কোটা সংস্কার আন্দোলন

হত্যাকান্ড-গণগ্রেপ্তারে জাতিসংঘ ও ইইউ'র উদ্বেগ

প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হাজারো তরুণ ও রাজনৈতিক বিরোধীদের গণগ্রেপ্তারের খবরে জাতিসংঘ মহাসচিব উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছেন। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশে বেআইনি হত্যাকান্ডের নিন্দা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ পরিস্থিতির স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছে। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার জাতিসংঘ মহাসচিবের দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের কার্যালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ের শুরুর দিকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতিটি পড়ে শোনানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সোমবার দেশটিতে নতুন করে শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরুর বিষয়ে তিনি অবগত। তিনি সবাইকে শান্ত ও সংযত থাকতে তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। শিক্ষার্থী আন্দোলন ঘিরে হাজারো তরুণ ও রাজনৈতিক বিরোধীদের গণগ্রেপ্তারের খবরে তিনি উদ্বিগ্ন। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের প্রতি গুরুত্বারোপ করছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের খবরেও তিনি উদ্বিগ্ন। সহিংসতার সব ঘটনা অবিলম্বে স্বচ্ছ-নিরপেক্ষভাবে তদন্তসহ দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে তিনি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা ও নিউইয়র্ক উভয় স্থানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উদ্বেগ জানানো অব্যাহত রাখবে বিশ্ব সংস্থাটি। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে সেনা পাঠানোর ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় দেশ হিসেবে তারা বাংলাদেশকে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তা সমুন্নত রাখার বিষয়টি মনে করিয়ে দিচ্ছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের লোগো-সংবলিত যানবাহন আর বাংলাদেশে মোতায়েন করা হবে না বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘকে জানিয়েছে। তারা বিষয়টি আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে, পুনরাবৃত্তি করছে, জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনকালেই শুধু বিশ্ব সংস্থাটির লোগো-সংবলিত যানবাহন ব্যবহার করবে সেনা-পুলিশ পাঠানো দেশগুলো। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের কার্যালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক বলেন, তরুণ নিরপরাধ ব্যক্তিদের ধরপাকড়, গুলি করা, হেফাজতে থাকা অবস্থায় বিবৃতি দিতে বাধ্য করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকাকে কীভাবে দেখছেন জাতিসংঘ মহাসচিব? বেআইনি হত্যাকান্ডে ইইউ'র উদ্বেগ কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশ সরকারের 'শুট অন সাইট নীতি' এবং বেআইনি হত্যাকান্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। জোসেপ বোরেলকে উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে জানানো হয়, তিনি বলেন, গত ২৭ জুলাই লাওসে আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের যোগ দিয়ে আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধি এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করি। এ সময় সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষের 'শুট অন সাইট নীতি' এবং বেআইনি হত্যাকান্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানাই। তিনি আরও বলেন, আমি বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের হত্যা, সহিংসতা, নির্যাতন, গণগ্রেপ্তার এবং সংঘটিত সম্পত্তির ক্ষতি নিয়েও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এসব ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রতিবাদকারী, সাংবাদিক ও ছোট শিশুসহ অন্যদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত এবং প্রাণঘাতী বল প্রয়োগের অসংখ্য ঘটনার জন্য অবশ্যই পূর্ণ জবাবদিহিতা থাকতে হবে। বোরেল বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া হাজার হাজার লোকের যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিচার করতে হবে। আমরা এ সংকটের প্রেক্ষাপটে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করব। ইইউ-বাংলাদেশ সম্পর্কের মৌলিক বিষয়গুলো মাথায় রেখে সব ধরনের মানবাধিকারকে সম্পূর্ণভাবে সম্মান করা হবে বলে আশা করি। 'স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ' সমাধান চায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে অস্থিরতার 'স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ' সমাধান খোঁজার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। সোমবার দৈনিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখ্য উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, 'বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের বিষয়ে প্রকাশ্যে এবং ব্যক্তিগতভাবে আমরা আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছি এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতার পক্ষে আমাদের অবিচল অবস্থান আমরা পুনর্ব্যক্ত করছি।'