কোটা সংস্কার আন্দোলনে তৃতীয় শক্তির হত্যাযজ্ঞ চালানোর অভিযোগকে সরকারের 'মিথ্যাচার' বলে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সারা বিশ্বের মানুষ দেখেছে ছাত্রসহ সাধারণ জনতার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। তা ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারি দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগের হাতে। তারপরেও সরকার শাক দিয়ে মাছ ঢাকার জন্য এই মিথ্যাচারের কোরাস গেয়েই চলেছে।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ এসব কথা বলেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা, গুলি, দমন-নিপীড়ন, গ্রেপ্তার, নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ বিবৃতি দেন বিএনপির মহাসচিব।
হত্যাকান্ডের জন্য 'তৃতীয় শক্তি' না খুঁজে নিজেদের অপশক্তিকে চিহ্নিত করতে এবং সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, অতি দ্রম্নত পদত্যাগ করে জনতার ক্ষমতা জনতার
কাছে ফিরিয়ে দিন। নির্যাতন যত বৃদ্ধি পাবে গণপ্রতিরোধ তত দুর্বার হবে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকার এবং সরকারি বাহিনী এমনভাবে মিথ্যাচারে নিমজ্জিত হয়ে গেছে যে, সারা বিশ্বের মানুষ যেখানে দেখেছে আবু সাঈদকে পুলিশ সরাসরি সামনে থেকে গুলি করে হত্যা করেছে, সেই মামলায় আসামি করে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছে রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র আলিফ শাহারিয়ার মাহিমকে। এই বর্বর অবৈধ সরকার সভ্য মানুষের উপদেশ কখনই গ্রহণ করবে না। কারণ তারা অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গণহত্যা চালিয়ে বর্বর শাসন কায়েম করে যেভাবেই হোক ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার সুপরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে ছাত্র-জনতার বিপক্ষে দাঁড় করাচ্ছে, যা রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত। দেশের, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সকল দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও ব্যক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে এই গণতন্ত্রবিনাশী, লুটেরা, বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখলকারী, খুনি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে আসতে হবে।
বিবৃতিতে এ দেশের আপামর জনতা ছাত্র-যুবকসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষের প্রতি আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, দেশের আনাচে-কানাচে ঘরে ঘরে আজ খুনি সরকারের পদত্যাগের দাবি উচ্চারিত হচ্ছে। গণতন্ত্র হত্যাকারী, জন-অধিকার হরণকারী, জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব বিপন্নকারী সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন গণহত্যা ও নিষ্ঠুর দমন-নিপীড়ন চালিয়েছে। এই সরকার আজ রাষ্ট্রপতি-প্রাণঘাতী সরকারে পরিণত হয়েছে। গণধিক্কৃত সরকারকে বিদায় করে জাতির সব সমস্যা সমাধানের রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না এই শাসকগোষ্ঠী।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার এতই ভীতসন্ত্রস্ত এবং জনবিচ্ছিন্ন হয়েছে যে তারা নিজেরাই বলছেন, শ্রীলংকার মতো গণভবন দখল করে নেবে জনগণ এবং সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। সেই ভয়ে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অপব্যবহার করে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের প্রতি সরকারের আদেশ, নির্দেশ, চাপ উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়ন থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানান তিনি।