বিজয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস
শুধু ঢাকাতেই নয়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুরসহ দেশের প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা শহরেই ছড়িয়ে পড়ে আনন্দ মিছিলের জোয়ার। যার ঢেউ লাগে উপজেলা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও
প্রকাশ | ০৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০৬
যাযাদি রিপোর্ট
শত শত মানুষের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার মুক্ত হলো দেশ। জীবন বাজি রেখে নতুন করে স্বাধীনতা এনে দিল বীর ছাত্র-জনতা। শ্রাবণের মেঘমুক্ত আকাশে উড়ল বিজয়ের কেতন। স্বর্ণাক্ষরে লেখা হলো দুঃশাসনের শিকল ছিন্ন করে গণঅভু্যত্থানের নতুন ইতিহাস। পতন হলো টানা ১৭ বছর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা স্বৈরাচার সরকারের। সোমবার দুপুরে রাষ্ট্রপতির হাতে পদত্যাগপত্র দিয়ে দেশ ছাড়েন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।
মুহূর্তে এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর উলস্নাসে ফেটে পড়ে দেশ। রাস্তায় নেমে আসে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীসহ নানা বয়সি লাখো মানুষ। বিজয় আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই। সরকার পতন আন্দোলনে প্রাণ হারানোদের স্বজনদের বুকের চাপা কষ্ট মুহূর্তে রূপ নেয় খুশির জোয়ারে। শ্রেণি-পেশা, নারী-পুরুষ ও বয়সের ভেদাভেদ ভুলে সবাই যোগ দেন একই আনন্দ মিছিলে। দুপুরের পর থেকে রাজধানী ঢাকার সব পথ এসে মিশে আন্দোলনের উৎসস্থল শাহবাগের রাজপথে।
এদিকে শুধু ঢাকাতেই নয়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুরসহ দেশের প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা শহরেই ছড়িয়ে পড়ে আনন্দ মিছিলের জোয়ার। যার ঢেউ লাগে উপজেলা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। চলে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীসহ চেনা-অচেনাদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ। আনন্দ মিছিলের জনস্রোতে ভেসে চলা উলস্নসিত মানুষের নানা সেস্নাগান প্রকম্পিত হয়ে ওঠে অলিগলিসহ রাজপথ।
তবে দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত এ বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণে অতিউৎসাহী ও স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষ নেমে পড়ে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুরসহ নানা ধরনের নাশকতায়। কোথাও কোথাও ঘটে লুটপাটের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। যা সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করে তোলে। ফলে ভয়ার্ত অনেক মানুষ আনন্দ মিছিল থেকে দ্রম্নত ঘরে ফিরে গিয়ে পরিবার ও স্বজনদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই পুরো রাজপথ দখল নেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণির মানুষ। ছোট-বড়-মাঝারি মিছিল নিয়ে জড়ো হতে শুরু করে শাহবাগ মোড়ে। দুপুরের আগেই এ স্পটই পরিণত হয় জনসমুদ্রে। দুপুর গড়িয়ে আড়াইটার পর পরই সর্বত্র শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ে। আর এই খবরে উলস্নাসে ফেটে পড়ে সেখানে জড়ো হওয়া ছাত্র-জনতা। পরে সেখান থেকে বিজয় মিছিল নিয়ে
গণভবনের দিকে ছুটে যান অনেকেই। যে যেভাবে পারেন গণভবনে ঢুকে আনন্দ উলস্নাস প্রকাশ করেন।
সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে সিভিল পোশাকে গণভবনে ঢোকা সিনিয়র পুলিশ সুপার পিপিএম আব্দুলস্নাহ আরেফ বলেন, 'স্বৈরাচারী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শেখ হাসিনা সরকার ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালিয়েছে। আইনের শাসন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করেছে। ফলে পুলিশের ভেতরে একটি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। যারা নানাভাবে লুটেপুটে খেয়েছে; গুম-খুনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে নিরীহ ছাত্র-জনতার বুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। যার দায়ভার পুরো পুলিশ প্রশাসনের ওপর পড়েছে। গোটা দেশে পুলিশকে জনতা মুখোমুখি করে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আজ এ দুঃশাসনের অবসান হলো।'
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় জড়ো হওয়া হাজারো মানুষকে সোমবার বিকালে বিজয় উলস্নাস করতে দেখা গেছে। হাসপাতালের কর্মীদের রাস্তায় এসে নাচতে দেখা গেছে। বেশ কয়েকজন অসুস্থ নারীও হুইলচেয়ারে রাস্তায় নেমে আসেন।
কল্যাণপুরের বাসিন্দা ফজলে রাব্বি বলেন, 'বিশ্বাস করতে কয়েক দিন সময় লাগবে।' ধানমন্ডির বাসিন্দা মো. সুমন বলেন, 'কী যে আনন্দ লাগছে, বোঝাতে পারব না।' সেখানে জড়ো হওয়া মানুষ 'জিতিলো রে জিতিলো', 'ছাত্র সমাজ জিতিলো', 'বাংলাদেশ বাংলাদেশ', 'ভুয়া ভুয়া'সহ সরকার পতনের নানা সেস্নাগান দেন।
এদিকে পথে পথে বিজয় উলস্নাসের কারণে রাজধানীর কোথাও কোনো ধরনের গণপরিবহণ, এমনকি মোটর সাইকেলও চলাচল করতে পারেনি। যদিও এ সংকট উলস্নাসিত জনতার আনন্দ শ্রোতে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং লাখ লাখ মানুষ হেঁটেই বিজয় মিছিলের আনন্দ উপভোগ করেছেন।
শাহবাগে আনন্দে মিছিলে যোগ দিতে রামপুরা থেকে আসা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বুশরা উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, 'এত দূর থেকে হেঁটে আসতে আজ কেন জানি একটুও কষ্ট হয়নি। বরং হাজারো মানুষের ভিড়ে মিশে পথ চলা যেন উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। আজ মনে হলো পরাধীনতার নাগপাশ থেকে দেশ নতুন করে স্বাধীন হলো। আমাদের দীর্ঘ ত্যাগ-তিতিক্ষা আজ সফল হয়েছে।'
বুশরার সঙ্গীয় সহপাঠী তাসমিয়্যাহ তাবাস্সুমের দাবি, 'আজ একাত্তুরের স্বাধীনতার পূণজন্ম হলো। দেশ আজ যেন স্বৈরাচারের নাগপাশ থেকে নতুন করে মুক্তি ফিরে পেল।'
চট্টগ্রাম পথে পথে জনস্রোত : পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা- এ খবর পেয়ে পথে পথে জনস্রোত নিয়ে আনন্দ মিছিল উদ্?যাপন করছেন বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাসিন্দারা। বিভিন্ন অলিগলি থেকে এসব মিছিল বের হয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনতা এই মিছিলে যোগ দেন।
সোমবার বিকাল ৩টায় নগরের চকবাজার, বহদ্দারহাট, জামালখান, ওয়াসা মোড়, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল বের হয়। কেউ হেঁটে, কেউ মোটর সাইকেল ও গাড়িতে করে এসব মিছিল নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, শিশু, নারী, বয়োবৃদ্ধ সব বয়সিকে এই মিছিলে অংশ নিতে দেখা গেছে। এ সময় আওয়ামী লীগের ব্যানারসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুরও চালানো হয়।
বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা মিছিলে নগরের কাজীর দেউড়ি মোড়ে জড়ো হয়। এতে ওই মোড়টিতে মুহূর্তেই লাখ লাখ জনতার স্রোত দেখা গেছে। এ সময় অনেকে সেস্নাগানে দেন। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শ্রমজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষের সেস্নাগানে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।
কাজীর দেউড়ি মোড় দিয়ে সেনাবাহিনী কয়েকটি গাড়ি যাওয়ার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে জনতার হাত মিলাতে দেখা গেছে। কাজীর দেউড়িতে তাসকিন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমাদের আন্দোলন সফল হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।'
