ডিবি গেটে বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ
অবৈধভাবে আটকদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে
প্রকাশ | ০২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে শুধু নয়, ঢাকাসহ সারাদেশে আটক সব শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিক যাদের বিনা কারণে আটক করা হয়েছে তাদের ছেড়ে দিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানান তারা।
এদিকে, ডিবি হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে এদিন বেলা দেড়টার কিছু পর ছেড়ে দেওয়া হয়। বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, এই ছয় শিক্ষার্থী যাতে স্বাধীন পরিবেশে, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।
\হকোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যার বিচার দাবি করেন বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। এ ক্ষেত্রে তারা জাতিসংঘের মাধ্যমে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত দাবি করেন।
অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকাসহ সারাদেশে আটক ছাত্র-শিক্ষক, সাধারণ মানুষ বিনা বিচারে আটক ও আইনানুগ ব্যবস্থা ছাড়া আটকদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। এটা হচ্ছে আমাদের প্রধান দাবি।
তিনি আরও বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সম্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা খুশি কিন্তু সন্তুষ্ট নই। কারণ এখনো ঢাকাসহ সারাদেশে আটক ছাত্র-শিক্ষক, সাধারণ মানুষ বিনা বিচারে আটক আছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'আমরা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি পুলিশ চাই না। আমরা বাংলাদেশের পুলিশ চাই। আপনার (পুলিশ) জনগণের জন্য কাজ করবেন। বাংলাদেশের পুলিশ হবেন।'
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী
\হঅধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, 'কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সম্বয়কের মুক্তির জন্য এখানে এসে শুনলাম তাদের নাকি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি না তারা আসলে নিরাপদে আছে কি না। সারাদেশে অজস্র কারাগার গড়ে তোলা হয়েছে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা আটকের মাধ্যমে। জুলাইয়ের হত্যাকান্ডে যারা প্রাণ হারিয়েছে সেই আন্দোলনের হাজার হাজার ছেলেমেয়েকে বস্নক রেইড দিয়ে কারাগারগুলো ভরে ফেলা হয়েছে। এই অবস্থা থামাতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, সমন্বয়কদের যেমন ছেড়ে দিয়েছেন সব শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিকদেরও ছেড়ে দিতে হবে। সব দেশের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সরকারে বসেছেন। আমাদের সন্তানদের রক্তে রঞ্জিত করার জন্য আপনাদের ওইখানে বসিয়ে রাখা হয়নি। সব কারফিউ তুলে নেবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তুলে নেবেন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। মানুষের মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। তা আটকে রাখার অধিকার আপনাদের কারো নেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মির্জা তাসলিমা সুলতানা বলেন, আমাদের অনেক শিক্ষার্থী কারাগারে। আটকে রাখা সব শিক্ষার্থীকে মুক্তি দিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের সব শিক্ষার্থীকে যদি ছেড়ে দেওয়া না হয়, যদি হত্যার বিচার করা না হয়, যদি অবিলম্বে শিক্ষাঙ্গন খুলে দেওয়া না হয় তাহলে আমাদের বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আরও কঠোর ও অব্যাহত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী বলেন, আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিকাল ৩টায় 'দ্রোহ যাত্রা' নামে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশে ছাত্র, শিক্ষক ও সুধী সমাজ অংশগ্রহণ করবে।
মানববন্ধনে আরও অংশ নেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, মানবাধিকারকর্মী শিরীন হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গীতি আরা নাসরীন, সরকারি সংস্থা উবিনীগর (উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা) নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ নূর ও সদস্য রুমি প্রভা প্রমুখ।