বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া ইরানে নিহত

যাযাদি ডেস্ক
  ০১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
ইসমাইল হানিয়া

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া নিহত হয়েছেন। ইরানে এক হামলায় ইসমাইল হানিয়া নিহত হন বলে নিশ্চিত করেছে হামাস। ইরানের বিপস্নবী গার্ড বাহিনীও হামাসের এ শীর্ষ নেতার নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে।

ইরানের বিপস্নবী গার্ড বাহিনী ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার বিষয়ে এক বিবৃতি দেয়। তবে তিনি কীভাবে নিহত হয়েছেন, সে বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য উলেস্নখ করা হয়নি।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বুধবার সকালে ইসমাইল হানিয়ার নিহত হওয়ার খবর প্রচার করে। টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, রাজধানী তেহরানে হামলায় ইসমাইল হানিয়ার দেহরক্ষীদের একজনও নিহত হন।

সৌদি গণমাধ্যম আল হাদাৎ বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার রাতে তেহরানে হানিয়ার বাসভবনে নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হেনে এই হামাস নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।

গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় রাত প্রায় ২টার দিকে ক্ষেপণাস্ত্রটি হানিয়া যে ভবনে ছিলেন সেখানে আঘাত হানে।

ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার ঘটনায় জ্যেষ্ঠ হামাস কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি

\হইসরায়েলের ওপর এ হত্যাকান্ডের দায় চাপিয়ে এ ঘটনাকে মারাত্মক উত্তেজনাবৃদ্ধি বলে আখ্যা দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, হামাস একটি ধারণা, একটি প্রতিষ্ঠান। এটি কোনো ব্যক্তি নয়। ত্যাগ স্বীকার না করে হামাস তার পথেই চলবে এবং আমরা বিজয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী।

ইসরায়েলের ঐতিহ্যমন্ত্রী আমিচাই এলিয়াহু বলেছেন, নোংরা পৃথিবীকে পরিষ্কার করার এটাই সঠিক উপায়। আর কোনো কাল্পনিক শান্তি কিংবা সমর্পণ চুক্তি নয়। আর কোনো করুণা নেই। হানিয়ার মৃতু্য পৃথিবীকে আরও একটু সুন্দর করে তুলেছে।

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এ হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এ ঘটনাকে তিনি কাপুরুষোচিত কাজ এবং একটি বিপজ্জনক পরিবর্তন বলে আখ্যা দিয়েছেন। বার্তাসংস্থা ওয়াফা এমনটি জানিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং ইসরায়েলি দখলদারত্বের মুখে ধৈর্য ধরার পাশাপাশি অবিচল থাকার আহ্বান জানান।

রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বগদানভ বলেন, এটি নিশ্চিতভাবেই অগ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক হত্যাকান্ড। এটি আরও উত্তেজনা বাড়িয়ে দেবে।

ইয়েমেনের হুতি সুপ্রিম রেভলু্যশনারি কমিটির প্রধান মোহাম্মদ আলি আল-হুতি বলছেন, ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা একটি জঘন্য সন্ত্রাসী অপরাধ এবং এটি আইন ও আদর্শ মূল্যবোধের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, হত্যাকান্ডের শিকার হামাস নেতার রক্ত বৃথা যাবে না।

ইসমাইল হানিয়ার মৃতু্য এবং বৈরুতে হিজবুলস্নাহ কমান্ডারকে ইসরায়েলের হত্যার দাবির বিষয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'আমি মনে করি না যুদ্ধ অনিবার্য। কূটনীতির জন্য সবসময় জায়গা এবং সুযোগ রয়েছে।'

যে হামলায় হানিয়া নিহত হয়েছেন, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে অস্টিন বলেন, 'দেওয়ার মতো আর কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।'

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, হানিয়ার হত্যাকান্ড আবারও প্রমাণ করে যে, ইসরায়েলের নেতানিয়াহু সরকারের শান্তি অর্জনের কোনো ইচ্ছা নেই। বার্তা সংস্থা আনাদোলু এমনটি জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলকে থামাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোনো পদক্ষেপ না নিলে এ অঞ্চলে আরও বড় সংঘাত দেখা দেবে।