আনন্দ মিছিলে যোগ দেওয়া চকবাজারের বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, কী যে আনন্দ লাগছে বোঝাতে পারব না। এ বিজয় নির্যাতিত ছাত্র জনতার।
বিজয় উলস্নাসে খুলনা : শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার খবরে বিজয় উলস্নাসে মাতে খুলনার মানুষ। রাজপথে নেমে আসেন হাজার হাজার মানুষ। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী সবার হাতে ছিল লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা। সবার গন্তব্য ছিল নগরীর শিববাড়ী চত্বর। হাজারো মানুষের গগন বিদারী সেস্নাগানে সেস্নাগানে উত্তাল ছিল গোটা নগরী। তরুণ-তরুণীদের একে অপরকে ফুল দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা একে অপরকে মিষ্টি খাওয়ান। এছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ও সরকারি বিএল কলেজের হাজারও শিক্ষার্থী আনন্দ উলস্নাসে মেতে ওঠে।
সিলেটে উচ্ছ্বসিত জনতার ঢল : শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে বিজয় মিছিল করেন সিলেটের সাধারণ মানুষ। রাস্তায় নেমে আসেন উচ্ছ্বসিত জনতা। এ সময় তারা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সেস্নাগান দেন। এদিন বিকাল ৩টা থেকেই সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে জড়ো হতে থাকেন সব বয়সি মানুষ। নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, সুবিদবাজার, মদিনা মার্কেট, লামাবাজার, সোবহানীঘাট, উপশহরসহ বিভিন্ন স্থানে নামে মানুষের ঢল।
বরিশাল : এদিন বিজয় উলস্নাস হয়েছে বরিশালে শহরে। শেখ হাসিনার পতনের খবরে অন্তত কয়েক লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে আনন্দ করেন। এ সময় 'পলাইছেরে পলাইছে, শেখ হাসিনা পলাইছে' বলে সেস্নাগান দিতে থাকেন ছাত্র-জনতা। মিছিলকারীরা বলেন, স্বৈরাচারের পতনের মধ্য দিয়ে দেশটা নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। এই গণঅভু্যত্থান জনগণের। এ সময় সাধারণ মানুষকে সেনাবাহিনীর উদ্দেশে স্যালুট দিতে দেখা যায়।
টাঙ্গাইল : আনন্দ মিছিল বের করেন টাঙ্গাইলের শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। টাঙ্গাইল শহীদ মিনার চত্বর ও পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হওয়া এই মিছিল পরে গুরুত্বপূর্ণ সব সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় সাধারণ মানুষও এই মিছিলে যোগ দেন।
বান্দরবান : শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার খবরে বান্দরবানে অনন্দ মিছিল করেছেন সাধারণ মানুষ। বিকালে ট্রাফিক মোড় থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সব সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
ঝিনাইদহ : শেখ হাসিনার পতনের খবরে শিক্ষার্থীরা শহরের পায়রা চত্বরে রং খেলায় মেতে ওঠেন। শহরে উঁচু স্থান ও ভবনে জাতীয় পতাকা নিয়ে সেস্নাগান দেন তারা। পরে পুরো শহর মিছিল নিয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন ছাত্র-জনতা।
দিনাজপুর : শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং বোন শেখ রেহানাসহ দেশ ত্যাগের খবরে উচ্ছ্বসিত জনতার ঢল নামে দিনাজপুরের সড়কগুলোতে। কারও হাতে লাল সবুজের পতাকা, কারও হাতে বাঁশি, কেউবা থালাবাসন বাজিয়ে করছেন উলস্নাস। ঘর থেকে পথে বের হয়ে আনন্দ মিছিলে অংশ নেন হাজারো মানুষ। ৭ বছরের শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধ সবাই সড়কে নেমে উলস্নাস করেন। এ সময় রাস্তায় সেনাসদস্যদের দেখতে পেয়ে তাদের স্যালুট ও করমর্দন করতে দেখা গেছে অনেককে।
নাটোর : নাটোরে বিশাল বিজয় মিছিল করছেন ছাত্র-জনতা। এদিন বিকাল ৩টার পর থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মূল সড়কে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বের হন ছাত্র-জনতা। বিজয় মিছিল থেকে শেখ হাসিনার পালানো নিয়ে বিভিন্ন সেস্নাগান দিতে থাকেন তারা। অনেককে মিষ্টি বিতরণ করতেও দেখা গেছে। এছাড়াও সেনাসদস্যদের সঙ্গে আলিঙ্গন করতে দেখা গেছে ছাত্র-জনতাকে।
লক্ষ্ণীপুর : শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরে লক্ষ্ণীপুরে বিজয় মিছিল করেছেন সাধারণ জনগণ। এর আগে চকবাজার জামে মসজিদ এলাকায় সাধারণ মানুষ মিষ্টি বিতরণ করেন। বিকাল ৩টার দিকে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বের হন ছাত্র-জনতা। বিজয় মিছিল থেকে শেখ হাসিনার পালানো নিয়ে বিভিন্ন সেস্নাগান দেওয়া হয়।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে রাজপথে নেমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন ছাত্র-জনতা। ভারী বর্ষণের মধ্যেও ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেন। এ সময় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সেস্নাগান দিতে দেখা গেছে। এদিন শহরের মুজিব সড়ক, এসএস রোড, বাজার স্টেশনসহ বিভিন্ন পাড়া-মহলস্নায় আনন্দ মিছিল করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ছাত্র-জনতা।
বগুড়া : শহরের সাত মাথায় নামে লাখো মানুষের ঢল। আনন্দ মিছিল নিয়ে তারা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় হাসিনা সরকার বিরোধী বিভিন্ন সেস্নাগান দেন ছাত্র-জনতা।
কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ায় বিজয় মিছিল করছেন সাধারণ জনগণ। এছাড়াও মজমপুর গেট, চার রাস্তা, পাঁচ রাস্তার মোড়, এনএস রোড এলাকায় সাধারণ মানুষ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যায়। এদিন দুপুর থেকেই শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বের হন হাজার হাজার জনতা। এরপর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে একত্র হয়ে বিজয় মিছিল ও উলস্নাস করেন সাধারণ জনতা ও আন্দোলনকারীরা।
পাবনা : শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবর পাবনায় ছড়িয়ে পড়লে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রাস্তায় নেমে উলস্নাসে ফেটে পড়েন। শহরের জেবি মোড় থেকে জেলখানা পর্যন্ত মানুষের ঢল নামে। এ সময় সেনাবাহিনীর টহল টিমের গাড়িতে চড়ে শহর ঘুরে আনন্দ প্রকাশের পাশাপাশি সেনাসদস্যদের সঙ্গে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ করমর্দন করেন।
পঞ্চগড় : দুপুর থেকেই পঞ্চগড়ে বিজয় উৎসবে মেতে ওঠেন ছাত্র-জনতা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিজয় উৎসবে যোগ দেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মত ও পেশার মানুষ। কেউ জাতীয় পতাকা হাতে আবার কেউ লাঠি হাতে বিজয় মিছিল করেন। অনেকে মোটর সাইকেলে জাতীয় পতাকা নিয়ে যোগ দেন আনন্দ মিছিলে। সেনাবাহিনীর বহরের গাড়িকে ঘিরে রাস্তায় আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা গেছে অনেককেই। অনেকে আবার একে অপরকে মিষ্টিমুখ করিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন। অধিকাংশ মিষ্টির দোকান বন্ধ থাকায় খোলা থাকা হাতেগোনা কয়েকটি মিষ্টির দোকানের মিষ্টি নিমিষেই শেষ হয়ে যায়।
রাজশাহী : শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে বিজয় মিছিল করেন ছাত্র-জনতা। এতে অংশ নেন শিশু ও নারীসহ সব বয়সের মানুষ। এ সময় জাতীয় পতাকা হাতে স্বৈরাচরবিরোধী বিভিন্ন সেস্নাগান দিতে দেখা যায়। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সব সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এছাড়াও বড় মিছিল বের করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রংপুর : বিজয় মিছিল করেছেন লাখো ছাত্র-জনতা। এদিন দুপুরের পর থেকেই সব বয়সি মানুষ রাস্তায় নেমে আসতে থাকেন। ছোট মিছিল একীভূত হয় বড় মিছিলে। মিছিলে 'জিতল রে জিতল', 'ছাত্র সমাজ জিতল, বলে সেস্নাগান দিতে দেখা যায়। এ সময় জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজে নাচতে দেখা যায় তাদের। বিকালে বিজয় মিছিল নিয়ে বের হন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। সবশেষে আনন্দ মিছিল নিয়ে ছাত্র-জনতা পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আবু সাঈদ চত্বরে এসে জড়ো হন। সন্ধ্যার আগে লাখো ছাত্র-জনতা উলস্নাসে ফেটে পড়েন শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে।
ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে বিজয়োলস্নাস ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সোমবার বিকালে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার জামতলা মোড়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সমবেত হয়ে মিছিল দিয়ে উলস্নাস প্রকাশ করেন। এ সময় ছাত্র-জনতা ও দলের নেতাকর্মীরা একে অপরকে মিষ্টিমুখ করান।
রাঙামাটি, রাজস্থলী : রাজস্থলীতে পতাকা হাতে নিয়ে আনন্দ মিছিল করেছেন জনসাধারণ। এদিন বিকাল সাড়ে ৩টা দিকে বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে একটি আনন্দ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বাসস্ট্যান্ড, বাঙ্গালহালিয়া, ইসলামপুর, শফিপুরসহ আশপাশের এলাকা প্রদক্ষিণ করে রাজস্থলী বাজারে এসে শেষ হয়। এই মিছিলে বিভিন্ন এলাকাসহ আশপাশের এলাকার হাজারের অধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তারা 'হৈ হৈ রৈ রৈ শেখ হাসিনা গেলি কৈ, ছি ছি হাসিনা লজ্জায় বাঁচি না'- সেস্নাগানে মুখরিত করে রাখে।
নিয়ামতপুর (নওগাঁ) : নিয়ামতপুরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন সাধারণ মানুষ, ছাত্র-জনতা, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন। সোমবার দুপুরে সরকার পতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা সদরে বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন ছাত্র-জনতা। জাতীয় পতাকা হাতে নানা পেশার মানুষ এই আনন্দ শোভাযাত্রায়।
লাখাই (হবিগঞ্জ) : আনন্দ মিছিল করেছে লাখাই উপজেলার ছাত্র-জনতা। এদিন উপজেলার বুলস্নাবাজার, কালাউকবাজার, বামৈ, মুড়াকরিবাজার এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন প্রধান সড়কে ছাত্র-জনতা মিষ্টি বিতরণসহ আনন্দ উলস্নাসে করেছেন তারা।
দিনাজপুর ফুলবাড়ী : এদিনের বিজয় মিছিলে নামে সাধারণ জনতার ঢল। করা হয় মিষ্টি বিতরণ। শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে বিকাল ৩টায় বিজয় মিছিল বের করেন আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। মিছিলটি নিমতলা মোড় থেকে শহরের ঢাকা মোড়ের দিকে আসতে থাকলে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ নারী-পুরুষ বিজয় মিছিলে যোগ দিয়ে বিজয় উলস্নাস করতে থাকেন। মিছিলটি পৌর শহর প্রদক্ষিণ করে নিমতলা মোড়ে আসলে শুরু হয় মিষ্টি বিতরণ।
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) : ছাত্র-জনতাসহ সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে আনন্দ মিছিল হয়েছে ভূঞাপুর উপজেলায়। উপজেলার আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রী ও জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)সহ শরিক দলে আনন্দ মিছিল উপজেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সেলিমুজ্জামান সেলু, জুলহাস উদ্দিন, কামরুল হাসান, খন্দকার গিয়াস উদ্দিন, মুনিয়া আক্তার, নাসরিন প্রমুখ।