বেতন গ্রেড উন্নীত না হওয়ায় কারা প্রশাসনে হতাশা

প্রকাশ | ০২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

বিশেষ প্রতিনিধি
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সরকারি সব ডিপার্টমেন্টের পদ আপগ্রেড করা হলেও কারা বিভাগ তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে কারা বিভাগের পদসমূহ আপগ্রেড করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা নাকচ করে দিয়েছে। এতে কারারক্ষীসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, কারা অধিদপ্তরের পদসমূহের বেতনগ্রেড উন্নীতকরণের প্রস্তাব পাঠানোর পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়- কারা অধিদপ্তর মূলত কোনো বাহিনী নয় বিধায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওয়াতধীন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদসোপনের সঙ্গে কারা অধিদপ্তরের পদসোপন তুলনাযোগ্য নয়। এছাড়া কারা অধিদপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামো অন্যান্য দপ্তর/সংস্থার সাংগঠনিক কাঠামো থেকে ভিন্নতর। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ থেকে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি পাঠানো প্রস্তাবে উলিস্নখিত যুক্তিতে কারা অধিদপ্তরের পদসমূহের বেতনগ্রেড উন্নীতকরণের যৌক্তিকতা নেই। গত ১৭ এপ্রিল জনপ্রশাসনের উপসচিব মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, 'কারা অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদের বেতনগ্রেড উন্নীতকরণের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অসম্মতি নির্দেশক্রমে জ্ঞাপন করা হলো।' এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা ও সদস্য হতাশা প্রকাশ করে বলেন, কারা বিভাগের উচ্চ পদে নিজস্ব কর্মকর্তা না থাকায় তদবিরের অভাবে তারা নিম্ন গ্রেডে রয়ে গেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি পাঠানো প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যে যুক্তিতে নাকচ করেছে, তাতে তাদেরকে হেয় করা হয়েছে। তাদের ভাষ্য, তারা অন্যান্য ইউনিফর্মধারী বাহিনীর মতো দিনরাতের ডিউটিকালীন সময় ইউনিফর্ম ও বুট পরে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়সহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। তারা অস্ত্র চালানোর ট্রেনিংসহ ৬ মাস কঠোর প্রশিক্ষণ নেন। তাদেরকে অস্ত্র-গোলাবারুদ পাহারা দিতে হয়। অথচ বাংলাদেশের সব ইউনিফর্মধারী ডিপার্টমেন্টের সদস্যরা অবসরকালীন রেশন পেলেও ইউনিফর্মধারী জেল ডিপার্টমেন্ট তা থেকে বঞ্চিত। প্রসঙ্গত, কারা অধিদপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের, সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনস্ত একটি প্রতিষ্ঠান, যা দেশের ৬৮টি কারাগার তথা এর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বন্দিদেরকে প্রত?্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক এবং কর্নেল পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা কারা অধিদপ্তরে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন। কারা অধিদপ্তরের অধীনে ৮টি বিভাগে তথা বিভাগীয় সদর দপ্তরে আটজন কারা উপ-মহাপরিদর্শক রয়েছেন। এ আটটির মধ্যে কারা উপ-মহাপরিদর্শক, ঢাকা বিভাগ, ঢাকার অধীনে সতেরটি কারাগার। কারা উপ-মহাপরিদর্শক, ময়মনসিংহ বিভাগ, ময়মনসিংহের অধীনে আছে চারটি কারাগার। কারা উপ-মহাপরিদর্শক, রাজশাহীর অধীনে আটটি কারাগার এবং রংপুর বিভাগে আটটি কারাগার রয়েছে। এগারোটি কারাগার নিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগ গঠিত, যার বিভাগীয় সদর দপ্তর চট্টগ্রামে অবস্থিত। সিলেট বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয়ের অধীনে ৪টি কারাগার রয়েছে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগে যথাক্রমে দশটি ও ছয়টি কারাগার অবস্থিত। বাংলাদেশে বর্তমানে ৬৮টি কারাগার রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার এবং ৫৫টি জেলা কারাগার। কেন্দ্রীয় কারাগারে সিনিয়র জেল সুপার সংশ্লিষ্ট কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জেলা কারাগারে জেল সুপার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও প্রতিটি কারাগারে জেলার চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং ডেপুটি জেলার সহকারী এক্সিকিউটিভ অফিসার ও সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর, সর্বপ্রধান কারারক্ষী, প্রধান কারারক্ষী, সহকারী প্রধান কারারক্ষী, কারারক্ষীগণ সার্বিক কারা নিরাপত্তাসহ ঊর্ধ্বতন এর নির্দেশনাসমূহ যথাযথ পালনের জন্য সহযোগিতা করে থাকেন।