ঢাকায় ২০৭ মামলা, গ্রেপ্তার আড়াই হাজার
প্রকাশ | ২৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে হামলার ঘটনায় ঢাকা মহানগর বিভিন্ন থানায় দুইশরও বেশি মামলা হয়েছে। শনিবার বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ এক বার্তায় জানিয়েছে, ২০৭টি মামলায় এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৫৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে কোন কোন থানায় মামলা হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই বার্তায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে। এরই মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেককেই রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জুনের শেষে হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করলে ছাত্ররা ফের মাঠে নামে। জুলাইয়ে তা সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছড়িয়ে যায়। ছাত্ররা প্রথমে পরিপত্র পুনর্বহাল অর্থাৎ কোটা বাতিলের দাবি সামনে আনলেও পরে কোটা সংশোধন করে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ করার দাবি জানাতে থাকে। এই দাবিতে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বাংলা বস্নকেড নামে অবরোধ কর্মসূচি আসতে থাকে। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের সংঘাতের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পরদিন ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মীসহ দুই জন, চট্টগ্রামে ছাত্রদল নেতাসহ তিনজন এবং রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রের মৃতু্য হয় সহিংসতায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ১৮ জুলাই সারাদেশে 'কমপিস্নট শাটডাউন' কর্মসূচি ঘোষণা হয়, সেদিন মাঠে নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও। রাজধানীর বাড্ডা, উত্তরা ও ধানমন্ডি এলাকায় গুলিতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃতু্যর খবর আসে। গোটা দেশে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে, এর মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে হামলা শুরু হয়। রামপুরায় বিটিভি ভবন, বনানীতে সেতু ভবন, মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিদু্যৎকেন্দ্রের সাবস্টেশন, মেট্রোরেলের দুটি স্টেশনেও ভাঙচুর হয়। সেদিন থেকেই ঢাকার উত্তরার পথে পথে, ধানমন্ডির শংকর ও সোবহানবাগ এলাকা, মোহাম্মদপুর ও বসিলা, মিরপুর এলাকায় গোলাগুলির খবর আসে। ঢাকার বাইরে নরসিংদী কারাগারে হামলা করে ফটক ভেঙে ৮৫টি অস্ত্র লুট করা হয়। সন্দেহভাজন ৯ জঙ্গিসহ পালিয়ে যান আট শতাধিক বন্দি। এসব অস্ত্রের মধ্যে ২০টি পরে উদ্ধার হয়, গুলি উদ্ধার হয়েছে এক হাজারের কিছু বেশি। রামপুরা, বাড্ডা ও যাত্রাবাড়ী, কদমতলী এলাকা পাঁচ দিন ধরে ছিল অচলপ্রায়। পুলিশ, বিজিবির সঙ্গে সংঘাতে ব্যাপকভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের তথ্য আসে। ১৯ জুলাই রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারি হয়। নামানো হয় সেনাবাহিনী। এর মধ্যেও ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, মোহাম্মদপুরে সংঘাত চলতে থাকে। সব মিলিয়ে দুই শতাধিক মানুষের মৃতু্যর তথ্য এসেছে গণমাধ্যমে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু-কিশোরও রয়েছে। কারফিউ জারির তিন দিন পর নিয়ন্ত্রণে আসে যাত্রাবাড়ী ও রামপুরা-বাড্ডা এলাকা। তবে অফিস সীমিত পরিসরে খুললেও কারফিউ এখনো চলছে। চট্টগ্রামে ১১ দিনে গ্রেপ্তার ৮৪৭ এদিকে চট্টগ্রাম বু্যরো জানায়, কোটা আন্দোলন ঘিরে দায়ের হওয়া ৩০ মামলায় ১১ দিনে ৮৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরের ১৯ মামলায় ৪৭৬ জন এবং জেলার ১১ মামলায় ৩৭১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সিএমপি সূত্র জানায়, কোটা আন্দোলন ঘিরে চট্টগ্রাম নগরের বড়পোল মোড়ে নাশকতার অভিযোগে নতুন করে আকবর শাহ থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। এতে ৩৭ জনকে এজাহারনামীয় ও ৭০-৭৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। সিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, 'চট্টগ্রামে কোটা আন্দোলনে হত্যা, দাঙ্গা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও নাশকতার ঘটনায় ১৯টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭ জনসহ মোট ৪৭৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।' অন্যদিকে, চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, 'কোটা আন্দোলন ঘিরে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় ১১টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ জনসহ মোট ৩৭১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।' কোটা আন্দোলনের সংঘাতে চট্টগ্রামে সাতজনের মৃতু্য হয়েছে। এ ছাড়া দুষ্কৃতকারীদের দেওয়া আগুন এবং ভাঙচুরের ঘটনায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৪৫ লাখ ৮৭ হাজার টাকার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়ও ভাঙচুর করা হয়েছে। সেখানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মোট তিন লাখ টাকার। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। পাবনায় গ্রেপ্তার ৩৩ জন পাবনা প্রতিনিধি জানান, নাশকতা ও ভাঙচুরের মামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় বিএনপি ও জামায়াতের ৩৩ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পাবনা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্র জানায়, শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত জেলার ১১টি থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে পাবনা সদর থানায় ৯ জন, সুজানগর, আমিনপুর ও ঈশ্বরদীতে চারজন করে, আটঘরিয়ায় ও সাঁথিয়া থানায় দুইজন করে, চাটমোহরে তিনজন, বেড়ায় দুইজন এবং ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া ও আতাইকুলা থানায় একজন করে দুইজন। পাবনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে পাবনায় নাশকতা ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।