আজ আগস্টের প্রথম দিন। ১৯৭৫ সালের এই মাসেই সপরিবারে শাহাদতবরণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৫ আগস্টে নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞের ক্ষত যেন আজও বাঙালি বয়ে বেড়াচ্ছে। সেদিনের পর থেকেই আগস্ট মানে শোক আর কান্নায় মোড়ানো একমাস।
এ মাসেই ঘাতকরা কেড়ে নিয়েছিল বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের প্রাণ। তাই আগস্ট জুড়েই নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হয় জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানকে। সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি মাসব্যাপী পালিত হয় রাষ্ট্রীয় নানা কর্মসূচি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে হত্যা করা হয়েছিল। ইতিহাসের এই ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি, তার সহধর্মিণী আরজু মণি ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন।
সে সময় বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছিল গোটা
বিশ্বে, ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর নোবেল জয়ী পশ্চিম জার্মানির নেতা উইলি ব্রানডিট বলেছিলেন, 'মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে, তারা যে কোনো জঘন্য কাজও করতে পারে।'
ভারত বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক নীরোদ শ্রী চৌধুরী বাঙালিদের 'বিশ্বাসঘাতক' হিসেবে বর্ণনা করে বলেছিলেন, 'বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে।'
'দ্য টাইমস অব লন্ডন'-এর ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় উলেস্নখ করা হয় 'সবকিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সব সময় স্মরণ করা হবে। কারণ, তাকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই।' একইদিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়, 'বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকান্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।'
তবে দেরিতে হলেও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে এবং রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতি কিছুটা হলেও কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।