র্যাব-পুলিশ-আনসারের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহলের মধ্যেই বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের 'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ-সমাবেশ, আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান ও সড়ক অবরোধে বাধা দিতে গিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিচার্জ, ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল ছুড়েছে। এতে অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ শতাধিক আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের দিকে রওনা হওয়ার সময় পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। একপর্যায়ে ফাঁকা গুলিও ছোড়া হয়। বগুড়ায় শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা পুলিশি বাধায় আদালত চত্বর পর্যন্ত যেতে না পেরে সড়ক অবরোধ করে দুই ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। খুলনা ও বরিশালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাজশাহী কোর্ট এলাকার একটি গলি থেকে আন্দোলনকারীরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়লে তারা সাউন্ড গ্রেনেড ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের 'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ঢাকায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে মিছিল করেন। সেখানে অবস্থান নিয়ে ছাত্র হত্যার বিচার এবং ৬ সমন্বয়কারী ও আটক অন্য শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে নানা সেস্নাগান দেন তারা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা জানান, বুধবার দুপুর ২টার দিকে মাজার গেটে পুলিশের ব্যারিকেড পেরিয়ে আন্দোলনকারীরা আদালত
\হচত্বরে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা সমবেত কণ্ঠে গান পরিবেশন করেন। প্রায় আধা ঘণ্টার মতো সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের সামনে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে দুপুরে শতাধিক শিক্ষার্থী মাজার গেটের সামনে অবস্থান নেন। এর মধ্যে ঢাবি, বুয়েট, নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, গ্রিন ইউনিভার্সিটি ও ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ছিলেন। এ সময় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মিছিল নিয়ে মাজার গেটের সামনে যান। এর আগেই মাজার গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন গেটের বাইরে শিক্ষার্থীরা এবং গেটের ভেতরে আইনজীবীরা সেস্নাগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটকের খবর শুনে কিছু আইনজীবী গেটের পাশের ব্যারিকেড টপকে শিক্ষার্থীদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। পরে কিছু শিক্ষার্থীকে ভেতরে নিয়ে আসেন তারা।
এ সময় আইনজীবী ও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সেস্নাগান দেন। 'তোর কোটা তুই নে, আমার ভাইকে ফেরত দে', 'ছাত্রদের ওপর গুলি কেন, প্রশাসন জবাব দে' ইত্যাদি সেস্নাগান দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণ প্রকম্পিত করে তোলেন। কিছুক্ষণ পর আইনজীবীদের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে চলে আসেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে গিয়ে একটানা 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস' সেস্নাগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় আধা ঘণ্টা পর তারা শিক্ষা ভবনের দিকে চলে যান।
শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, তৈমূর আলম খন্দকার, রুহুল কুদ্দুস কাজল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, মোহাম্মদ আলী প্রমুখ। মাজার গেটের ভেতরে দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম, শারমিন মুরশিদ, রেহেনুমা আহমেদ আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন। পুলিশ হাইকোর্টের সামনে থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে বলে আন্দোলনকারীরা দাবি করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা 'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচিতে অংশ নিতে জমা হন কার্জন হল এলাকায়। সেখান থেকে তারা হাইকোর্টের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে তারা ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে শহীদ মিনার এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন।
বুধবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি মিছিল হাইকোর্ট অভিমুখে রওনা হলে কার্জন হলের বিপরীত পাশের রাস্তায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশের সঙ্গে এ সময় তাদের বেশ কিছুক্ষণ বাগ্বিতন্ডা হয়। এরপর ঢাবি, বুয়েট এবং বেশ কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে যোগ দেন। পুলিশ তাদের হাইকোর্টের দিকে যেতে না দিলে বেশ কিছুক্ষণ তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও কথা কাটাকাটির পর তারা দোয়েল চত্বরে আসেন। সেখানে কিছুক্ষণ বিক্ষোভের পর তারা একটি মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে যান। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা 'আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে', 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' সেস্নাগান দেন।
'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচি পালনে মিরপুরে মিছিল করেছেন একদল আন্দোলনকারী। বুধবার দেড়টায় মিরপুরের বেনারসি পলিস্নর একটি সড়কে মিছিল করেছে তারা। এ সময় ২০ জনের একটি পুলিশ দল তাদের মোটর সাইকেল দিয়ে ঘিরে রাখে। পরে পুলিশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের ফিরিয়ে দেয়। এর কয়েক মিটার দূরে মিরপুর ১০ নম্বরের প্রধান সড়কে অবস্থান নেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। তারা আন্দোলনকারীদের দেখে প্রতিহত করতে এগিয়ে গেলে মাঝখানে পড়ে পুলিশের ওই দল। পরে দুই পক্ষকেই সরিয়ে দেয় পুলিশ।
ঘটনাস্থলে মিরপুর মডেল থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) বলেন, 'শিক্ষার্থীরা আজকে কীসের আন্দোলনে নেমেছে তারা বলতেই পারে না। তারা (শিক্ষার্থীরা) প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে রাস্তায় ছিল। আমার তাদের বুঝিয়ে যার যার বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। আজকে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দিইনি আমরা। ছাত্রছাত্রীদের ওপর সরকারি দলের নেতাকর্মীদের হামলা, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া সংঘটিত হতে দিইনি।'