কে এই ইসমাইল হানিয়া

ইসমাইল হানিয়া ১৯৬৩ সালে গাজার আল-শাতি শরণার্থীশিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের ১৫ বছর আগে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ওই সময় হানিয়ার পরিবার গাজা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে আশকেলন শহরে পালিয়ে যায়।

তরুণ বয়সে গাজা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের ছাত্র শাখার সদস্য ছিলেন ইসমাইল হানিয়া। ১৯৮৭ সালে হামাসের প্রতিষ্ঠালগ্নে সংগঠনটিতে যোগ দেন তিনি। ওই সময় ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদারির বিরুদ্ধে ইসলামিক আন্দোলন ইন্তিফাদার প্রথম ধাপ শুরু হয়, যা শেষ হয়েছিল ১৯৯৩ সালে।

প্রথম ইন্তিফাদার সময় হানিয়াকে বেশ কয়েকবার আটক করে কারাদন্ড দেয় ইসরায়েল। পরে তাকে দক্ষিণ লেবাননে ছয় মাসের জন্য নির্বাসনের পাঠানো হয়।

২০০৩ সালে হানিয়া ও হামাসের প্রতিষ্ঠাতা এবং আদর্শিক নেতা শেখ আহমাদ ইয়াসিনকে একসঙ্গে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তারা যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, সেখানে বোমা নিক্ষেপ করে একটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। যদিও সেখান থেকে তারা জীবিত অবস্থায় বেরিয়ে আসেন। এর এক বছর পর ইয়াসিনকে হত্যা করা হয়।

ফিলিস্তিনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী

২০১৭ সালে ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক বু্যরোর প্রধান নির্বাচিত হন হানিয়া। তিনি খালিদ মিশালের স্থলাভিষিক্ত হন। অবশ্য এর আগে থেকেই তিনি বহুল পরিচিত মুখ ছিলেন। বিশেষ করে ২০০৬ সালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আন্তর্জাতিক মহলে তার নামডাক বাড়তে থাকে। ওই বছর সংসদ নির্বাচনে বেশির ভাগ আসন পেয়ে জয়ী হয় হামাস। ইসমাইল হানিয়াকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

কিন্তু খুব দ্রম্নতই মাহমুদ আব্বাসের দল ফাত্তাহর সঙ্গে হামাসের ক্ষমতা ভাগাভাগির ব্যবস্থাপনায় ফাটল ধরে। দু'পক্ষের মধ্যে বিরোধ চরমে ওঠে। সপ্তাহব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গাজায় ফাত্তাহর কার্যক্রম বন্ধ করা হলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে হানিয়াকে সরিয়ে দেওয়া হয়। জবাবে ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্টের অনুগতদের সরিয়ে গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় হামাস।

হামাসের প্রতিপক্ষসহ ফিলিস্তিনের বিভিন্ন রাজনৈতিক উপদলের প্রধানদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে ছিলেন হানিয়া।

অনেক দিন ধরে নির্বাসিত জীবন যাপন করছিলেন হানিয়া। তিনি তুরস্ক ও কাতারে তার নির্বাসনকাল কাটাচ্ছিলেন। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার পর হামাসের এক গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, টেলিভিশনে হামাস যোদ্ধাদের অভিযানের চিত্র দেখছেন হানিয়া। এ বিজয়ে আলস্নাহকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রার্থনা করতেও দেখা যায় তাকে।

ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, হামাসের ওই হামলায় ১ হাজার ১৯৭ জন নিহত হন। ওই দিন হামাস যোদ্ধারা ২৫১ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে আসেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, জিম্মিদের মধ্যে ১১১ জন এখনো বন্দি। ৩৯ জন মারা গেছেন।

এদিকে হামাসের হামলার জবাবে গাজায় তান্ডব চালাচ্ছে ইসরায়েল। এ পর্যন্ত সেখানে প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানান, গত জুনে আল-শাতি এলাকায় হানিয়ার পারিবারিক বাড়িতে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে তার বোনসহ ১০ জন নিহত হন। এ ছাড়া হানিয়ার তিন ছেলে ও চার নাতি-নাতনি গত এপ্রিলে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন। ওই সময় হানিয়া বলেছিলেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে তার পরিবারের ৬০ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।

এ যুদ্ধ গাজার বিস্তৃত অঞ্চল ধ্বংসস্তত্মূপে পরিণত হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে মানবিক সংকট। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বেশ কিছু কূটনীতিক মিশনে সফর করেন হানিয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে