আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসতে চান প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, 'কোটা আন্দোলনকারীরা যদি চায়, আমি তাদের সঙ্গে বসব, তাদের কথা শুনব। তাদের দাবি-দাওয়া এ পর্যন্ত মেনে নিয়েছি। আরও কিছু আছে কি না- সেটা আমার শুনতে হবে। আমি সংঘাত চাই না।'
শনিবার গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে সরকারপ্রধান এ আগ্রহের কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আপনাদের সামনে আমি বলছি, দেশবাসীর সামনে বলছি, কখনোই আমি দরজা বন্ধ করিনি। গণভবনের দরজা খোলা, যখনই আন্দোলনকারীরা বসতে চায়- আমি আবারও বলছি, আন্দোলনকারীরা যদি আসতে চায়, যে কোনো সময় আসতে চায়- আমি রাজি আছি, আলোচনা করতে পারে। দরকার হলে অভিভাবকদেরও নিয়ে আসতে পারে।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'সর্বজনীন পেনশন স্কিম- এটা কিন্তু ২০০৮ সালে আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে ছিল, এটা আমরা করব। বহু সময় নিয়ে চিন্তাভাবনা করে পেনশন স্কিমটা চালু করেছি। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য আমরা বিভিন্ন সুবিধা দিয়েছি।
'বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং প্রজাতন্ত্রের সব বেতনভুক্ত কর্মচারীদের
সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিল করে দিয়েছি। একেবারে বাতিল করে দিয়েছি।'
আন্দোলনের মধ্যে ঘটা সহিংসতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বিচারবিভাগীয় যে তদন্ত কমিটি আমি করেছিলাম, আমি কিন্তু কারও দাবির অপেক্ষা করিনি। আমি চাই, যারাই এর সঙ্গে জড়িত- সে যেই হোক, সে পুলিশই হোক বা অন্য যে কেউই হোক, অস্ত্রধারী হোক বা যে কেউই হোক; আমি চাই সবারই তদন্ত হোক, বিচার হোক।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই যে জ্বালাও-পোড়াও, শুধু ঢাকা না- যেসব জায়গায় এই ধংসাত্মক কর্মকান্ড হয়েছে- এর তদন্ত করে যথাযথ বিচার হবে। তার জন্য যে দুজন জুডিশিয়াল নিয়োগ দিয়েছিলাম, তার সঙ্গে আরও একজন- তিনজন সদস্য করে তাদের কর্মপরিধিটাও বাড়ালাম, সময়টাও বৃদ্ধি করে দিলাম; যাতে যথাযথভাবে এর তদন্ত হয়।'
সরকারপ্রধান বলেন, 'আমি চাই, এ ধরনের অন্যায়, হত্যাকান্ড যারা ঘটায় তারা তো আমার দেশের নাগরিক; সে পুলিশ হোক- শিশু হোক, ডাকাত হোক, ছাত্র হোক- এর তদন্ত হয়ে যথাযথ বিচার হবে। হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হবে।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সে যেই হোক, তার বিচার করা হবে; যারা জড়িত- তদন্ত করেই বের করা হবে।'
'যারা অস্ত্রধারী, যেমন রংপুরে একটা ঘটনা ঘটেছে, যে পুলিশ দায়ী- সেই পুলিশকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে এবং তার বিচার হবে। ইতোমধ্যে রংপুরের পুলিশকে সাসপেন্ড করে দিয়েছি।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'অ্যারেস্ট যাদের করা হয়েছে, তাদের মধ্যে পরীক্ষার্থী যারা ছিল- তাদের সবাইকে জামিন দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।'
'আমি এটাও নির্দেশ দিয়েছি- এদের মধ্যে নিরীহ ছাত্র- যারা যারা একেবারে খুনের সঙ্গে জড়িত না, বা ধ্বংসাত্মক কাজের সঙ্গে জড়িত না; তাদের মুক্তি দেওয়া শুরু হবে, ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। যারা যারা চিহ্নিত দোষী তারা থাকবে, বাকিরা যাতে মুক্তি পায়, সে ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়েছি।'
আ'লীগের তিন
নেতাকে দায়িত্ব
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শনিবার সকালে ধানমন্ডিতে দলটির সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে তারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন নেতা হলেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। আলোচনা করে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শুক্রবার রাতে গণভবনে এক জরুরি বৈঠকে তিন নেতাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা করার দায়িত্ব দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। শনিবার সকালে তারা ধানমন্ডির কার্যালয়ে আসেন। পরে দলের সধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এলে তার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন।
জানতে চাইলে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, 'আমরা বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করার জন্য আলোচনা করব।'
এ সময় বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাকসহ সাতজন সাংগঠনিক সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক, উপদপ্তর সম্পাদকও ছিলেন।
এ বৈঠকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলেও সমন্বয়কদের সঙ্গে কখন বা কীভাবে আলোচনা হবে, সে ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি।
এদিকে ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে যুবমহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলির নেতৃত্বে নেত্রীরা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীকে অবস্থান করতে দেখা গেছে।