বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

সহিংসতার তদন্তে জাতিসংঘের সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী

যাযাদি ডেস্ক
  ০১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার কুর্মিটোলা হাসপাতালে সহিংসতায় আহতদের সঙ্গে কথা বলেন -ফোকাস বাংলা

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণহানি ও সহিংসতার সুষ্ঠু তদন্তে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে 'জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৪' উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা জাতিসংঘের কাছে আবেদন করেছি, আমরা আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন সংস্থা, বিশেষ করে বিদেশি, তাদের কাছেও আমরা সহযোগিতা চাই যে ঘটনার যথাযথ সুষ্ঠু তদন্ত এবং যারা এর সঙ্গে দোষী তাদের সাজার ব্যবস্থা (হয়)।'

এই ঘটনায় সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে আমরা জুডিসিয়াল কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কারও দাবির অপেক্ষায় আমি থাকিনি। আগেই জুডিসিয়াল কমিটি করে দিয়ে, আজকে আবার আমরা নির্দেশ দিয়েছি আমরা একজন জজ সাহেবকে দিয়ে করেছি...সেটা আমি বলেছি আরও দুইজন জজ সাহেবকে দিয়ে, আরও দুইজন লোকবল বৃদ্ধি করে দিয়ে এবং তাদের তদন্তের পরিধি বাড়ানো।'

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গড়ে ওঠা আন্দোলনে গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘাত হয় আন্দোলনকারীদের। পরের দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় সংঘর্ষে এক ছাত্রলীগ কর্মী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, চট্টগ্রামে মুরাদনগরে ছাত্রদল নেতা, পথচারীসহ তিনজন এবং রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃতু্য হয়। আবু সাঈদ নামের ইংরেজি বিভাগের সেই ছাত্রকে পুলিশের গুলি করার ছবি ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ হয় ছাত্ররা। এরপর পর্যায়ক্রমে সহিংসতায় সরকারের হিসাবে ১৫০ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে জানানো হয়। যদিও গণমাধ্যমে দুই শতাধিক মৃতু্যর কথা উঠে আসছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিজের কোনো ঘাটতি ছিল না দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি বারবার আলোচনা, তাদের দাবি মানা... আর তাদের দাবি মানব কি, যেটা আমি করে দিয়েছি সেটাই তো, এটা তো আমারই করা (কোটা বাতিল করে পরিপত্র), ইসু্যটা তো আমারই।'

তিনি বলেন, 'আপিল করা হয়েছে, অ্যাপিলেট ডিভিশনে, তারপর এই যে একটা ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে দেশকে পেছনে টেনে নেওয়ার এই চক্রান্তে যারা জড়িত, সেটা আপনাদের খুঁজে বের করা উচিত।'

তিনি বলেন, 'ওই একাত্তরে যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল, তাদের চক্রান্ত বারবার আমাদের দেশকে পিছিয়ে নিয়ে গেছে। এটা হচ্ছে সবচেয়ে কষ্টের, সবচেয়ে দুঃখের।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'জানি না অপরাধটা কী ছিল আমার? যে ইসু্যটা নেই সেটা নিয়ে আন্দোলনের নামে এই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করে দেশের অর্জনকে নষ্ট করা, আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করাতে কে কী অর্জন করল সেটাই আমার প্রশ্ন? আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। সেই মর্যাদাকে কেন নষ্ট করা হলো? এর বিচারের ভার দেশবাসীর কাছে দিলাম।'

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ছয় বছর পর ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফেরার পর তাকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টার কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আমি তো জীবনের পরোয়া করিনি। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। দেশকে দারিদ্র্য মুক্ত করার পাশাপাশি ভূমিহীন-গৃহহীনকে বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়া, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে মানুষের জীবনযাপনকে আরও সহজ করে দেওয়াই আমার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু যেসব জিনিস মানুষকে সেবা দেয়, সেগুলোই হামলাকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলো।'

নিজে স্বজন হারানোর কারণে স্বজন হারাবার বেদনা বোঝেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'তাই যারা আপনজন হারিয়েছেন তাদের প্রতি আমার সহমর্মিতা জানাচ্ছি। স্থাপনা যে ধ্বংস করেছে সেগুলো তো পুনর্গঠন করা যাবে, কিন্তু যে প্রাণগুলো ঝরে গেল সেগুলো তো আমরা আর ফিরে পাব না।'

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সাতটি শাখায় ২২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে 'জাতীয় মৎস্য পদক-২০২৪' তুলে দেন। পুরস্কার হিসেবে ৬টি স্বর্ণ, ৮টি রৌপ্য ও ৮টি ব্রোঞ্জ পদক, সম্মাননা স্মারক এবং অর্থ প্রদান করা হয়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে