হাইকোর্ট বাতিল করার প্রতিক্রিয়ায়।

১ জুলাই মাঠে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের টানা কর্মসূচির মধ্যে সরকারও হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে, ফলে সেই আদেশ স্থগিত হয়ে যায়।

পরিস্থিতি পাল্টে যায় ১৪ জুলাই। সেদিন চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এক প্রশ্নে বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কোটা পাবে না, তো কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?'

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেমে থেমে মিছিল বের হয় 'তুমি কে আমি কে রাজাকার, রাজাকার'। কিছুক্ষণ পর এই স্স্নোগান চলার পর অবশ্য স্স্নোগান পাল্টে বলা হয়, 'তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।'

সেই রাতেই ছাত্রলীগ মিছিল বের করে, 'তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি।'

তবে পরদিন সকালে ওবায়দুল কাদের এক বক্তব্যে বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঔদ্ধত্যের জবাব দেবে ছাত্রলীগ।'

সেদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিবাদে পরদিন ১৬ জুলাই সারাদেশের শিক্ষাঙ্গনে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়।

সেদিন সংঘর্ষে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে ছাত্রদল নেতাসহ তিনজন, ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ছাত্রলীগকর্মী ও এক হকার এবং রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলিতে এক শিক্ষার্থীর মৃতু্যতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়।

১৭ জুলাই জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তার বিশ্বাস, শিক্ষার্থীরা আদালতে ন্যায়বিচার পাবে।

তবে পরের দিন কমপিস্নট শাটডাউন কর্মসূচির ডাক আসে শিক্ষার্থীদের তরফে। সেদিন ঢাকার বাড্ডা ও উত্তরায় সংঘাতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃতু্যর পর পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।

দুপুরের পর রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হতে থাকে। পরের তিন দিন ধরে চলে সংঘর্ষ, প্রাণহানি ঘটে দুই শতাধিক মানুষের।

পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কখনো ৮ দফা, কখনো ৯ দফা দাবি জানানো হয়। ঘটনার পরম্পরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশ থেকে সরকার পতনের 'এক দফা' দাবি জানানো হয়।

পরদিন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে সারাদেশে পুলিশসহ শখানেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ওইদিন সন্ধ্যা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়। আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফে সোমবার 'লং মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সোমবার বেলা ১১টার পর থেকে লাখো জনতা ঢাকার শাহবাগসহ বিভিন্ন অংশে প্রবেশ করতে শুরু করে। এরই মধ্যে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে