ডলারের বাজারে আবারও অস্থিরতা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার খোলাবাজারে এক ডলার ১২৪ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এটিই ডলারের দামের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে তৈরি হওয়া সাম্প্রতিক পরিস্থিতির আগে খোলাবাজারে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছিল ১২০ টাকা। তখন ব্যাংকগুলোও রেমিট্যান্স কেনায় দর বাড়িয়ে দেয়। তারা ১১৭ টাকা থেকে ১১৮ টাকা ৭০ পয়সা পর্যন্ত ডলার কিনতে শুরু করে। ফলে মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো দাম আরও বাড়িয়ে দেয়। সোমবার মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো ১২১ টাকা ৬০ থেকে ৭০ পয়সায় ডলার কিনে ১২২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছে।
এর আগে টানা ৫ দিন পর গত সপ্তাহের বুধবার অফিস খোলার পর ডলারের বাড়তি চাহিদার কারণে দর বাড়তে শুরু করে। ওই দিন তারা ১২১ টাকা থেকে ১২১ টাকা ১০ পয়সায় কিনে বিক্রি করেন ১২১ টাকা ৫০ পয়সা। মঙ্গলবার সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে ১২৪ টাকায় উঠে যায়।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলোকে বেশি রেটে রেমিট্যান্স কিনতে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বেশি রেমিট্যান্স আহরণ করে এমন কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) এ নির্দেশ দিয়েছে। এরপর থেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলে দাম বাড়তে থাকে। ব্যাংকগুলোতে তখন ডলার রেট সর্বোচ্চ ১১৭ টাকা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশের কারণে বেশ কয়েকটি ব্যাংক ১১৮ টাকা ৭০ পয়সা করে রেমিট্যান্স কিনেছে।
একটি মানিচেঞ্জারের কর্মকর্তা বলেন, মঙ্গলবার ১২৪ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এরপরও ডলারের চাহিদা রয়েছে। ডলার অনেক প্রতিষ্ঠান বিক্রি করছে না। তারা হাতে রেখে দিচ্ছে। প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাবে না এমন কথা শুনা যাচ্ছে। ফলে অনেকে আরও কয়েকদিন দেখতে চায় দাম কোন দিকে যায়।
গত ৮ মে ডলারের দর নির্ধারণের নতুন পদ্ধতি 'ক্রলিং পেগ' চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মাধ্যমে প্রতি ডলারে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা ঘোষণা করা হয়। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ডলারের দর নির্ধারিত ছিল ১১০ টাকা। এর পর থেকে
রেমিট্যান্স দ্রম্নত বাড়ছিল।
চলতি বছরের মে এবং জুন মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। ডলারের দর বাড়ানোর পর মে মাসে আসে ২২৫ কোটি ডলার এবং জুন মাসে ২৫৪ কোটি ডলার। চলতি মাস জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্যাংকিং চ্যানেলে ভালো রেমিট্যান্স এসেছিল। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আর তিন কার্যদিবস সাধারণ ছুটিসহ ৫ দিন ব্যাংক বন্ধের পর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধীরগতি চলে আসে।
চলতি মাস জুলাই এর ১৯ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত ১০ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ২ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত এসেছিল ১৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার। সে হিসাবে জুলাই মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। শুরুর ১৮ দিনের ধারা বজায় থাকলে পুরো মাসে আড়াই বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসার কথা ছিল।
চলতি জুলাই মাসের ২৭ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫৬ কোটি ৭৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এর মধ্যে প্রথম ১৩ দিনে আসে ৯৭ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং ১৪ থেকে ২০ জুলাই ৭ দিনে আসে ৪৫ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আর পরের সপ্তাহ অর্থাৎ ২১ থেকে ২৭ জুলাই তা নেমে দাঁড়ায় ১৩ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ডলারে।