এদিকে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ঢাকার নিম্ন আদালতে 'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচি পালন করছেন আইনজীবীরা। তাদের অধিকাংশই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির ভবনের সামনে তাদের কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর বিক্ষোভ মিছিল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে আসে। এ সময় আদালতে পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন থাকতে দেখা যায়। তবে আইনজীবীদের আদালত প্রাঙ্গণে বাধা দিতে দেখা যায়নি।
এর আগে দুপুর ১২টা থেকেই ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রাঙ্গণে বাড়তি পুলিশ সদস্য ও বিজিবি মোতায়েন করতে দেখা গেছে। আদালত প্রাঙ্গণের প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে ও ফটকের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। চলে তলস্নাশি অভিযানও।
এ বিষয়ে আদালতে দায়িত্ব পালন করা লালবাগ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইমরান হোসেন মোলস্না বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আদালতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, যেন নাশকতা না হয়।
টাঙ্গাইলে সড়ক অবরোধ : আদালত এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্দোলন ঘিরে গত কয়েকদিনে সংঘটিত 'গণহত্যা ও নির্যাতনের' ঘটনার তদন্তসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়। এসব দাবি জানিয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপিও দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার সড়ক আধা ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। এ সময় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
দিনাজপুরে আটক ১০ : দিনাজপুরে 'মার্চ ফর জাস্টিস'-এ অংশ নেওয়া ৯ শিক্ষার্থী ও এক অভিভাবককে আটক করেছে পুলিশ। দিনাজপুর শহীদ মিনার সংলগ্ন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। পরে পুলিশ তাদের দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। পুলিশ জানায়, দিনাজপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা বেলা ১১টার দিকে শহরের গোর-ই-শহীদ বড় মাঠে জড়ো হন। এ সময় তাদের কয়েকজনের সঙ্গে অভিভাবকও কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ খবর পেয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর একটি দল ও পুলিশ দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। পরে শিক্ষার্থীরা মাথায় লাল ফিতা বেঁধে শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে জড়ো হয়ে 'তোমার কোটা তুমি নাও, আমাদের ভাইকে ফিরিয়ে দাও'সহ বিভিন্ন সেস্নাগান দেওয়া শুরু করে। সেই সময় ডিবির সদস্যসহ পুলিশের একটি দল সেখানে গিয়ে ৯ শিক্ষার্থীকে আটক করে। আটক এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক এগিয়ে গেলে পুলিশ তাকেও আটক করে।র্
যাব-পুলিশ-আনসারের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহলের মধ্যেই বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের 'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ-সমাবেশ, আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান ও সড়ক অবরোধে বাধা দিতে গিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিচার্জ, ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল ছুড়েছে। এতে অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ শতাধিক আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের দিকে রওনা হওয়ার সময় পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। একপর্যায়ে ফাঁকা গুলিও ছোড়া হয়। বগুড়ায় শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা পুলিশি বাধায় আদালত চত্বর পর্যন্ত যেতে না পেরে সড়ক অবরোধ করে দুই ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। খুলনা ও বরিশালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাজশাহী কোর্ট এলাকার একটি গলি থেকে আন্দোলনকারীরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়লে তারা সাউন্ড গ্রেনেড ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের 'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ঢাকায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে মিছিল করেন। সেখানে অবস্থান নিয়ে ছাত্র হত্যার বিচার এবং ৬ সমন্বয়কারী ও আটক অন্য শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে নানা সেস্নাগান দেন তারা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা জানান, বুধবার দুপুর ২টার দিকে মাজার গেটে পুলিশের ব্যারিকেড পেরিয়ে আন্দোলনকারীরা আদালত
\হচত্বরে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা সমবেত কণ্ঠে গান পরিবেশন করেন। প্রায় আধা ঘণ্টার মতো সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের সামনে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে দুপুরে শতাধিক শিক্ষার্থী মাজার গেটের সামনে অবস্থান নেন। এর মধ্যে ঢাবি, বুয়েট, নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, গ্রিন ইউনিভার্সিটি ও ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ছিলেন। এ সময় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মিছিল নিয়ে মাজার গেটের সামনে যান। এর আগেই মাজার গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন গেটের বাইরে শিক্ষার্থীরা এবং গেটের ভেতরে আইনজীবীরা সেস্নাগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটকের খবর শুনে কিছু আইনজীবী গেটের পাশের ব্যারিকেড টপকে শিক্ষার্থীদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। পরে কিছু শিক্ষার্থীকে ভেতরে নিয়ে আসেন তারা।
এ সময় আইনজীবী ও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সেস্নাগান দেন। 'তোর কোটা তুই নে, আমার ভাইকে ফেরত দে', 'ছাত্রদের ওপর গুলি কেন, প্রশাসন জবাব দে' ইত্যাদি সেস্নাগান দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণ প্রকম্পিত করে তোলেন। কিছুক্ষণ পর আইনজীবীদের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে চলে আসেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে গিয়ে একটানা 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস' সেস্নাগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় আধা ঘণ্টা পর তারা শিক্ষা ভবনের দিকে চলে যান।
শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, তৈমূর আলম খন্দকার, রুহুল কুদ্দুস কাজল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, মোহাম্মদ আলী প্রমুখ। মাজার গেটের ভেতরে দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম, শারমিন মুরশিদ, রেহেনুমা আহমেদ আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন। পুলিশ হাইকোর্টের সামনে থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে বলে আন্দোলনকারীরা দাবি করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা 'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচিতে অংশ নিতে জমা হন কার্জন হল এলাকায়। সেখান থেকে তারা হাইকোর্টের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে তারা ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে শহীদ মিনার এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন।
বুধবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি মিছিল হাইকোর্ট অভিমুখে রওনা হলে কার্জন হলের বিপরীত পাশের রাস্তায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশের সঙ্গে এ সময় তাদের বেশ কিছুক্ষণ বাগ্বিতন্ডা হয়। এরপর ঢাবি, বুয়েট এবং বেশ কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে যোগ দেন। পুলিশ তাদের হাইকোর্টের দিকে যেতে না দিলে বেশ কিছুক্ষণ তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও কথা কাটাকাটির পর তারা দোয়েল চত্বরে আসেন। সেখানে কিছুক্ষণ বিক্ষোভের পর তারা একটি মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে যান। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা 'আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে', 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' সেস্নাগান দেন।
'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচি পালনে মিরপুরে মিছিল করেছেন একদল আন্দোলনকারী। বুধবার দেড়টায় মিরপুরের বেনারসি পলিস্নর একটি সড়কে মিছিল করেছে তারা। এ সময় ২০ জনের একটি পুলিশ দল তাদের মোটর সাইকেল দিয়ে ঘিরে রাখে। পরে পুলিশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের ফিরিয়ে দেয়। এর কয়েক মিটার দূরে মিরপুর ১০ নম্বরের প্রধান সড়কে অবস্থান নেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। তারা আন্দোলনকারীদের দেখে প্রতিহত করতে এগিয়ে গেলে মাঝখানে পড়ে পুলিশের ওই দল। পরে দুই পক্ষকেই সরিয়ে দেয় পুলিশ।
ঘটনাস্থলে মিরপুর মডেল থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) বলেন, 'শিক্ষার্থীরা আজকে কীসের আন্দোলনে নেমেছে তারা বলতেই পারে না। তারা (শিক্ষার্থীরা) প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে রাস্তায় ছিল। আমার তাদের বুঝিয়ে যার যার বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। আজকে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দিইনি আমরা। ছাত্রছাত্রীদের ওপর সরকারি দলের নেতাকর্মীদের হামলা, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া সংঘটিত হতে দিইনি।'
এদিকে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ঢাকার নিম্ন আদালতে 'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচি পালন করছেন আইনজীবীরা। তাদের অধিকাংশই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির ভবনের সামনে তাদের কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর বিক্ষোভ মিছিল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে আসে। এ সময় আদালতে পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন থাকতে দেখা যায়। তবে আইনজীবীদের আদালত প্রাঙ্গণে বাধা দিতে দেখা যায়নি।
এর আগে দুপুর ১২টা থেকেই ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রাঙ্গণে বাড়তি পুলিশ সদস্য ও বিজিবি মোতায়েন করতে দেখা গেছে। আদালত প্রাঙ্গণের প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে ও ফটকের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। চলে তলস্নাশি অভিযানও।
এ বিষয়ে আদালতে দায়িত্ব পালন করা লালবাগ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইমরান হোসেন মোলস্না বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আদালতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, যেন নাশকতা না হয়।
টাঙ্গাইলে সড়ক অবরোধ : আদালত এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্দোলন ঘিরে গত কয়েকদিনে সংঘটিত 'গণহত্যা ও নির্যাতনের' ঘটনার তদন্তসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়। এসব দাবি জানিয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপিও দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার সড়ক আধা ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। এ সময় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
দিনাজপুরে আটক ১০ : দিনাজপুরে 'মার্চ ফর জাস্টিস'-এ অংশ নেওয়া ৯ শিক্ষার্থী ও এক অভিভাবককে আটক করেছে পুলিশ। দিনাজপুর শহীদ মিনার সংলগ্ন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। পরে পুলিশ তাদের দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। পুলিশ জানায়, দিনাজপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা বেলা ১১টার দিকে শহরের গোর-ই-শহীদ বড় মাঠে জড়ো হন। এ সময় তাদের কয়েকজনের সঙ্গে অভিভাবকও কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ খবর পেয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর একটি দল ও পুলিশ দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। পরে শিক্ষার্থীরা মাথায় লাল ফিতা বেঁধে শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে জড়ো হয়ে 'তোমার কোটা তুমি নাও, আমাদের ভাইকে ফিরিয়ে দাও'সহ বিভিন্ন সেস্নাগান দেওয়া শুরু করে। সেই সময় ডিবির সদস্যসহ পুলিশের একটি দল সেখানে গিয়ে ৯ শিক্ষার্থীকে আটক করে। আটক এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক এগিয়ে গেলে পুলিশ তাকেও আটক করে।