বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১
আলোচনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা

জামায়াতের মোকাবিলা 'জঙ্গি সংগঠন' হিসেবে

যাযাদি ডেস্ক
  ০২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতারা বৃহস্পতিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে 'জাতীয় শোক দিবস' উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভার শুরুতে ১৫ আগস্টে নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন -ফোকাস বাংলা

জামায়াত-শিবির 'আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে ধ্বংসের চেষ্টা করবে' মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'এদেরকে মোকাবিলা করতে হবে 'জঙ্গি সংগঠন' হিসেবে।'

বৃহস্পতিবার রাজধানীর খামারবাড়ির কেআইবি ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এরা তো জঙ্গিবাদি হিসেবে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে আবার ধ্বংস করার চেষ্টা করবে। সেখানেও জঙ্গি সংগঠন হিসেবে এদেরকে মোকাবিলা করা ও মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টা সকলে মিলে করতে হবে।'

'বাংলার মাটিতে জঙ্গিদের ঠাঁই হবে না' উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'সেইভাবে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আমি দেশবাসীকে সজাগ থাকতে বলব, তাদের সহযোগিতা চাই।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি জানি বার বার আঘাত আসবে, আমি পরোয়া করি না। আলস্নাহ জীবন দিয়েছে, একদিন নিয়েও যাবে। কিন্তু যেখানে মানুষের জন্য কল্যাণের কাজ, সে কল্যাণের কাজ আমরা করেই যাব।'

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনার স্মরণে শোকের মাসের কর্মসূচি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। সে কথা তুলে ধরে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, '১ আগস্ট রক্তদান কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা শোকের মাস শুরু করেছি। সকল সংগঠনের নেতাদের এই শোকের মাসে শুধু শোক পালন নয়, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে জাতির পিতার আদর্শ ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতির পিতা তো এ জাতির জন্য কাজ করে গেছেন। কাফনের কাপড় ছাড়া কিছুই নিয়ে যাননি। শুধু দিয়েই গেছেন। তার সেই আদর্শ আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে।'

যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনের প্রতিবাদরত শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের

ওপর সরকারি সংস্থার হামলার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমেরিকায় যেভাবে মেরেধরে শিক্ষকদের রাস্তার ওপর ফেলে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে হার্ডলাইনে গিয়ে আন্দোলন দমন করেছিল, তার সরকার সে পথে যায়নি এবং শক্তিও প্রয়োগ করেনি; বরং তাদের দাবি মেনে নিয়েছে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'দেশব্যাপী মিথ্যা অপপ্রচার সমানে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমি ক্ষমতায় থেকে মানুষের জীবন নেব, সেটা তো কখনো হতে পারে না।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'তারপরও আজ বাংলাদেশে এতগুলো প্রাণ যে ঝরে গেল, এর দায়দায়িত্ব কার? একটা জিনিস গেলে আবার গড়ে তোলা যায়, কিন্তু জীবন গেলে তো আর ফিরে পাওয়া যায় না।'

এজন্যই আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বানের পাশাপাশি ঘটনাগুলোর তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট বিচার বিভাগীয় কমিটি করে দেওয়া হয়েছে বলে উলেস্নখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুর নাহার লাইলী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি। অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠান শেষে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শহীদ ও সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

'সহিংসতায় শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে

ব্যবহার করেছে জামায়াত-শিবির'

এদিকে, বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত অ্যান্তেনিও অ্যালেসান্দ্রো সৌজন্য সাক্ষাত করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব মো. নুরএলাহি মিনা সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

'কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতায় জামায়াত-শিবির তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে' বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'তারা (জামায়াত-শিবির) ছাত্রদের শিল্ড হিসেবে ব্যবহার করেছে। জামায়াত-শিবির, বিএনপি আগুন দিয়ে পোড়ানো, গণহত্যায় অভ্যস্ত।'

বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন ধ্বংসসহ সাম্প্রতিক সহিংসতায় ক্ষয়ক্ষতির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

উপ-প্রেস সচিব মো. নুরএলাহি মিনা বলেন, ইতালির রাষ্ট্রদূত বলেছেন, সহিংসতাকারীরা বাংলাদেশের যে আধুনিকায়নের প্রতীকগুলো আছে সেগুলোকে তারা টার্গেট করে হামলা করেছে।

ইতালির রাষ্ট্রদূত জনগণের সম্পদ ধ্বংস ও জীবনহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

অ্যান্তেনিও অ্যালেসান্দ্রোর সঙ্গে আলাপে আহতদের দেখতে হাসপাতাল যাওয়ার কথা ও তাদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার কথা উলেস্নখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার উপ-প্রেস সচিব জানান, রাষ্ট্রদূত বলেছেন সম্পদ ধ্বংস বা গোটা বিষয়ের যেন বিচার এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।

নুরএলাহি মিনা বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতা প্রধানমন্ত্রী যেভাবে হ্যান্ডেল (সামাল) করেছেন ইতালির রাষ্ট্রদূত তার প্রশংসা করেছেন।

এছাড়া হলি আর্টিজানের পরে সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে এবং বাস্তবায়ন করেছে ইতালির রাষ্ট্রদূত তার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব জানান, ইতালির রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন সাম্প্রতিক এই ঘটনার ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারের সন্ত্রাস দমন কার্যক্রম এগিয়ে যাবে। বিভিন্ন বিক্ষোভ সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিতে ইতালি আগ্রহী বলে জানান নুরএলাহি মিনা।

পুলিশের প্রশিক্ষণ বিষয়ে ইতালির প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন জানিয়ে নুরএলাহি মিনা বলেন, উনি বলেছেন যে এটা ভালো প্রস্তাব। আমরা সামনের দিনগুলোয় এটা কীভাবে করা যায় সে বিষয়ে অবশ্যই কথা বলব।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতার কথা তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে ইতালির ঐতিহাসিক এবং চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উলেস্নখ করেন রাষ্ট্রদূত অ্যান্তেনিও অ্যালেসান্দ্রো।

রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতালিতে যে দুই লাখের মতো প্রবাসী আছে তারা একটা ব্রিজ (সেতুবন্ধন)। তারা উভয় দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাব। বিশেষ করে জ্বালানি, এসএমই, স্পেস টেকনোলজি, জাহাজ নির্মাণ সেক্টরে কাজ করব।

বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে বৈধ অভিবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন অ্যান্তেনিও অ্যালেসান্দ্রো।

সৌজন্য সাক্ষাতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে